ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম বলেছেন, এই নির্বাচন আয়োজনের ‘পরিবেশ’ এখনও তৈরি করতে পারেনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, ডাকসু নির্বাচন যাতে জাতীয় নির্বাচনের মতো না হয়, বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মতো না হয়।
সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ডাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সাংবাদিকরা প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে একথা বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ‘ভোট ডাকাতি’ করে জিতেছে বলে বিএনপির অভিযোগ। দলটির নেতাদের দাবি, ব্যালট বাক্সগুলো রাতেই ভরে রাখা হয়েছিল। তিন দশক পর ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়ার পর ছাত্রদল বলছে, এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার সহাবস্থান নিশ্চিত হয়নি।
নজরুল বলেন, সরকার ক্ষমতায় আসীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ সরকারের নিয়োজিত। ফলে দুঃশ্চিন্তার কারণ আছেই। নির্বাচনে অংশ নিতে সবার সমান সুযোগ এখনও নিশ্চিত হয়নি বলে তার দাবি। ছাত্র সংগঠনগুলোর দাবি পূরণ না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে নজরুল বলেন, কিন্তু আমরা আশা করব, যে ছাত্র সমাজ আমাদেরকে যুগে যুগে পথ দেখিয়েছে, সেই ছাত্র সমাজ তাদের প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। এবারের ডাকসু নির্বাচন গণতন্ত্রের পক্ষের ও বিপক্ষের শক্তির লড়াই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বিএনপির চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ড্যাবের নতুন আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনারের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যদের নিয়ে দুপুরে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেন নজরুল। সেখানেই ডাকসু নির্বাচনের তফসিল নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, এ জে ডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এ কে এম আজিজুল হক, আবদুল কুদ্দুস, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নবগঠিত ড্যাবের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ওবায়দুল কবীর খান, কোষাষ্যক্ষ একেএম মহিউদ্দিন ভুঁইয়া মাসুম, সদস্য রফিকুল কবির লাবু, আবদুস সালাম, মোস্তাক রহিম স্বপনও উপস্থিত ছিলেন।
ডাকসু নিয়ে শঙ্কা হাফিজের: ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিশ্চিত না করে তফসিল ঘোষণায় ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমদ।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ভোট কারচুপি করার জন্য ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাংলাদেশে যত ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে, ভালো করে খুঁজে দেখলে দেখা যাবে সেখানে কোনো না কোনো ছাত্রনেতা জড়িত আছে। এমতাবস্থায় ডাকসু নির্বাচন সুষ্ঠু হবে, এটা আমরা মনে করি না। বর্তমান সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কারচুপি ছাড়া অন্য কিছুই দিতে পারবে না।
সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় এ মন্তব্য করেন হাফিজ উদ্দিন। নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরাম ওই সভার আয়োজন করে। হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে রেখেছে। তারা (ছাত্রলীগ) ছাড়া আর কোনো ছাত্রসংগঠন ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে পারে না। হলে থাকতে পারে না। ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নেই। এ ধরনের পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হয় কী করে? তিনি আরো বলেন, ছাত্রলীগ ছাড়া সব সংগঠন দাবি করেছিল, অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোট গ্রহণ করা হোক। কেননা, ছাত্ররা যেহেতু হলে প্রবেশ করতে পারবে না, সেহেতু হলে যেন ভোট গ্রহণ করা না হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের এই দাবির প্রতি কোনো সম্মান করেনি। তারা পূর্বপরিকল্পিত ছক মেনে হলে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে। যাতে সাধারণ ছাত্ররা আতঙ্কে ভোট দিতে যেতে না পারে। বিএনপির এই শীর্ষ নেতা বলেন, এই ভোট ডাকাতির সরকার বিশ্বরেকর্ড করেছে। সংসদ নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন হোক আর সিটি করপোরেশন নির্বাচন হোক। সব নির্বাচনেই তারা ভোট ডাকাতি করেছে। এবার ছাত্র নির্বাচনকেও কলঙ্কিত করতে ডাকসু নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংগঠনের উপদেষ্টা সাঈদ আহমেদ আসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শুয়াইব আহমেদ, কৃষক দল নেতা শাহজাহান মিয়া স¤্রাট, জিনাফের সভাপতি লায়ন মিয়া মো. আনোয়ার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এফএন/এমআর