কলাপড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
লোহার শিকলে বন্ধী মানসিক ভারসম্যহীন মায়ের জীবন। বাবাও রয়েছে নিরুদ্দেশ। বিধবা বৃদ্ধা নানীর হাত ধরে পথে পথে ঘুরে (ভিক্ষা) খেয়ে না খেয়ে চলে জীবন। শিক্ষা গ্রহনের আদম্য ইচ্ছা আর দুরন্ত শৈশব বাঁধাগ্রস্থ কঠিন এ বাস্তবতার বেড়াজালে। তবুও আলোকিত আগামীর আশা ছাড়েনি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার শিশু রুবিনা।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের হোসেনপুর গ্রামের রুবিনা। জন্মের এক বছর পর হারিয়ে যায় পিতা শাহজাহান। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে আর ফিরে আসেনি সে। একমাত্র উপার্যনক্ষম ব্যক্তির নিরুদ্দেশের খবরে দু:শ্চিন্তায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন মা আসমা আক্তার ডলি। জীবিকার অন্বেষনে বৃদ্ধা অসুস্থ নানি আছিয়া বেগমের হাত ধরে ঘুরে বেড়ায় গ্রামের পর গ্রাম। এ-বাড়ি ও-বাড়ি ঘুরে যদি কিছু মেলে তাতেই জ্বলে উনুন। কোনদিন একবেলো কিংবা দু’বেলা খাবার জোটলেও উপোস করে কাটাতে হয় অনেক সময়।
একখন্ড জমি না থাকায় আশ্রয় মিলেছে একই এলাকার শহিদ রাঢ়ীর বাড়ির উঠোনে। সেখানে তালপাতা আর ছেড়া পলিথিনের একটি খুপরি ঘরে রোদের উত্তাপ, শীতের তীব্রতা আর বৃস্টির স্পর্শ নিয়ে রুবিনার বসবাস। যেদিন কেরোসিন কিনতে পারে সেদিন রুবিনার এ ঘর হয় আলোকিত। অন্যথায় পাশের বাড়ীর বিদ্যুতের স্বল্প আলো-আধাঁরিতে কাটে অধিকাংশ রাত।
সমবয়সীরা খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকলেও দম ফেলার ফুসরৎ নেই রুবিনার। সকাল হলেই মায়ের হাত ধরে নানীকে নিয়ে ভিক্ষা করতে হয় গ্রামের পর গ্রাম। মায়ের পরিচর্যাসহ সকল গৃহস্থলী কাজ তাকেই সম্পন্ন করতে হয়। এরপর অবসর সময় কাটে মায়ের পাশে বসে একাকী লেখাপড়ায়। টুঙ্গিবাড়িয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেনীর শিক্ষার্থী রুবিনা স্বপ্ন দেখে লেখাপড়া শিখে একদিন বড় হবে। মায়ের চিকিৎসা করাবে। সুন্দর একটি বাড়ী হবে। পেট ভরে তিনবেলা খাবার খাবে। মা আর নানীকে নিয়ে সে ঘরে কাটাবে সুখের দিন।
রুবিনা সাগরকন্যাকে জানায়, যেদিন ভিক্ষা করতে যায় সেদিন স্কুলে যাওয়া হয়না। আবার যেদিন স্কুলে যায় সেদিন ভিক্ষা করা হয়না। মায়ের জন্য খুব দু:শ্চিন্তায় স্কুলের পাঠে ঠিকভাবে মন দেয়াও যায়না।
জমির মালিক শহীদ রাঢ়ী আশ্রয় ছেড়ে চলে যেতে বলায় মানসিক ভারসম্যহীন দুই বোন, মেয়ে আর শিশু রুবিনার ভবিষ্যৎ চিন্তায় উদভ্রান্ত হয়ে পড়েছেন রুবিনার নানি আছিয়া বেগম (৫৫)। তিনি জানান, এখন আর আগের মত হাটতে পারিনা। নানা রোগ শরীরে বাসা বাঁধেছে। প্রতিবেশী-এলাবাসীরা যা দেয় তাতেই পেট চলে। না পেলে উপোস।
আসহায় রুবিনার পুনর্বাসন, ভরন-পোষনসহ বাঁধাহীন শিক্ষার্যনের নিশ্চয়তার দাবী জানিয়ে প্রতিবেশী হাসান পারভেজ সাগরকন্যাকে বলেন, রুবিনা হল পল্লীকবি জসিম উদ্দিনের আসমানীর নতুন সংস্করণ। এদের মত অসহায় পরিবার নীলগঞ্জ ইউনিয়নে নাই।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, ইতোমধ্যে রুবিনার বাড়ীতে চাল পাঠানো হয়েছে। খুব দ্রুত ওর জন্য স্থায়ী পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সহায়তার মাধ্যমে রবিনার নিরবিচ্ছন্ন শিক্ষার উদ্যোগ গ্রহন করা হচ্ছে।
জেআর/এমআর