কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
কলাপাড়ার বৃহৎ ইলিশের মোকাম মৎস্য বন্দর মহিপুর-আলীপুরে এখন ইলিশের রমরমা বেচা-কেনা চলছে। সর্বত্র প্রাণচাঞ্চল্য রয়েছে। সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ নিয়ে কিনারে ফিরছে জেলেরা। কিন্তু বরফের তীব্র সঙ্কটে ফের সাগরে যথাসময় যেতে পারছে না। বরফের সঙ্কটে এক ধরনের অনিশ্চয়তায় পড়েছেন জেলেসহ ট্রলার ও আড়ত মালিকরা।
মৎস্য ব্যবসায়ী মজনু গাজী জানান, প্রতি ক্যান (৫০ কেজি) অতিরিক্ত দুই শ’ টাকা করে দিয়েও বরফ মিলছে না। দেড়-দুইদিন অপেক্ষার পরে ১০০/১২০ টাকা ক্যানের বরফ কিনতে হচ্ছে ৩০০/৩৫০ টাকায়। কেউ কেউ ৫০০ টাকায় পর্যন্ত ঠেকিয়ে বিক্রি করছে। এভাবে প্রতিদিন ৫০-১০০/১৫০ ট্রলারের জেলেরা অতিরিক্ত ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়েও পর্যাপ্ত বরফ পায়না। গত টানা তিনদিন বরফের এমন তীব্র সঙ্কট চলছে। মহিপুর-আলীপুরের ৪৮টি বরফকলের সর্বোচ্চ উৎপাদন দৈনিক ৩০ হাজার ক্যান। কিন্তু প্রত্যেকটি ট্রলার একবারে সাগরে মাছ শিকারে যেতে ২০০-২৫০ ক্যান বরফের প্রয়োজন হয়। এভাবে প্রতিদিন ১৫০-২০০ ট্রলারের প্রয়োজন হয় কমপক্ষে ৪০ হাাজার ক্যান বরফের। মৌসুমের প্রথমে এক ক্যান বরফ বিক্রি হতো ১০০/১২০ টাকায়। আর এখন এক ক্যান বরফ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। তাও সলিড না; খোল, ওজনে ৫০ কেজি হয় না। একেতো বরফের সঙ্কট তার ওপরে সার্বক্ষণিক বিদ্যুত থাকছে না। এসমস্যা প্রায় সাতদিন ধরে। সকলের মন্তব্য বিদ্যুত উৎপাদনে ঘাটতি নেই। নেই লোডশেডিং, তার ওপরে শুধুমাত্র লাইনের প্রতিদিন সমস্যার কারনে মধ্যরাত থেকে বার বার ট্রিপ করে বিদ্যুতে। ঘাটে বসা থাকা এফ বি ভাই ভাই ট্রলারের মাঝি মো. জাহাঙ্গীর জানান, দেড় দিন অপেক্ষা করছেন বরফের জন্য। সাগরে প্রচুর ইলিশ পড়লেও বরফের সঙ্কটে যেতে পারছেন না। সোমবার রাতেও বরফ পাবেন কি না তা জানেন না এই ট্রলারের মাঝিসহ জেলেরা।
আড়ত মালিক ও মহিপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সভাপতি দিদার উদ্দিন আহমেদ মাসুম জানান, তিনদিন ধরে বরফের হাহাকার চলছে। তিনি জানান, ১০০/১৫০ টাকার বরফ পাঁচ শ’ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাও পর্যাপ্ত নয়। তার দাবি, বর্তমানে এই মোকামে দৈনিক ২০-২৫ হাজার ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। বরফকল ও আড়ত মালিক মজনু গাজী জানান, তার বরফ কলের দৈনিক উৎপাদন সর্বোচ্চ ৯০০ ক্যান। যা দিয়ে এক দিনে চার/পাঁচটি ট্রলারের চাহিদা মেটানো যায়। তাও যদি ২৪ ঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত থাকে। কিন্তু গতকালকে (শনিবার) অসংখ্যবার কারেন্ট ট্রিপ করেছে। বরফের উৎপাদন মারত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তিনিও স্বীকার করেন দাম দ্বিগুনের বেশি বেড়ে যাওয়ার। ট্রলারের জেলেরা জানান, দীর্ঘ ৬৫ দিনের অবরোধের পরে করোনাকাল এবং আমফান বন্যা, সবশেষ অমাবস্যার জোঁতে টানা পাঁচদিন সাগর ভয়াল উত্তাল থাকায় গভীর সাগরে ইলিশসহ কোন মাছ শিকার করতে পারেন নি। এখন প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। কিন্তু বরফের ভয়াবহ সঙ্কটে পড়ে জেলেরা কাঙ্খিত ইলিশ শিকার করতে পারছে না। মহিপুর-আলীপুর দুই পাড়ে রবিবার দুপুরে অন্তত ৩০০ ফিশিং বোট বরফের অপেক্ষায় ঘাটে রয়েছে। কেউ কেউ পটুয়াখালীসহ দুর থেকে বেশি দামে বরফ কিনে সাগরে ছুটছে ইলিশের আশায়। কলাপাড়া পল্লী বিদ্যুত সমিতির ডিজিএম প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, কোন লোডশেডিং নেই। মাঝেমধ্যে সঞ্চালন লাইনের ক্রুটি বিচ্যুতি ঘটছে। যা তাৎক্ষণিক সমাধান করা হচ্ছে।
এমইউএম/এমআর