আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী পৌরসভার বঙ্গবন্ধু সড়কের নিখোঁজ বাবা মানসুর কবির ও মা মানষিক ভারসাম্যহীন মরিয়মের একমাত্র এতিম কন্যা ফাতেমাতুজ জোহরা মীমের সম্পতি দখলের পায়তারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতিম মীমের প্রবাসী মামা আমিনুল ইসলাম খোকন ও আবদুস সাকুর এ সম্পত্তির দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেন অভিযোগ করেন মীম। এতিম মীমকে ঘর থেকে তাড়ানোর জন্য প্রতিনিয়ত মামাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী এসে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এবং হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে। শুক্রবার বেলা ১১টার সময় ওই সম্পত্তি দখলের চেষ্টা চালায় খোকন ও সাকুরের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী। কিন্তু পুলিশের হস্তক্ষেপে জমি দখলে ব্যর্থ হয় সন্ত্রাসীরা।
জানাগেছে, ২০০০ সালে ফাতোমাতুজ জোহরা মীমকে ৩ বছরের শিশু রেখে বাবা মানসুর আহম্মেদ কবির নিখোঁজ হয়। গত ২০ বছরে তার কোন সন্ধ্যান মিলেনি। স্বামী নিখোঁজের শোকে মা মরিয়ম বেগম মানষিক ভারসাম্য হয়ে পড়ে। ওই সময় থেকে মীম নানা আলহাজ¦ ইউনুস মিয়ার কাছে লালিত-পালিত হয়। ২০০৮ সালে নানা আলহাজ¦ ইউনুস মিয়া নানতি মীমের নামে দলিল মুলে দোকান ঘরসহ পাঁচ শতাংশ জমি লিখে দেন। ওই জমিতে মীম স্বামী সাইফুর রহমান রাফিকে নিয়ে বসবাস করে আসছে। ২০১৭ সালে নানা মোঃ ইউনুস মিয়া মারা যান। নানার মৃত্যুর পরে নেমে আমে মীমের উপর অমানষিক নির্যাতন। প্রতিনিয়ত সম্পতি দখলের জন্য দুই মামা তাদের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হয়রানী করে আসছেন। মীমকে তুলে নেয়ার জন্য প্রতিদিন রাতে ঘরের চারিপাশে সন্ত্রাসীরা পাহারা দিচ্ছে। সন্ত্রাসীদের ভয়ে তারা ঘর থেকে বের হতে পারছে না। ঘর থেকে বের হলেই মামাদের পালিত সন্ত্রাসীরা মীমকে তুলে নিয়ে হত্যার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মীম। মীমকে হত্যা করতে পারলেই তার সকল সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারবে মামারা। শুক্রবার বেলা ১১ টার দিকে মীম ও তার স্বামী সাইফুর রহমান রাফি বাহিরে বের হয়। এমন মুহুর্তে মামা খোকন ও সাকুরের পালিত ৭-৮ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী এসে ঘর ও জমি দখলের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এদিকে মীমের মা মরিয়ম বেগমকে মামা আমিনুল ইসলাম খোকন ও আবদুস সাকুর পাগল আখ্যা দিয়ে গত ১২ বছর ধরে ঢাকা মনোরোগ ক্লিনিক ও পাবনা মানষিক হাসপাতালে জোরপূর্বক ভর্তি করে আটকে রেখেছে এমন অভিযোগ মীমের। বাবা হারা ও মায়ের ভালোবাসা বঞ্চিত মীম প্রতিনিয়ত মামাদের হয়রানীর শিকার হচ্ছে। সম্পতি থেকে মীমকে বঞ্চিত করার জন্য মা মরিয়ম বেগমকে আটকে রেখেছেন। মেয়ে মীমের সাথে যোগাযোগ করতে দিচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, আমিনুল ইসলাম খোকন ও সাকুরের লোকজন প্রায়ই জমি ও ঘর দখলের জন্য মীম ও তার স্বামীকে হয়রানী ও হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে।
ফাতেমাতুজ জোহরা মীম কান্না জনিত কন্ঠে বলেন, আমাকে তিন বছরের শিশু রেখে বাবা নিখোজ হয়। গত ২০ বছরে বাবার কোন সন্ধ্যান পাইনি। বাবার শোকে মা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। মামা খোকন ও সাকুর মাকে পাগল আখ্যা দিয়ে গত ১২ বছর ধরে বিভিন্ন হাসপাতালে আটকে রেখেছে। তিনি আরো বলেন, ২০০৮ সালে নানা আমাকে দোকান ঘরসহ ৫ শতাংশ জমি লিখে দিয়েছেন। ওই জমি ও ঘর দখলের জন্য মামারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমাকে হয়রানী করছে। আমি ঘর থেকে বের হতে পারি না। ঘর থেকে বের হলেই সন্ত্রাসীরা আমাকে তুলে নিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমাকে মেরে ফেলতে পারলেই মামারা আমার সমুদয় সম্পত্তি ভোগ দখল করতে পারবে। আমি এ ঘটনার সু-বিচার চাই।
প্রবাসী মামা আমিনুল ইসলাম খোকন ও আবদুস সাকুরের কেয়ারটেকার মোঃ আবদুল জব্বার মৃধা ঘর দখলের কথা অস্বীকার করে বলেন, সকালে কিছু লোকজন এসেছিল।
আমতলী থানার এএসআই মোঃ লিমন বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন লোকজন পাইনি।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, মীম জমি পাবে। মীমকে সার্বিকভাবে সহায়তায় করা হচ্ছে।
এমএইচকে/এমআর