কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
রাত পোহালে শুরু হচ্ছে ভোট গ্রহণ। মঙ্গলবার পটুয়াখালীর জেলার একমাত্র ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে প্রশাসনের মধ্যেও রয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। একই সাথে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের মনে দেখা দিয়েছে উদ্বেগ-উৎকন্ঠা। বিশেষ করে মাত্র দু’দিন আগে আওয়ামী লীগ মনোনিত চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে অস্ত্রসহ গুলি উদ্ধারের ঘটনায় চলছে নানাধর্মী আলোচনা-পর্যালোচনা। নৌকা মার্কার প্রার্থী আঃ মালেক আকন্দের দাবি, এটি প্রতিপক্ষ চেয়ারম্যান প্রার্থীর গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাজী ফজলু গাজী ষড়যন্ত্রের কথা অস্বীকার করে প্রশাসনের কাছে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করছেন। তবে মেম্বার প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ছোটখাট দু’একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলেও দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী বা তাদের সমর্থকদের মধ্যে কোথাও কোন অসৌজন্যমূলক আচরণের খবর পাওয়া যায়নি। তার পরেও উভয় প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কার যেন শেষ নেই। এসব বিষয় মাথায় রেখেই পুলিশ প্রশাসনের সর্বোচ্চ সতর্কতা রয়েছে বলে মহিপুর থানার ওসি মনিরুজ্জামান জানিয়েছেন। একই সাথে জেলা প্রশান বলছেন, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নিরাপত্তার চাঁদরে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
১৮ বর্গ কি. মিটার জুড়ে জেলার মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদ। যেখানে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ হাজার ৭শ’৬৯ জন। যার অর্ধেকটাই নারী। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯টি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে ৯ জন প্রিজাইডিং অফিসার, ৪২জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারসহ রয়েছে ৮৪ জন পোলিং অফিসার। এছাড়া প্রতিটি ভোট কেন্দ্রের জন্য ৩জন ম্যাজিস্ট্রেট’র নেতৃত্বে বিজিবি, র্যাব, পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স, ১শ’৭১ জন আনসার সদস্যসহ একাধিক আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা আজ মঙ্গলবার নির্বাচনী মাঠে থাকছেন। এতসব প্রশাসনিক নিরাপত্তার বলয়ের পরও সাধারণ ভোটারা শংকিত। এসব শংকার কারণ হিসেবে তাদের দাবী, সরকার দলীয় নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর রয়েছে দলীয় ও বংশগত প্রভাব। অপরদিকে আনারস প্রতীকে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর জামাতা নৌকা মার্কা নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে দাপটের সাথে আওয়ামী লীগ করছেন। রয়েছে বিএনপির নেপথ্য সমর্থন ও অর্থনৈতিক প্রভাব। পুনর্গঠিত হওয়া মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদে ২০১৫ সালের ১২ এপ্রিল সর্বশেষ নির্বাচন হয়। এতে তৎকালীন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুস সালাম আকন বিজয়ী হন। ভৌগলিক কারণে সমুদ্র বেষ্টিত এ জনপদের গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৬ সালে নবগঠিত মহিপুর থানা প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক মৎস্যবন্দর মহিপুর-আলীপুর। এর সর্বদক্ষিণে অবস্থান কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের। অতি গুরুত্বপূর্ণ মহিপুর থানা সদর ইউনিয়নের অল্প ভোটের নির্বাচনে বেশি উত্তাপ বিধায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাসহ ব্যাপক প্রস্তুতি। এ ইউপি নির্বাচনকে ঘিরে দক্ষিণাঞ্চলের বড় দুই দলের জেলা উপজেলার নেতৃবৃন্দের ভবিষ্যৎ জয় পরাজয়ের হিসেব নিকাশ রয়েছে। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের পক্ষে ভোটের দিন নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বহিরাগত অনেকেই পর্যটক সেজে কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছেন এমনটাই দাবী করছেন দুই চেয়ারম্যান প্রার্থী ও তার সমর্থকরা। এ নির্বাচনকে ঘিরে সোমবার (১৯ অক্টোবর) সকাল সকাল ১০ টায় পটুয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার মইনুল হাসান মহিপুর কো-অপ্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে পুলিশ প্রশাসনসহ প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিমিয় সভা করেছেন। এদিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আঃ মালেক আকন্দ ও আনারস মার্কার স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন বিএনপির সহ সভাপতি হাজী ফজলু গাজী চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীতা দিয়ে প্রচার ও প্রচারণা শেষ করেছেন। রয়েছে এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপর প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। এরমধ্যে উভয় প্রার্র্থী নির্বাচনী আচরণবিধীভঙ্গসহ একাধিক অভিযোগ এনে দফায় দফায় সংবাদ সম্মেলনসহ নির্বাচন অফিস ও প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা। সর্বশেষ শুক্রবার রাত ১টায় বরিশাল র্যাব-৮ এর অভিযানে সরকার দলীয় নৌকা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দু’টি ওয়ান শুটারগান, দুই রাউন্ড কার্তুজ, একটি বিদেশী রিভলবার ও আট রাউন্ড গুলি এবং দু’টি চাপাতি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় র্যাব একটি মোটর সাইকেলসহ বহিরাগত ৪জনকে গ্রেফতার করেছে। র্যাব-৮, বরিশাল সিপিসি-১ এর ডিএডি মোঃ মোক্তার হোসেন বাদী হয়ে শনিবার সন্ধ্যায় মহিপুর থানায় অস্ত্র আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
এদিকে র্যাবের অস্ত্র উদ্ধার এবং গ্রেফতারের ঘটনাকে প্রতিপক্ষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজী ফজলু গাজীর ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে শনিবার (১৭ অক্টোবর) সকালে নৌকা মার্কার ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী আঃ মালেক আকন্দ সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এর আগে (১৬ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে কলাপাড়া প্রেসক্লাবে স্বতন্ত্র ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সরকার দলীয় প্রার্থী, সমর্থক, কর্মী ও জেলা উপজেলার নেতারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট কেন্দ্রে না যাবার জন্য হুমকি দিচ্ছে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু হয় কিনা- এমন শঙ্কার কথা ও জানিয়েছেন হাজী ফজলু গাজী।
অপরদিকে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার আব্দুর রশিদ মহিপুর ইউপি নির্বাচনে ৯টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপুর্ণ এমন আশংকার কথা উল্লেখ করে এবং প্রশাসনের অতিরিক্ত নিরাপত্তার দাবী করে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় পুলিশ প্রশাসন। পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মতিউল ইসলাম বলেন, মহিপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ জন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিটি স্ট্রাইকিং ফোর্সের সাথে ১জন করে ভ্রাম্যমাণ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা নির্বাচন অফিসার সার্বক্ষনিক নির্বাচনটি পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
এনইউবি/এমআর