পিরোজপুরে চীনা নাগরিক হত্যার প্রধান দু’আসামী গ্রেফতার

প্রথম পাতা » পিরোজপুর » পিরোজপুরে চীনা নাগরিক হত্যার প্রধান দু’আসামী গ্রেফতার
মঙ্গলবার ● ২০ অক্টোবর ২০২০


পিরোজপুরে চীনা নাগরিক হত্যার প্রধান দু’আসামী গ্রেফতার

পিরোজপুর সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে পিরোজপুরে বেকুটিয়ার কঁচা নদীতে নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রি সেতুর কর্মরত চিনের নাগরিক লাও ফান ওরফে ফান ইয়াংজুন(৫৮) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মামলার প্রধান দুই আসামী হোসেন সেখ (১৯) এবং সাব্বির আহম্মেদ সেখকে(২০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা জানান, পুলিশের বরিশাল রেঞ্জের ডি আই জি মো. শফিকুল ইসলাম পিপি এম,বিপি এম। গ্রেপ্তার হোসেন সেখ পিরোজপুর সদরের মরিচাল এলাকার ছোরাপ শেখ  এবং সাব্বির শেখ একই এলাকার হায়দার আলী সেখের পুত্র।
ডি আই জি মো. শফিকুল ইসলাম জানান, ব্যাপক তদন্তের পর মাত্র ৬ দিনে মুল আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত সাব্বির সেখ নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রি সেতুর কর্মরত একজন স্থানীয় শ্রমিক। এবং হোসেন সেখ সাব্বিরের সুপারিশে বিগত মে মাসে ওখানে শ্রমিক হিসেবে কাজ নেয়। হোসেনের কাজ ভাল না হওয়ায় তাকে মাত্র ১৪ দিন পরে কাজ থেকে বাদ দেয় চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন । এ সময় হোসেন তার কাজের ব্যবহৃত হেলমেটটি নিয়ে যায়। পরবর্তী মাসে বেতন দেয়ার সময় ফান ইয়াংজুন হেলমেট বাবদ ৫ শত টাকা কেটে রাখে। এ ক্ষোভ থেকে এবং চীনা নাগরিক প্রধান টেকনিশিয়ান ফান ইয়াংজুন কখন কি ভাবে শ্রমিকদের বেতনের টাকা নিয়ে যায় তা পর্যবেক্ষন করতে থাকে। পরে সাব্বিরের সাথে যোগ সাজশে তারা দুজনে কোন এক সময় ফান ইয়াংজুন এর কাছ থেকে টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পুর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন (৫৮) শ্রমিকদের বেতন দিতে কয়েকটি ব্যাগে করে ২ লক্ষ ৫৩ হাজার ২৩০ টাকা নিয়ে বাইসাইকেলে করে বাসস্থান থেকে মুল সেতুর দিকে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে ওৎপেতে থাকা হোসেন সেখ টাকার ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেস্টা করলে লাও ফান বাধা দেয়। তখন হোসেন তাকে ছুড়িকাঘাত করে একটি টাকার ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত লাও ফান পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।
বাড়ি গিয়ে হোসেন কাদাঁ মাখা টাকা, ব্যাগ জামা-কাপড় ধুয়ে শুকিয়ে নেয়। এবং ফোনে সাব্বিরকে জানায় কাজ শেষ।
পরবর্তীতে ব্যাপক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে পুলিশ ১২ অক্টোবর কর্মরত শ্রমিক সাব্বিরকে সন্দেহ জনক আটক করে জিজ্ঞাসা বাদ করলে সে সকল ঘটনা পুলিশকে জানায়। পুলিশ ওইদিন রাতেই হোসেনকে তার বাড়ি থেকে আটক করে। এসময় তার কথিতমতে বাড়ির ভিতর খাটের নীচ থেকে ছিনতাইকৃত ১ লক্ষ ৮৯ হাজার টাকা ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত জিনিষপত্র উদ্ধার করে। এরপর তাদেরকে ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে হোসান ও সাব্বির সব দোষ স্বীকার করে রবিবার (১৯/১০/২০) তারিখ আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করে।
এ সময় পিরোজপুর পুলিশ সুপার হায়াতুল ইসলাম খান জানান, তদন্ত কালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি ব্যাগে ৬১ হাজার এবং আশপাশের বিভিন্ন যায়গা থেকে ৮শত টাকা উদ্ধার করে। মুল টাকা থেকে হিসাব অনুযায়ী ২ হাজার ৪৩০ টাকা পাওয়া যায়নি। তিনি জানান, ফান ইয়াংজুন এর অধীনে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করত। ফান ইয়াংজুন এর মরদেহ ময়না তদন্তের পর চীনা কতৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং ঢাকা মেডিকেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর কুমিরমারা এলাকায় অবস্থিত চায়না ব্যারাক থেকে কর্মচারীদের বেতনের টাকা নিয়ে চীনা নাগরিক ফান ইয়াংজুন সেতুর নির্মান কাজের দিকে যাওয়ার পথে ছিনতাইকারীরা টাকা ছিনতাই করার জন্যই তাকে ছুরিকাঘাত করে। পরে স্থানীয়রা ও নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী ব্রিজের কর্মকতারা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেলে অতি রক্তক্ষরনে সেখানেই তিনি মারা যায়।
এ ঘটনায় নির্মানাধীন ৮ম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর সিকিউরিটি ইনচার্জ কাও চিয়েন হুয়া বাদী হয়ে ওইরাতেই অজ্ঞাত আসামীদের নামে পিরোজপুর সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোল্লা আজাদ হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী শাহনেওয়াজ, সদর সার্কেল খায়রুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

আরএইচএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:৫৫:৩০ ● ২৯৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ