আমতলীতে ১০প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাত!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে ১০প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাত!
বুধবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০


আমতলীতে ১০ প্রকল্পের কাজ না করেই টাকা আত্মসাত!

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরগুনার আমতলী উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গ্রামীন অবকাঠামোর রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের  টিআর ও কাবিখার ১০ প্রকল্পের কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইউপি চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সভাপতি ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার যোগসাজশে এ টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন তারা।
জানাগেছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারের জন্য ১০ টি প্রকল্পে টিআর ও কাবিখার বরাদ্দ দেন আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম। দোয়াতচারা মাদ্রাসার মাঠ বালু দিয়ে ভরাট, কালীবাড়ী ওয়াবদার পাকা রাস্তা হইতে কেতাবআলী বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা বালু দিয়ে উন্নয়ন, বাইনবুনিয়া লোহার ব্রীজ সংস্কার, কালীবাড়ী নিতাই মাষ্টার সংলগ্ন লোহার ব্রীজ সংস্কার, কলাগাছিয়া ষোল হাওলাদার জামে মসজিদের মাঠ ভরাট, আঙ্গুলকাটা মুন্সিবাড়ী মসজিদের মাঠ ভরাট, উত্তর ডালাচারা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট, কালিবাড়ী গোলবুনিয়া খালে আরসিসি পাইপ দিয়ে বাঁধ নির্মাণ। এই ৮ টি প্রকল্পে টিআর থেকে নগদ ৪ লক্ষ ৬৪ হাজার ২’শ ৭৭ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। হরিদ্রাবাড়িয়া বশির হাওলাদার বাড়ীর পুর্বপাশের কালভার্ট থেকে কলাগাছিয়া কাদের দফাদার বাড়ীর সামনের ব্রীজ পর্যন্ত রাস্তা ও  ডালাচারা অলির দোকান থেকে শুরু করে হাবিব সিকদার বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মাটি দিয়ে উন্নয়ন। এই দুই প্রকল্পের কাবিখা থেকে সাড়ে ১৭ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। টিআর ও কাবিখার ওই ১০ টি প্রকল্পের কাজ না করে ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সংশ্লিষ্ট প্রকল্প সভাপতি ও পিআইও মোঃ মফিজুল ইসলামের যোগসাজশে এ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী। গত জুন মাসে এ প্রকল্পগুলোর টাকা ও চাল তুলে নিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। অভিযোগ রয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলাম সরেজমিনে প্রকল্পগুলো পরিদর্শন না করেই সমুদয় অর্থ ও চাল ছাড় দিয়েছেন।
বুধবার দোয়াতচারা স্বতন্ত্র মাদ্রাসা, আঙ্গুলকাটা মুন্সি বাড়ী মসজিদ ঘুরে দেখাগেছে, এ মাদ্রাসা ও মসজিদ মাঠে কোন বালু দেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঠ ভরাটের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়ার বিষয়ে স্থানীয়রা জানে না।
আঙ্গুলকাটা গ্রামের হাবিবুর রহমান মুন্সি বলেন, আমাদের মসজিদের মাঠ ভরাটের অর্থ বরাদ্দের খবর এলাকার কেউ জানেন না। কেউ মাঠ ভরাট করতে আসেননি।
দোয়াতচারা স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি হাসান আলী আকন বলেন, মাদ্রাসা মাঠ ভরাটের বরাদ্দের কথা আপনাদের মুখে শুনলাম। চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুরুল ইসলাম ও ইউপি সদস্য বরাদ্দ এনে কাজ না করে খেয়ে ফেলেছেন।
ওই এলাকার জসিম মোল্লা, আবদুল মান্নান ও মামুন মোল্লা বলেন, এই মাদ্রাসার মাঠ ভরাটের নামে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে তা এলাকার কেউ জানেন না। আর মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মাঠ ভরাট হয়নি।
ষোল হাওলাদার মসজিদ এলাকার বাদল মৃধা, দেলোয়ার হোসেন, আলম ঘরামী ও হোসেন হাওলাদার বলেন, মসজিদ মাঠ ভরাটের বরাদ্দের খবর কেউ জানিনা। তবে ১৫ দিন পূর্বে ইউপি সদস্য খবির উদ্দিন আকন ১০ হাজার টাকার বালু মসজিদের পাশে একটি ডোবায় দিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা যুবলীগ সদস্য গুলিশাখালী এলাকার মোঃ মঞ্জুরুল ইসলাম সোহাগ মৃধা বলেন, দুইটি লোহার ব্রীজ সংস্কার করতে এক লক্ষ ৭ হাজার ২’শ ২৩ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। ওই ব্রীজ দুটির একটিতে মাত্র দুইটি কাঠের পাটাতন দিয়ে চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুুরুল ইসলাম সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তিনি আরো বলেন, ইউনিয়নের ১০ টি প্রকল্পেই কাজ না করে তিনি টাকা আত্মসাৎ করেছন। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রশাসনের নিকট দাবী জানাই।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সদস্য গুলিশাখালীর বাসিন্দা মোঃ হারুন অর রশিদ মোল্লা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নুরুল ইসলাম ১০ টি প্রকল্পের কাজ না করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই।
ষোল হাওলাদার মসজিদের প্রকল্প সভাপতি ইউপি সদস্য মোঃ খবির উদ্দিন আকন বলেন, আমি কাজ করে বিল উত্তোলন করেছি।
গুলিশাখালী ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ¦ অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, আমি যে সকল প্রকল্প নিয়েছি তার শতভাগ কাজ শেষে অর্থ উত্তোলন করেছি। অন্য কোন প্রকল্প অনিয়ম হয়ে থাকলে তা আমার জানা নেই।
আমতলী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলাম বলেন, আমি প্রকল্পগুলো সরেজমিনে তদন্ত করবো। কাজ না করে থাকলে অর্থ ফেরতের জন্য সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে গত অর্থ বছরে কাজ না করে অর্থ ছাড় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টিআর এর বরাদ্দের টাকা অগ্রীম দেয়ার বিধান রয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামানের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি  অভিযোগ দেয়ার কথা বলেন।
আমতলী উপজেল চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম সরোয়ার ফোরকান বলেন, অর্থ বছর শেষে আমি প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করতে পারিনি। কিন্তু তৎকালিন ইউএনও মনিরা পারভীন ও প্রকল্প বাস্তবায়ক কর্মকর্তা মোঃ মফিজুল ইসলাম স্বাক্ষর করে  আমার কাছে নিয়ে আসায় আমি স্বাক্ষর করেছি। ওই প্রকল্পগুলোতে কাজ হয়েছে কিনা আমি জানিনা।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:০৪:২২ ● ৪৬১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ