গলাচিপা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
গলাচিপার চরাঞ্চলে খাস জমি দখলকে কেন্দ্র করে ১২টি মামলা পাল্টা মামলায় সরকারি ও সাধারণ কৃষকসহ চারশতাধিক আসামী করা হয়েছে। এ ঘটনা শুধুমাত্র একটি চরেই। প্রকৃত পক্ষে গলাচিপার বিভিন্ন চলাঞ্চলে এ মামলা ও আসামীর সংখ্যা অন্তত পাঁচগুন হবে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। বিভিন্ন এলাকার ভূক্তভোগী ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানাগেছে।
গলাচিপার চরবিশ্বাসের চরওহাবের ভূমিহীন কৃষক আবুল কাসেম ফকির (৬৫) জানান, ধান কাটা মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উপজেলার চরাঞ্চল অশান্ত হয়ে উঠেছে। এতে ভূমিহীন চাষীদের মাঝে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতি বছর শুধু ধানই নয় অন্যান্য ফসলের মৌসুম গলাচিপা উপজেলার চরবাংলা, চরকাজল, চর বিশ্বাস, গোলখালী, আমখোলা, দড়ি বাহেরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় জোদদারদের লাঠিয়াল বাহিনীর মহড়ায় শান্ত চরাঞ্চল অশান্ত হয়ে উঠছে।
এ বছর চরকাজলের চরশিবা গ্রামে লাঠিয়াল জোদদারদের প্রভাবে ভিটে ছাড়ার উপক্রম হয়েছে ফারুকখানসহ দুই পরিবারের। জমির কাগজ পত্র সঠিক থাকলেও প্রতিনিয়ত হামলা-হুমকিতে আতঙ্কে রয়েছেন তারা। গত আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে কালাম মাঝি ও নাজিমের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে ভাংচুর চালায়। হুমকি দেয় জমি ছেড়ে দেওয়ার জন্য। এঘটনায় মামলায় পুলিশ ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোর্টে চার্জশিটও জমা দিয়েছে। কিন্তু এর পরেও আতঙ্ক কাটেনি ফারুক খানে। খাস জমি নিয়ে বিরোধ সম্পর্কে গলাচিপা-চরফ্যাশন উপজেলার সীমানা বিরোধীয় চরওহাবের জমি উদ্ধার বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মো. মিজানুর রহমান জানান, গলাচিপার চরবিশ্বাসের চর ওহাবের জমি নিয়ে চারদশক ধরে বিরোধ চলে আসছে।
গলাচিপার কৃষকদের এসএ ও সিএস ম্যাপ ও যথাযথ কাগজপত্র থাকলেও তা মানতে চায়না ভূমি দস্যুরা। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে এ বছর ২১অক্টোবর কৃষকদের কাচা ধান জোর করে কেটে নিয়ে যাচ্ছিল চরফ্যাশনের জোদদার চক্র। লাঠিয়ালরা কাচা ধান কেটে নেওয়ার সময় বাধা দিলে কুপিয়ে কৃষক কাসেম মৃধাকে হত্যা করা হয় আহত করা হয় অন্তত ১৮ জন কৃষককে। এ ছাড়াও চরের ধান কাটা নিয়ে ১৯৯৬ সালে গলাচিপা উপজেলার (বর্তমান রাঙ্গাবালী উপজেলা) চরলতায় সংঘটিত হয়েছিল পটুয়াখালী জেলার সর্বকালের নৃশংসতম ঘটনা। ওই সময় ব্যাপক রক্তপাত, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, অগ্নিসংযোগ, খুন, গুম, ধর্ষণ, অপহরণ ও লুটপাটসহ লাঠিয়ালরা নারকীয় তা-বলীলা চালায়। ভূমিহীনদের ৫শ’ ৩১টি ঘরে অগ্নি সংযোগ কর সম্পূর্ণ ভষ্মিভূত করে দেয়। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মরায়ায় কৃষক নারায়ন চন্দ্র। আহত হয় কয়েশ’ ভূমিহীন নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর। চরের খাস জমির মালিকানা প্রশ্নে দাবিদারের সংখ্যা অনেক। কেউ দাখিলার সূত্রে, কেউ ভূয়া কাগজপত্রের সূত্রে আবার কেউ দখলী সূত্রে। তবে চরাঞ্চলে জমির মালিকানা হিসবে ‘জোর যার মূল্লুক তার’ সংখ্যাই বেশি। তিনি আরো জানান, গত ২০১৯ সালে চরফ্যাশন এলাকার জনৈক আলী ্্আহম্ম্দ পটুয়াখালী ও ভোলা জেলা প্রশাসক, পটুয়াখালী ও ভোলা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার, গলাচিপা ও চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, গলাচিপা ও চরফ্যাশন সহকারী কমিশনার (ভূমি) , গলাচিপা অফিসার ইনচার্জ গলাচিপা, ভূমি অফিসের সার্ভোয়ার, চরবিশ্বাস ইউপি চেয়ারম্যানসহ মোট ১২জনকে আসামী মামলা দায়ের করেন। ্্্্এ মামলা ভোলার চরফ্যাশনের যুগ্ম জেলা জজ আদালতে চলমান। এ ছাড়াও শুধুমাত্র চরওহাবে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ১২ মামলা চলমান। এতে কমপক্ষে ২০০ শতাধিক আসামী রয়েছে।
এ বিষয় গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চরের জমির মালিকানা বিরোধ আমরা আইনীভাবে দেখবো। এ বিষয় সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে।
এসডি/এমআর