আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানার সাবেক ওসি ও বর্তমানে খুলনা রেঞ্জে সংযুক্ত মোঃ কামরুজ্জামান টুকু তালুকদার ও তার দুই ভাইয়ের অব্যাহত জীবননাশের হুমকিতে কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের গামুরীবুনিয়া গ্রামের মোঃ আবু ইউসুফ তালুকদার ও তার পরিবারের লোকজন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। জীবনের নিরাপত্তাহীনতার ভয়ে শিক্ষক আবু ইউসুফ তালুকদার মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়নে উপস্থিত হয়ে তার চাচাতো ভাই ওসি টুকুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকাবাসী এ ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবী করেছেন।
জানাগেছে, কলাপাড়া উপজেলার চাকামইয়া ইউনিয়নের গামুরীবুনিয়া গ্রামের শিক্ষক মোঃ আবু ইউসুফ তালুকদারের সাথে জমি নিয়ে তার চাচাতো ভাই পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান টুকুর বিরোধ চলে আসছে। ইউসুফ আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়নে উপস্থিত হয়ে অভিযোগ করেন ওসি কামরুজ্জামানের প্রভাব খাটিয়ে তার দুই ভাই স্বপন ও লোকমান তালুকদার তার বাড়ীর জমি দখলের চেষ্টা করে। এ নিয়ে স্থানীয়ভাবে কয়েক দফায় শালিস বৈঠক হয়। কিন্তু শাসিল বৈঠকের সিদ্ধান্ত ওসি, তার ভাই সোহরাফ হোসেন স্বপন তালুকদার ও লোকমান হোসেন মানছেন না। তারা অনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে জমি দখলের চেষ্টা চালায়। এতে শিক্ষক ইউসুফ বাঁধা দিলে ওসি কামরুজ্জামান তার মামাতো ভাই স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ জাকির হোসেন অভি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তাকে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন ইউসুফ। ওসি ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে শিক্ষক ইউসুফ ও তার পরিবারের সদস্যরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে তারা বাড়ী-ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ীতে অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়াও ওসি কামরুজ্জামান এক নারীকে দিয়ে ইউসুফ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। ওসি কামরুজ্জামানের পালিত সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে শিক্ষকসহ এলাকাবাসী দিশেহারা। ওসি কামরুজ্জামানের দুই ভাইয়ের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কেউ তাদের বিরুদ্ধে গেলে তার উপর নেমে আসে অমানষিক নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার খরগ। তাদের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি এবং তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তাদের মিথ্যা মামলা ও হামলার ভয়ে ওই এলাকার কোন মানুষ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এছাড়াও ওসি ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এলাকায় বিভিন্ন মানুষের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, ওসি কামরুজ্জামান ও তার দুই ভাই স্বপন ও লোকমান হোসেন তালুকদার এলাকায় মুর্তিমান আতঙ্ক। তার দুই ভাই এলাকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। মানুষের সাথে অহেতুক ঝামেলা সৃষ্টি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে তারা। এলাকার মানুষের জোড় করে জমি দখল করছে। তাদের এমন কর্মকান্ডের কেউ প্রতিবাদ করলেই তার উপরে ওসির পালিত সন্ত্রাসী ইউপি সদস্য জাকির হোসেন অভির বাহিনী দিয়ে অত্যাচার ও নির্যাতন চালান তিনি। ওসির প্রভাব বিস্তার করে অহেতুক মিথ্যা মামলার ভয় দেখিয়ে তার দুই ভাই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এলাকার মানুষকে তার দুই ভাই জিম্মি করে ফেলেছেন। তাদের এমন কর্মকান্ড থেকে মুক্তি এবং বিচার দাবী করেছেন এলাকাবাসী।
ভুক্তভোগী মোঃ মোস্তফা বিশ^াস অভিযোগ করে বলেন, ওসি কামরুজ্জামান তার ভাই স্বপন ও লোকমান তালুকদার আমার আমতলী-কলাপাড়া সড়কের খলিয়ান বাস স্ট্যান্ডে সাড়ে ১৭ শতাংশ জমি জোড়পূর্বক দখল করে নিয়েছে। এ বিষয়ে আমি মহা পুলিশ পরিদর্শকের কাছে অভিযোগ দিয়েছি কিন্তু কোন সুফল পাইনি। তিনি আরো বলেন, আমার জমি দখল করেও ওসি ও তার দুই ভাই খ্যান্ত হয়নি। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশে ধরিয়ে দেয়। ওই মামলায় আমি এক মাস জেল খেটেছি। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
নির্যাতনের শিকার মনির তালুকদার বলেন, ওসি ও তার দুই ভাইয়ের হুমকিতে শিক্ষক আবু ইউসুফ তালুকদার ও তার পরিবারের লোকজন বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। ওসি ও তার দুই ভাইয়ের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই তাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করছে। ওসি ও তার দুইয়ের জিম্মি দশা থেকে এলাকাবাসী মুক্তি চায়।
স্থানীয় চৌকিদার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, ওসি কামরুজ্জামান ও তার দুই ভাই শিক্ষক ইউসুফের জমি জোড় করে দখল নেয়ার চেষ্টা করে। এর নিয়ে কয়েক দফা ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ওসি ও তার দুই ভাই চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত মানছেন না। জমি জোড় করে দখল করতে না পারায় ইউসুফকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে। ইউসুফ ওসির ভয়ে বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
শিক্ষক আবু ইউসুফ তালুকদার বলেন, ওসি কামরুজ্জামান টুকু আমার চাচাতো ভাই। তিনি বাড়ী করার জন্য আমার জমি জোড়পূর্বক দখল করতে চায়। আমি এতে বাঁধা দিলে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়। পরে আমাকে বিভিন্ন ভাবে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে। বর্তমানে ওসি ও তার দুই ভাই আমাকে জীবন নাশের হুমকি দিচ্ছে। আমি ওসির অব্যাহত হুমকিতে পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়ী-ঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমি এ ঘটনার তদন্তপূর্বক বিচার দাবী করছি।
চাকামইয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হুমায়ূন কবির কেরামত হাওলাদার বলেন, ওসি কামরুজ্জামানের প্রভাব খাটিয়ে তার দুই ভাই শিক্ষক ইউসুফ ও তার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানী করছেন। তারা কোন শালিস বৈঠক মানছেন না। ওসি ও তার দুই ভাইয়ের কাছে এলাকাবাসী জিম্মি।
নেছারাবাদ থানার সাবেক ওসি বর্তমানে খুলনা রেঞ্জে সংযুক্ত মোঃ কামরুজ্জামান টুকু তালুকদার মুঠোফোনে বলেন, আামর বিরুদ্ধে অনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। তিনি আরো বলেন, আমিতো বাড়ীই যাইনা। কিভাবে আমি এলাকায় প্রভাব খাটাই?
কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়টি আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর