বামনায় বিজয় দিবসের নামে বিপুল পরিমান অর্থ উত্তোলন!

প্রথম পাতা » বরগুনা » বামনায় বিজয় দিবসের নামে বিপুল পরিমান অর্থ উত্তোলন!
বুধবার ● ১৬ ডিসেম্বর ২০২০


বামনায় বিজয় দিবসের নামে বিপুল পরিমান অর্থ উত্তোলন!

বামনা(বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বৈশ্বিক করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় জাতীয় পর্যায়ে প্রণীত কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বরগুনার বামনায় সীমিত আকারে পালিত হয়েছে ৪৯তম মহান বিজয় দিবস। তবে এবারের পরিস্থিতি বিবেচনায় অনুষ্টানসূচি সীমিত আকারে হলেও উপজেলাব্যাপী বিপুল পরিমান অর্থ উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
কুচকাওয়াচসহ অনেক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সীমিত আকারে বিজয় দিবস উদযাপনের খরচ মেটানো নামে উপজেলা প্রশাসন সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা, বিভিন্ন সমিতি, ক্ষুদ্রব্যবসা, ইটের ভাটা, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ইজারাদার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ অর্থ উত্তোলন করেছে।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে সকল জেলা ও উপজেলায় ৪৯তম মহান বিজয় দিবস উদযাপন কর্মসূচি সীমিত আকারে পালন করার সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকারের সভাপতিত্বে বামনা উপজেলা প্রশাসন বিগত ৩ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে একটি সভা করেন। এ সভায় দিবসটি উদযাপনে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পৃথক পৃথক কমিটি গঠন করা হয় এবং স্বল্প পরিসরে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এসময় অনুষ্ঠানের ব্যায় নির্বাহের জন্য অর্থ-উপ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির প্রধান করা হয় উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. শাকিল আহম্মেদকে। তিনি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য সমগ্র উপজেলা ব্যাপী সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যাংক-বীমা, বিভিন্ন সমিতি, ক্ষুদ্রব্যবসা, ইটের বাটা, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, ইজারাদার, চেয়ারম্যানবৃন্দসহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে টাকা উত্তোলন করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানাগেছে, অর্থ কমিটির সভায় নির্বাহী কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে কমিটির সদস্যরা দিবসটি পালনের ব্যায় মেটাতে ৩ লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেছে । আর এ সকল টাকা অর্থ কমিটির আহবায়ক পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা  শাকিল আহম্মেদ ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারীরা উত্তোলন করেছে। এবারে বিজয় দিবস উদযাপনের জন্য বামনা উপজেলার ৮টি ইটের বাটা থেকে ৮০ হাজার, বিভিন্ন এনজিও থেকে ২০ হাজার, সাবরেজিষ্ট্রি অফিস থেকে ১০ হাজার, দলিল লেখক সমিতি থেকে ৩হাজার, স্বর্ন শিল্পী সমিতি থেকে ৪হাজার, উপজেলার বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোট ২০হাজার, উপজেলার ১৮টি স্ব-মিল থেকে ১০হাজার, চার ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ৪০হাজার, উপজেলা বিভিন্ন হাট-বাজারের ইজারাদারদের কাছ থেকে ২৫হাজার, মাটি কাটার জন্য স্কেবেটর চালকদের কাছ থেকে ১০হাজার, বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও ধর্নাঢ্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে ৭০হাজার টাকাসহ আরো প্রায় লক্ষাধিক টাকা বিভিন্নজনের কাছ থেকে উত্তোলন করেছে বামনা উপজেলা প্রশাসন।
তবে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও বিজয় দিবস উদযাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের দাবী সরকারি সহায়তা কম থাকার তারা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে এই টাকা উত্তোলন করেছেন।
করোনা পরিস্থিতিতে সীমিত পরিসরে হলেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিতে এই টাকা খরচ করা হবে বলে প্রশাসনের অর্থ কমিটির আহবায়ক দাবী করেন। তবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের শুধু একটি করে রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে সংবর্ধিত করেন উপজেলা প্রশাসন।
মহান বিজয় দিবস উদযাপনের অর্থ উপ কমিটির আহবায়ক পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা  শাকিল আহম্মেদের  কাছে বাজেট ও উত্তোলনকৃত অর্থের পরিমান জানতে চাইলে তিনি কোন প্রকার তথ্য প্রদানে অস্বীকৃতি জানান। এছাড়াও  তিনি সাগরকন্যা প্রতিনিধির সাথে উত্তেজিত হয়ে মোবাইল বলেন, কতটাকা উত্তোলন করেছি আপনারা খুজে বেড় করুন।
তবে জানাগেছে, বামনা উপজেলার ২৫৭ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের উপজেলা সদরের খাবার হোটেলে মধ্যাহ্নভোজের আয়োজনের সকল ব্যায়ভার বহন করেন বামনা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার জয়নাল আবেদীন খান।
এব্যাপারে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, যেই এর আয়োজন করুক আপনার এসে মধ্যাহ্নভোজে অংশ গ্রহন করুন।
এদিকে বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী মন্দা অর্থনৈতিক অবস্থায় ভঙ্গুর হয়ে পরেছে বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারী  ব্যবসায়িরা। এমন পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রশাসন সহায়তা না করে উল্টো তাদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ায় এখন ক্ষুব্ধ তারা।
বামনা সদরের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ি মো. জামাল মিয়া বলেন, মহান বিজয় দিবস আমাদের গর্ব। এ দিবসে সহায়তা করতে পারলে মন প্রশান্তি পায়। তবুও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই দোকানে কোন বেচা বিক্রি নাই এখন একটি টাকা কোথাও দিলে চলতে কষ্ট হয়।
বামনা সদরের স্বর্ন ব্যাবসায়ী নির্মল চন্দ্র কর্মকার বলেন, আমরা প্রতিবছর সকল জাতীয় দিবসে উপজেলা প্রশাসনকে সহায়তা করি। এবারে সরকার সকল স্থানে সীমিত পরিসরে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান পালন করার নির্দেশ দেয়। এবারে মাঠে কোন কুচকাওয়াচ হয়নি। সেখানে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। তাদের পুরস্কারসহ বিভিন্ন খরচ ছিলো। এবারে তা করতে হয়নি। তবুও আমাদের কাছ থেকে প্রতি বছরের চেয়ে বেশী টাকা নেওয়া হয়েছে। এই টাকা উপজেলা প্রশাসন কোথায় খরচ করবে?
বামনা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিবেক সরকার বলেন, সীমিত আকারে বিজয় দিবস উদযাপনের ব্যায় মিটানোর জন্য আমরা একটি অর্থ উপ কমিটি করেছি। কমিটি কারো কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করেছে কিনা আমি এখনো জানিনা। অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।

এইচআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৯:২৬ ● ৪৪৩ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ