রাজবাড়ীতে গড়াই নদীতে সর্ষের আবাদ! নাব্যতা হারিয়েছে আরও ৪ নদী

প্রথম পাতা » ঢাকা » রাজবাড়ীতে গড়াই নদীতে সর্ষের আবাদ! নাব্যতা হারিয়েছে আরও ৪ নদী
বৃহস্পতিবার ● ১৭ জানুয়ারী ২০১৯


---

রাজবাড়ী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
ফারাক্কার হিংস্র ছোবলে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার এক সময়ের প্রবাহমান প্রমত্তা গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদী এখন নাব্যতা হারিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। পানি প্রত্যাহার, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর অবৈধ দখলের কারণে দিন দিন গ্রাস করছে এ পাঁচটি নদী। নদীগুলো এখন শুধুই ইতিহাসে পরিনত হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, গড়াই নদীতে মাইলের পর মাইল জেগে উঠেছে বিশাল বালুচর। নদীতে নেই কোনো স্রোত, নেই কোনো গভীরতা। অনেক জায়গায় নদীগুলোর বুক দিয়ে পায়ে হেটেই চলা যাচ্ছে। অনেক কৃষক আবার জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ফসলের আবাদ করছে। শুধু দেখা মেলেনি নদীতে মাছ ধরার সারিসারি নৌকা ও জেলেদের জাল। প্রায় মৃত নদীগুলো আজ এ অঞ্চলের কৃষি, বাণিজ্য, মৎস্য সম্পদ ও পরিবেশ বিপন্ন হয়েছে। হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় প্রজাতির মাছ। এসব নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের কারণ হিসেবে এলাকাবাসী আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সুষ্ঠু পানিবণ্টন ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং ফারাক্কা বাঁধের নেতিবাচক প্রভাবকেই দায়ী করছেন। ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল ভারত ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করার পর এই নদীগুলোর মরণদশা শুরু হয়েছে। নদী আছে, পানি নেই। প্রতি বছর বালু জমতে জমতে এখন পুরো গড়াই বিশাল বালুচরে পরিণত হয়েছে। এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। বিগত বছরগুলোয় গড়াই নদীতে একটা ক্ষীণ স্রোতধারা থাকলেও এবার পানি কমে যাওয়ার আগেই তা নেই। এসব নদী বিল কিংবা খালে পরিণত হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের পরিবেশ এবং কৃষক ও জেলেদের জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। একতরফা পানি প্রত্যাহার করে ভারত তাদের বন্দর, কৃষি, সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সচল রাখলেও এদেশের কৃষি, বন্দর, নৌ-যোগাযোগ, পরিবেশ ও জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে ভয়াবহ বিপর্যয়। বালিয়াকান্দির এ নদীগুলোর উৎসমুখ পদ্মা নদীতে হওয়ায় আজ বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে পদ্মার সঙ্গে সঙ্গে এর শাখা নদী গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা ও পুষস্বলী নদী হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। বর্ষাকালে এসব নদীতে কিছুদিনের জন্য পানি থাকলেও প্রায় সারা বছরই থাকে পানিশূন্য। আর এসব নদী মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’পাশ দখল করে নিয়েছে একশ্রেণির দখলবাজরা। মহাজোট সরকার চন্দনা-বারাশিয়া প্রকল্পের মাধ্যমে খনন কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন করেছে। তবে পানির উৎসমুখ বন্ধ থাকার কারণে এর সুফল পাচ্ছে না কৃষকরা। তাদের দাবী পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা। একসময় চন্দনা নদী দিয়ে নৌকা যোগে ব্যবসা বানিজ্যের প্রসার ঘটে। তবে কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে নৌকার যোগাযোগ। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুরের ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সরকার গঙ্গা ব্যারেজ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিলেও তা আলোর মুখ দেখার আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সোনাকান্দর খেয়াঘাটের ইজারাদার মোকারম বিশ্বাস জানান, গড়াই নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ার কারণে গাড়ী ও লোকজন পারাপারে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। জরুরী ভিত্তিতে ড্রেজিং না করলে নৌকা পারাপার বন্ধ হয়ে পড়বে। এ ঘাট দিয়ে মাগুরা জেলার শ্রীপুর, বালিয়াকান্দি উপজেলার মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম। নদীর বুকে বিশাল আকৃতির চর জেগে উঠার কারণে নদীর গতিপথও পরিবর্তন হচ্ছে। ড্রেজিং করে নদীর পানি প্রবাহ সৃষ্টি করা উচিত। জামসাপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আঃ আলীম জানান, গড়াই নদীতে চর জেগে উঠার কারণে নদীটি সরু খালে পরিনত হয়েছে। এতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে রাজবাড়ী অংশে ভাঙ্গন দেখা দেয়। এখন এলাকায় হেটেই নদী পার হওয়া যায়। নারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আবদুস সালাম মাষ্টার জানান, গড়াই নদী শুকিয়ে ছোট বড় চরের সৃষ্টি হয়েছে। নদীটি এখন ছোট খালে পরিনত হয়েছে। ভাঙ্গা-গড়ার খেলায় মেতে আজ যেন ক্লান্ত। জেগে ওঠা চরে এখন চাষ হচ্ছে বিভিন্ন ফসলের। নদীতে ড্রেজিং করে পানির স্রোতধারা চালু করলে নদীটি রক্ষার সাথে সাথে দু’পাড়ের বাসিন্ধাদের ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, রাজবাড়ীর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, গড়াইসহ পাঁচটি নদীর মধ্যে খুব শিগগিরই চত্রা নদী ড্রেজারের মাধ্যমে পুনঃখননের কাজ শুরু হবে। আশা করছি পূনঃখনন সম্পন্ন হলে চত্রা নদী তার প্রাণ ফিরে পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ০:৪৬:৩৮ ● ১৪৯৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ