কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
“লেখা পড়া করে যারা গাড়ি ঘোড়ায় চড়ে তারা”- এমন প্রচলিত প্রবাদ বাক্যটি মিথ্যা মনে হবে কুয়াকাটা পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামায় শিক্ষা, সম্পদ ও আয়ের তালিকা দেখলে। অঢেল সম্পদ ও গাড়ি ঘোড়া রয়েছে অশিক্ষিত প্রার্থীদের। ওরা কেউ হবেন মেয়র, কেইবা আবার সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। নির্বাচিত হয়ে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে হালও ধরতে চান তারা। ওইসব ভবিষ্যত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে অনেকেই স্বশিক্ষিত, কয়েকজন রয়েছে এসএসসি পাশ, আবার শিক্ষার ঘর খালি রেখেছে একাধিক প্রার্থী।
মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী ৪জন প্রার্থীর মধ্যে ১জন এসএসসি পাশ। দুই প্রার্থী প্রাথমিকের গন্ডি পার না করতে পারলেও জমা দিয়েছেন নবম ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়–য়া কাগজ। অপরজন স্বশিক্ষিতও স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। কুয়াকাটা পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও আওয়ামীলীগের সভাপতি আ: বারেক মোল্লা জমা দিয়েছেন নবম শ্রেণীতে পড়াশুনার কাগজ। প্রাথমিকে পড়াশুনা করা সাবেক জাপা নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার হাওলাদার হলফনামায় লিখেছেন অষ্টম শ্রেণী পাশ। মুলত: ওই দুই প্রার্থীর সাথেই ভোটযুদ্ধে হবে তুমুল প্রতিযোগিতা। ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাশ পৌর বিএনপির আহবায়ক আজিজ মুসুল্লী মেয়র পদে প্রার্থীতা দিয়ে বসে আছেন এবং অপর প্রার্থী স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন স্বশিক্ষিত ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পাখা প্রতীকের প্রার্থী হাজী নুরুল ইসলাম হাওলাদাররা দলের উচ্চমহলের নির্দেশে নির্বাচনে রয়েছেন।
ষাটোর্ধ আ: বারেক মোল্লা পৌর আওয়ামীলীগ সভাপতি শিক্ষা জীবনে মাধ্যমিকের গন্ডি পার করতে পারেন নি। কুয়াকাটা পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে ২০১৫ সালে তিনি মেয়র হন। শুধু বারেক মোল্লা নয়, তার মতো পৌরসভার মেয়র প্রার্থী সাবেক জাপা নেতা আনোয়ার হাওলাদার, ইসলামী আন্দোলনের নুরুল ইসলামসহ একাধিক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন যারা নাম লিখতে কলম ভাঙ্গে। ভবিষ্যতে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রতিবন্ধকতার মূল কারণ যাতে না হয়, সেজন্য অনেকেই শিক্ষিত হবার জন্য উম্মুক্তের প্রোগ্রামে ভর্তিও হয়েছেন। কুয়াকাটা পৌরসভায় মেয়র পদে ৩জন দলীয় প্রতীক এবং ১জন স্বতস্ত্র প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৮জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৩ জন প্রার্থী মাঠে থাকলেও নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই অধিকাংশ প্রার্থীর। যারা শিক্ষিত রয়েছেন তারা আবার যুক্ত নেই সক্রিয় রাজনীতিতে। এ সুযোগে শিক্ষিত প্রার্থী ভোটার বদল করে মাঠে ছিল সংক্রিয় থাকলে এখন আর নেই। নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের আর্শীবাদ বা নৌকার টিকিট না পেয়ে সটকে পড়েছেন। এমন অশিক্ষিত ও স্বশিক্ষিত প্রার্থীর ছড়াছড়িতে পর্যটন কেন্দ্র উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এমন ক্ষোভও রয়েছে কুয়াকাটায় বিনিয়োগকারী ও ট্যুরিজম ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলোর। অসন্তোষ রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও বিএনপি’র মধ্যে। রাজনৈতিক দলগুলো শিক্ষিত নতুন নেতৃত্ব তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে এমন মন্তব্য রাজনৈতিক সমালোচকদের। ফলে স্বাক্ষর জ্ঞানবিহীন বা নুন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ছাড়াই মেয়র ও কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। ওইসব প্রার্থীরা বিগত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে পর্যটন কেন্দ্রকে অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও জলাবদ্ধতার শহর ও বিগত ৫ বছরে নেতিবাচক উন্নয়ন করেছে তা এখন দৃশ্যমান এমন মন্তব্য কুয়াকাটা পৌরসভার নতুন ভোটার ও তরুন প্রজন্মের। তারা চায় পর্যটন কেন্দ্রের যুগপোযোগী উন্নয়ন ও পর্যটকবান্ধব সুশিক্ষিত দক্ষ জনপ্রতিনিধি। প্রার্থীদের নির্বাচনে ইশতেহারে থাকা চাই তারুণ্যের চাহিদা -এমন শিরোনামে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএম কলেজের অর্থণীতি বিভাগের ছাত্র এম সাইফুল্লাহ সাইফ। সাইফ পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কুয়াকাটা তরুণ ক্লাব’র তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।
প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া তথ্য থেকে জানাগেছে, আওয়ামীলীগের মেয়র প্রার্থী কুয়াকাটা পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আঃ বারেক মোল্লা ৯ম শ্রেণি পাশ। সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা আনোয়ার হোসেন ৮শ্রেণীতে পড়াশুনা, বিএনপি প্রার্থী কুয়াকাটা পৌর বিএনপির আহবায়ক এসএসসি পাশ। ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী নুরুল ইসলাম স্বশিক্ষিত।
এদিকে সাধারন ৩৩জন ও সংরক্ষিত ৮জন জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে হাতে গোনা কয়েক জন মাধ্যমিক পাশ ছাড়া সবাই স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। অনেকেই প্রাথমিকের গন্ডি পার করতে পারেনি। এমনকি অসংখ্য প্রার্থী স্কুলেও যেতে পারেননি। স্বাক্ষর জ্ঞানহীন প্রার্থীও রয়েছেন একাধিক। যাতে করে টিপসই না দেয়া লাগে এজন্য তড়িঘড়ি করে তারা শিখে ফেলেছে নাম দস্তখত দেবার কৌশলটি।
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের এসএসসি পাশ কাউন্সিলর প্রার্থী মো: আক্কাস বলেন, পরিকল্পিত পৌরশহর গড়তে শিক্ষিত নেতৃত্বের বিকল্প নেই।
স¦শিক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও পৌর শ্রমীক লীগের সভাপতি মোঃ আব্বাস কাজী জানিয়েছেন, জনপ্রতিনিধিদের তেমন শিক্ষিত হবার প্রয়োজন নেই।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুর রশীদ বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় দেয়া তথ্য হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এসব তথ্যগুলো বিবেচনার জন্য নির্বাচন অফিসে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কুয়াকাটা ইনভেস্টর ফোরামের মুখমাত্র হাসনুল ইকবাল সাগরকন্যাকে বলেন, কুয়াকাটার জনপ্রতিনিধিরা উচ্চ শিক্ষিত হলে পর্যটন শিল্পের ইতিবাচক প্রভাব পড়ত। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, যারা জনপ্রতিনিধি হতে চান বা যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে তাদের অনেকেরই শিক্ষার দৌড় সামান্য। এ প্রবণতায় পৌর পরিষদ নিয়ে পর্যটন শিল্পের কতটুকু উন্নয়ন সম্ভব হবে এমন পাল্টা প্রশ্ন করেছেন পৌর নির্বাচন বিশ্লেষক হাসনুল ইকবাল।
কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন’র সাধারণ সম্পাদক ও কুয়াকাটা গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোতালেব শরীফ জানায়, শিক্ষিত প্রার্থীর চেয়ে স্বশিক্ষিত দলীয় প্রার্থীদের ভোটের মাঠে বেশী শক্তিশালী। তবে প্রভাব প্রতিপত্তিতে সবল হলেও তারা বিগত দিনেও পর্যটন শিল্পের দৃশ্যমান উন্নয়ন করতে পারেন নি বলে তিনি দাবী করেছেন। ঘুরো ফিরে শিক্ষা দীক্ষায় দূর্বল ওইসব প্রার্থীরাই জনপ্রতিনিধি হিসেবে থাকছেন। যারফলে কাঙ্খিত সফলতা পাচ্ছে না পৌরবাসীসহ পর্যটকরা।
কেএআর/এমআর