জাহিদুল ইসলাম, সাগরকন্যা প্রতিবেদক॥
মহাসড়ক থেকে গ্রামীন মেঠোপথ। এমনকি শহরের অলিগলি। সর্বত্র দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছয় চাকার দৈত্যাকৃতির যন্ত্র দানব ট্রলি। লাইসেন্স বিহীন, রোড কিংবা রুট পারমিট না থাকলেও লাইসেন্সহীন অদক্ষ চালকের হাতে অবৈধ এ যানের অবাধ চলাচলে সবকিছু এখন হয়ে পড়ছে অনিরাপদ। ঝুঁকিতে পড়েছে সাধারন মানুষসহ বিদ্যালয়গামী শিশুরা। প্রতিনিয়তি নষ্ট হচ্ছে শহরসহ গ্রামীণ জনপদের রাস্তা। এ যানের ধাক্কায় ইতোপুর্বে একাধিক ব্যক্তির প্রাণহানি ঘটলেও প্রশাসনিক কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় দিনদিন বাড়ছে এদের অধিপাত্য। সড়কে বাড়ছে যানজট। বাড়ছে মানুষের ভোগান্তি। কোন উপায় না পেয়ে অবৈধ এই যান চলাচল বন্ধে মানববন্ধন পর্যন্ত করেছে অনেক এলাকার মানুষ। কিন্তু অবৈধ এ দৈত্যাকৃতির ছয় চাকার যান চলাচল বন্ধ হয়নি।
সংশ্লিস্টরা জানায়, সাশ্রয়ী মূল্য, সহজ ডাউনপেমেন্ট এবং কিস্তি, লাইসেন্স কিংবা রোড বা রুট পরমিটসহ চালকের লাইসেন্সের প্রয়োজনীয়তা না থাকায় দিন দিন পটুয়াখালীর সকল সড়কে বাড়ছে ট্রলি। এ যন্ত্রদানবের উৎপাদকারী দেশে গুলোতে কৃষিকাজে এ যানের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে ভৌত অবকাঠামোর নির্মান সামগ্রী পরিবহনে। কম খরচে মাত্রাতিরিক্ত পন্য বোঝাই করে দ্রুত গতিতে চলাচলের জন্য দিনদিন বাড়ছে এ যানের চাহিদাসহ জনপ্রিয়তা। তবে জেলার আটটি উপজেলায় কতগুলি ট্রলি চলাচল করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই সংশ্লিস্ট কারো কাছে। সাধারনের ধারনা এর সংখ্যা ২/৩ হাজার বা কমবেশি হতে পারে।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ৭০ থেকে ৮০ রক্ষ টাকা ব্যায়ে র্নিমিত হচ্ছে প্রতি কিলোমিটার সড়ক। কিন্তুর্নিমানের কয়েক দিনের মধ্যেই এ যন্ত্র দানবের চাকায় নস্ট হয়ে যাচ্ছে এসব সড়ক। কলাপাড়া পৌরসভা সূত্র জানায়, অসংখ্য স্পটে এ যানের চাকা আটকে (দেবে) পানির লাইন পর্যন্ত ফেটে পানির সরবরাহ বন্ধ রাখতে হয়েছে।
ইজিবাইক চালক সরোয়ার জানান, এসব যান চলাচলের কোন সময় কিংবা নিয়ম কানুন নেই। ইটবালু, রড, খোঁয়া, সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে চলাচল করতে গিয়ে রাস্তাঘাট আটকে রাখা হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রলিতে বহন করা মালামাল লোড-আনলোড করায় রাস্তায় যানসহ মানুষ চলাচল বন্ধ হয়ে থাকছে। রাস্তায় রাখা হয় অবার এসব নির্মাণ সামগ্রী। এ অবৈধ যানের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সবাই।
সেভেন স্টার পরিবহনের চালক আলাউদ্দিন জানান, কোন প্রকার সংকেত ছাড়াই যখন তখন বাইপাস সড়ক থেকে দ্রুতগতিতে মহাসড়কে চলে আসে ট্রলি গুলো। এসময় দ্রুতগতিতে চলাচলকারী পরিবহন বাস চালকদের পড়তে হয় বিপদে। এদের কারনে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাত্রীবাহী বাসের দুর্ঘটনায় পতিত হওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান।
গৃহীনি আজিমুননেছা জানান, শহরের এখন নতুন আতংক ট্রলি। বিশাল দেহ নিয়ে অদক্ষ চালকের হাতে যেভাবে দ্রুতগতিতে সড়কে চলাচল করে তাতে ট্রলি দেখলে যে কারোরই ভয় লাগে। শিশুরা এসব যানের মুখোমুখি পড়ে অনেক সময় চিৎকার করে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে আতংকে থাকতে হয়।
গণমাধ্যমকর্মী জহিরুল ইসলাম বলেন, যেখানে একটি মোটরসাইকেলের জন্য লাইসেন্স, রোড পারমিট, ট্যাক্স, ইনসুরেন্স এবং চালকের লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। সেখানে বিশাল দৈত্যাকৃতির ছয় চাকার যান ট্রলির জন্য কোন কিছুর প্রয়োজন হয়না। এমনকি চালকেরও লাইসেন্সেরও প্রয়োজন নেই।
সচেতন মানুষ মনে করেন, ট্রলির জন্য নম্বর প্লেটসহ লাইসেন্স, রোড বা রুট পারমিট, চালকদের লাইসেন্স ব্যাধ্যতামুলক করা উচিৎ। পণ্য পরিবহনসহ চলাচল নিয়ন্ত্রনে আনা উচিৎ। বিশেষ করে দিনের বেলায় চলাচল বন্ধ করা উচিৎ। পাশপাশি ট্যাক্সের আওতায় আনা উচিৎ। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়বে। গণমানুষের চলাচলের ভোগান্তি কমবে। নিরাপত্তা বাড়বে। আইনের অওতায় থেকে এ যন্ত্রদানবের চলাচলে নিয়ন্ত্রন আসবে। তবেই সড়কে মিলবে স্বস্তি।
কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার জানান, ইতোপুর্বে মাইকিং করে এসব যান দিনের বেলা চলাচল বন্ধ করে দিলেও প্রভাবশালী মহল কখনও এসব মানছেন না। তবে তিনি আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।