ঝালকাঠি সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ঝালকাঠির রাজাপুরে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে ভূয়া দলিল করে ১৩শতাংশ জমিসহ বসতঘর দখলে নেয়ার মামলায় জালিয়াত চক্রের মূল হোতা হুময়ুন কবির সবুজ ওরফে সৈয়দ সবুজসহ ৪জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।
সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে তিন বছর পূর্বে জালিয়াতি করে রেজিষ্ট্রি ও বসত বাড়ি দখলের অভিযোগে এদের ৫জনকে আসমী করে ঝালকাঠি জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে মামলা (সিআর নং ৪৮/২০২০) করেন উপজেলার কেওতা গ্রামের মো: মাহবুবুর রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম জুয়েল। কারাগারে পাঠানো ব্যক্তিরা হলেন উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের মৃত মাহাবুবুর রহমানের ছেলে দলিল জালিয়াত চক্রের মূল হোতা দলিলের স্বাক্ষী ও দলিল লেখকের সহাকরি মাদক ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির সবুজ ওরফে সৈয়দ সবুজ, রাজাপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো: কাওসার হোসেন মোল্লা, দাতা উপজেলার কানুনিয়া গ্রামের জয়নাল খান, গ্রহিতা কেওতা গ্রামের মো: রফিকুল ইসলাম ফকির। অপর আসামী উপজেলার বাঘরী গ্রামের মৃত মোঃ আকব্বর আলীর ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান পলাতক রয়েছেন।
মামলার বাদি সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, ২০০৫ সালে তার বাবা মো: মাহবুবুর রহমান তার ভাই, বোন ও মায়ের কাছ থেকে ৬২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। উপজেলার সাব রেজিষ্ট্রি অফিস চত্বরের দলিল লেখক কাওসার হোসেন মোল্লা ওরফে কাওসার হোসেন মল্লিকের সহকারী দলিল জালিয়াত চক্রের মূল হোতা হুময়ুন কবির সবুজসহ এ চক্রটি জয়নাল খানকে ভুয়া দাতা হিসাবে সাজিয়ে রফিকুল ইসলামকে ওই জমি থেকে ১৩ শতাংশ জমির দলিল বের করে দেয় ২০১৭ সালে। দলিল জালিয়াত চক্রের মূল হোতা হুময়ুন কবির সবুজ ও মোস্তাফিজুর রহমান ওই জাল দলিলে সাক্ষী হিসাবে স্বাক্ষর দেয়। জালিয়াতি মামলা পেনাল কোর্ড-৪৬৫/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারায় রাজাপুর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে রেজিষ্ট্রি হওয়া ২৪৯২ নং দলিলে উপজেলার কেওতা মৌজার এসএ ১৩৪, বিএস ১১৪৭ খতিয়ানের ৪২৮ দাগের ১৩ শতাংশ সম্পত্তি জাল দলিলের মাধ্যমে বসতবাড়ী দখলের সিআর ৪৮/২০২০ নং মামলায় তদন্ত কারী কর্মকর্তা সিআইডি পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক মং চেনলা ৯নভেম্বর প্রতিবেদন দাখিল করলে ৩০নভেম্বর বিজ্ঞ আদালত শুনানি শেষে চারজনকে কারাগারে নির্দেশ দেন।
দাখিলকৃত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন জাল জালিয়াতি, ভুয়া, বানোয়াট, রেকর্ড সৃষ্টি করিয়া সাব-রেজিষ্টার রাজাপুর এর নিকট ভুল তথ্য উপস্থাপন করিয়া প্রতারণার মাধ্যমে আসামীরা দলিল সৃষ্টি করিয়াছেন। অপরদিকে জাল জালিয়াতি, ভুয়া, বানোয়াট, রেকর্ড সৃষ্টি করিয়া রেজিষ্ট্রি করা দলিল হালাল করিবার জন্য গ্রহিতা রফিক ইতিপূর্বে বিজ্ঞ ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল, ঝালকাঠি মামলা দাখিল (নং ৪০৫/২০১৭) করলে তৎকালীন বিজ্ঞ বিচারক মোঃ সিহাবুল ইসলাম মামলার সামগ্রীক সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পর্যালোচনা করে মামলাটি খারিজ করেন। মামলার বাদী জুয়েল তার নিজ বসতবাড়িতে ২০১৪ সালে বৃদ্ধা দাদীকে দেখাশোনা করার জাল দলিলের গ্রহিতা ও বসতবাড়ী দখলদার আসামী রফিকুল ইসলামের মা কহিনুর বেগমকে ওই বাড়িতে আশ্রয় দেয়। এর পরে আসামী রফিক ঐ সম্পত্বির অপর এক ওয়ারিশের নিকট থেকে ক্রয় করা ৫ শতাংশ জমিতে পরিবারসহ বসবাস করতে শুরু করে। মামলার বাদী জুয়েল পরিবারসহ ব্যবসায়ীক কারনে বরিশালে বসবাস করার সুয়োগ নিয়ে আসামী রফিক জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জুয়েলের দাদীরবসত বাড়ির ১৩ শতাংশ জমি রেজিষ্ট্রি করে ২০১৪ সালে দাদীর বসতঘর দখল করে নেয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ দলিল লেখক সমিতির যুগ্ম সচিব রাজাপুরে সাব রেজিষ্ট্রী অফিসের সিনিয়র দলিল লেখক আলহাজ্ব মোঃ জাকির হোসেন মিনু জানান, দলিল লেখক কাওসার হোসেন মোল্লা ওরফে কাওসার হোসেন মল্লিকের সহকারী ঝাড়–দার হুমায়ুন কবির সবুজ দলিল জালিয়াতসহ বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত রয়েছে। এর কঠিন বিচার হওয়া উচিত। এদের জন্য পেশাদার দলিল লেখকসহ সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের সুনাম ক্ষুন্ন হয়।
আরআর/এমআর