কলাপাড়া (পটুয়াখালী) অফিস॥
করোনাকালের বড় ধরনের ধকল সামলে যুব উদ্যোক্তা রিয়াজ তালুকদার ফের সচল করেছেন মুরগির ফার্মটি। করোনার প্রকোপ যদিও থামেনি। রয়েছে দ্বিতীয় দফা সংক্রমনের সরকারি সতর্কবার্তা। কিন্তু জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে ঝুঁকি নিয়েই মুরগির ফার্মটি সচল করেছেন এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। প্রতিদিন আবার প্রায় তিন হাজার ডিম বিক্রি করছেন। যেন করোনাকালের সঙ্গেই গ্রামীণ অর্থনীতির যোগানের পাশাপাশি নিজের উপার্জনের চাকা সচল রেখেছেন। করোনাকালের নতুন অভিজ্ঞতা নিয়ে রিয়াজ তালুকদার তার ফার্মটি চালু রেখেছেন। ফার্মটি চালু রাখতে আগের চেয়ে ব্যয়ের খাতটি বাড়লেও হতাশা ক্রমশ কেটে যাচ্ছে তার। লাভের মুখও দেখছেন। ফের গতি ফিরেছে আর্থিক যোগানে। যেন করোনার ভয়কে জয় করেই এগুচ্ছেন রিয়াজ। তবে স্বল্পসুদে পাওয়া ব্যাংকের বিশেষ লোনটি এ সময় মুরগি ও গবাদিপশুর ফার্ম এবং মাছের ঘের সচল রাখতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে বলে তার অভিব্যক্তি।
প্রায় দুই বছর আগে কলাপাড়ার চাকামইয়ার নিশাবাড়িয়া গ্রামের নিজ বাড়িতে মুরগির ফার্মটি করেন রিয়াজ তালুকদার। প্রথমে সাত লাখ টাকার পুঁজিতে ঘর করেন। পাকা ফ্লোরে ১৪ হাজার সোনালি মুরগির বাচ্চা দিয়ে শুরু করেন। দুই জন কর্মচারী রেখে ফার্মটির চাকা ঘোরাচ্ছিলেন। শেষবারে মুরগি যখন অনেকটা বড় হয়ে ওঠে তখনই মার্চ মাসে করোনার প্রকোপ শুরু হয়। হঠাৎ করে করোনার সংক্রমন মানুষকে যতোটা সংক্রমিত করেছে তার চেয়ে বেশি শঙ্কাগ্রস্ত করে তোলে। আতঙ্কে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়ে। যার ভয়াবহ নেতিবাচক প্রভাব পড়ে তাঁদের মতো ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের ওপর। উপায় না পানির দামে, এক ধরনের জোর করে পাইকারদের চাপিয়ে দেন সকল মুরগি। কখনও নগদে, আবার কখনও বাকিতে। মুরগির ভরা ফার্মটি খালি করে দেন। অন্তত ছয় লাখ টাকার লোকসান গুনতে হয় এই যুব উদ্যোক্তার। কিন্তু মনোবল হারায়নি মানুষটি। জানালেন রিয়াজ, ১৬টি গরু নিয়ে করা ফার্মের উৎপাদিত দুধও পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে। ১৬ একর জমির ওপর করা তেলাপিয়া ও পাঙ্গাশ মাছের ঘের নিয়েও পড়েছিলেন অনিশ্চয়তা। অর্ধেক মাছ পানির দামে বিক্রি করতে হয়েছে। ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার সিসি লোন নিয়ে করা তিনটি ক্ষুদ্র প্রকল্পে পুঁজি খাটছে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এনিয়ে করোনার শঙ্কায় পথে বসার আশঙ্কায় পড়েন। কিন্তু মনোবল না হারিয়ে করোনাকালে সরকারের দেয়া ঘোষণা শুনে আবার ব্যাংকে যোগাযোগ করেন। রিয়াজ স্বল্পসুদে লোন নিয়ে করোনার মধ্যে মুরগির ফার্মটি আরও ব্যাপকভাবে শুরু করেন। ১৬ লাখ টাকা ব্যয় করে লেয়ার জাতের ৩২০০ মুরগির বাচ্চা কিনে খাচা করে নতুন উদ্যমে শুরু করেন। এখন মুরগিগুলো সব বড় হয়ে ওঠেছে। দৈনিক ২৯০০ ডিম কালেকশন করেন রিয়াজ। মুরগির ফার্মের জন্য দুইজন সার্বক্ষণিক কর্মী রয়েছে। মুরগির খাবার, কর্মচারী, পরিবহন ব্যয়, বিদ্যুত বিল নিয়ে মুরগির ফার্মে দৈনিক খরচ রয়েছে ১৫-১৬ হাজার টাকা। আর ডিম বিক্রি থেকে দৈনিক কালেকশন গড়ে ২০ হাজার টাকা। লাভে রয়েছে প্রায় চার/পাঁচ হাজার টাকা। করোনাকালেও রিয়াজ তালুকদার ঝুঁকি নিয়ে তার মুরগির ফার্মটি সচল করে এখন স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটাচ্ছেন। নিজেও আর্থিক স্বচ্ছলতার চাকা সচল রেখেছেন। এই যুব উদ্যোক্তা রিয়াজ তালুকদার এখন করোনাকালেও দৃঢ় প্রত্যয়ী রয়েছেন তার ফার্ম তিনটি সচল রেখে। অন্যের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। তবে তিনি জানান, করোনার ভীতি মনে না রেখে সচেতনভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবকিছু করা যায়। মনের জোর থাকার প্রয়োজন সকলের আগে। কলাপাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, কলাপাড়ায় মুরগির খামার রয়েছে ১৬০টি, যার মধ্যে করোনার প্রভাবে ১২টি বন্ধ হয়ে গেছে। হাঁসের খামার রয়েছে ২২০টি, করোনায় বন্ধ হয়েছে ১০টি। গাভীর খামার ১২টি করোনায় বন্ধ হলেও ৩৯১টি সচল হয়েছে। ছাগলের খামার ৭টি বন্ধ হয়ে গেছে। সচল রয়েছে ১১৭টি। ভেড়ার খামার ৫০টির তিনটি বন্ধ হয়ে গেছে। এ কর্মকর্তা জানান, করোনার প্রভাবে বন্ধ হওয়া খামারিদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সরকারিভাবে।
এমইউএম/এমআর