বিএনপি ও জামায়াতের চিন্তা-চেতনা একই: ওবায়দুল কাদের

প্রথম পাতা » রাজনীতি » বিএনপি ও জামায়াতের চিন্তা-চেতনা একই: ওবায়দুল কাদের
মঙ্গলবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি জামায়াতকে কিংবা জামায়াত বিএনপিকে ছাড়বে না। বিএনপির ও জামায়াতের চিন্তা-চেতনা অনেকটা একই।
মঙ্গলবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নসহ সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা আমার কাছে মনে হয় না যে বিএনপি জামায়াতকে অথবা জামায়াত বিএনপিকে ছাড়বে। এটা হলেও কৌশলগত হতে পারে। তাদের চিন্তাভাবনা, তারা যেই চেতনা ধারণ করে সে ক্ষেত্রে তারা অনেক কাছাকাছি। দুটির চেতনা একই। কোনটা উদার, আবার কোনটা উগ্রপন্থী। তিনি বলেন, এটা তাদের চিন্তাভাবনা, যে আদর্শ ও চেতনা ধারণ করে সেখানে তারা খুব কাছাকাছি নয়? অনেক কাছাকাছি। আমি মনে করি, দুটোই সাম্প্রদায়িক দল।
বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কারা এলো আর কারা বয়কট করল, এটা নিয়ে আসলে খুব একটা দুশ্চিন্তা বা মাথাব্যথার কোনো কারণ নেই। স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনেকে দলীয় প্রতীকে না করলে স্বতন্ত্রভাবেও করতে পারে। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের কাছে যতটা খবর, তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অনেক জায়গায় ইলেকশন করবে। এর কোনো প্রভাব-প্রতিক্রিয়া আছে বলে মনে করি না। এলে ভালো, না এলেও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাব হবে না।
ডাকসু নির্বাচনে বিএনপির ছাত্রসংগঠন অংশ নিচ্ছে না-এ বিষয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, অংশ নেবে না, এটা তারা এখনো ঘোষণা দেয়নি। দেখা যাক, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার এখনো তো অনেক সময় বাকি আছে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর এ কথাটা বলা যাবে। আপাতত দাবি-দাওয়ার প্রশ্নে কিছুকিছু স্ট্যান্ড তো দলগতভাবে থাকতেই পারে। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এখনো যা বলবে, ছাত্রদল সেটাই মেনে নেবে। ছাত্রদল তারেক রহমান অনুগত শুরু থেকেই। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কথাই তারা শুনবে বলে আমি মনে করি। বিএনপি বলছে ডাকসু নির্বাচনও সরকার একতরফাভাবে করবে-এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ডাকসু নির্বাচনে একতরফা বা ইন্টারফেয়ারেন্সের সুযোগটা কোথায়? এখানে কি কেউ কেন্দ্র দখল করবে? এখানে কি সূক্ষ্ম কারচুপির কোনো সুযোগ আছে? কীভাবে হবে? ডাকসুর ইলেকশনে তো প্রকাশ্যে ভোটাভুটি হবে।
এদিকে, মহাসড়কে একের পর এক দুর্ঘটনাকে এখন ‘সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনার বিষয়’ হিসেবে দেখছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি নিজেই বলেছি সড়কে শৃঙ্খলা আসেনি। অবকাঠামোগত প্রকল্পে যত অগ্রগতি, সেই তুলনায় সড়ক ও পরিবহনে শৃঙ্খলাটা অতটা হয়নি, যার জন্য অ্যাক্সিডেন্ট বা যানজট রয়েছে। গত দশ বছরে সড়কের শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টায় যেখানে খুব বেশি সাফল্য আসেনি, সেখানে সরকার এবার কী করার কথা ভাবছে? মন্ত্রী জানাচ্ছেন, শিগগিরই সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভা ডাকা হবে। কমিটি সাজানো হবে নতুন করে। নতুনভাবে প্রোগ্রাম নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি। নিরাপত্তা কাউন্সিলের সভায় সড়ক বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করে দেব। তাদের কাছ থেকে অল্প দিনের ব্যবধানে প্রতিবেদন চাইব, পরে যদি টাস্কফোর্স করতে হয় তাও করব। ওবায়দুল কাদের বলেন, এটার (সড়ক দুর্ঘটনা) লাগাম টেনে ধরতে হবে, রাশ টেনে ধরতে হবে। জাতীয় স্বার্থে এবং জাতির দুর্ভাবনা অবসানের স্বার্থে। কারণ সড়ক দুর্ঘটনা এখন আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্ভাবনা, এটা অস্বীকার করে লাভ নেই। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালে সারাদেশে ৩ হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪ হাজার ৪৩৯ জনের প্রাণ গেছে, আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪২৫ জন। জানুয়ারির শেষে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে বড় বড় শহর ও হাইওয়েতে। ছোট ছোট অবৈধ যানবাহন যেমন, ভ্যান, রিকশা, নসিমন, অটোরিকশা এর জন্য দায়ী। আইন অমান্য করে ধীর গতির বাহন মহাসড়কে এখনও চলাচল করে যা দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘœ ঘটায়। অবৈধ যানবাহন চলাচলে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের প্রচ্ছন্ন সহযোগিতাও আছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ছোট যানবাহনের বিষয়ে ইলিয়াস কাঞ্চনের পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত। তিনি বলেন, বড় গাড়ির সঙ্গে সিএনজি বা ইজি বাইকের যদি সংঘাত হয়, আর ইজি বাইকে যদি ১০ জন থাকে, ১০ জনই মারা যায়। বড় বড় গাড়িতে সংঘাত হলে আহত হয়, এ রকম নিহত হয় না। ছোট ছোট যান নিয়ন্ত্রণ করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব। মন্ত্রী স্বীকার করেন, ইজিবাইক-নসিমন-করিমনের সঙ্গে ‘অনেকে’ জড়িত, এখানে ‘রাজনৈতিক বিষয়ও’ আছে। তবে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে আগে। এটা আমার এখানে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যেটা সম্ভব সেটা আমি কেন করব না? যেটা সম্ভব সেটা কেন করা যাবে না? করতে হবে। উন্নয়ন কাজের জন্য বিভিন্ন সড়ক ও মহাসড়কে যানজট হওয়ার কথা স্বীকার করে কাদের বলেন, কাজগুলো শেষ হলে একটা সময় যানজট পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৪:০৭:৫১ ● ৫২০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ