পিরোজপুর সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পিরোজপুরের নাজিরপুরে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) স্বপ্না রানী মৃধার ব্যাপক কমিশন বাণিজ্যের কারণে সরকারী ভাবে ধান সংগ্রহের কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে। তার স্বামী হিমাদ্রী শেখর মন্ডলের নিয়ন্ত্রণে নির্ধারিত দালাল চক্রের মাধ্যমে এ ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এ কারণে চলতি মৌসুমে কার্ডধারী সাধারণ কৃষকরা ধান দিতে পারেণনি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, প্রতি টন ধানের জন্য এক হাজার থেকে ২ হাজার আর প্রতিটন চালের জন্য নেয়া হয় ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা। আর এতে প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি।
তবে অভিযুক্ত স্বপ্না রানী মৃধা ও তার স্বামী হিমাদ্রী শেখর মন্ডল তাদের বিরুদ্ধে আনিত ওই কমিশন ও সিন্ডিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার স্বামী জানান, তার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে কেহ তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করতে পারে। তবে তার আত্মীয়রাও অনেকে ধান দেয়ার জন্য কার্ড পেলেও তাদেরকে তিনি দুর্নামের ভয়ে ধান দিতে নিষেধ করেছেন বলে দাবী করেন।
উপজেলার শ্রীরামাকাঠী ইউনিয়নের চলিশা গ্রামের কৃষক ফারুক হাওলাদার জানান, তিনি চলতি মৌসুমের লটারীর মাধ্যমে তালিকা ভুক্ত কৃষক হিসাবে খাদ্যগুদামে ধান দিতে গেলে গুদাম রক্ষক সহ সেখানে থাকা গুদামের লোকজন ওই ধান ভিজে সহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তা ফেরত দেন। একই অবস্থা সাধারন কৃষকের জন্য। তাই এমন হয়রানী এড়াতে কৃষক ধান দিতে আসে নি। ওসিএলএসডি’র স্বামীর নেতৃত্বে স্থানীয় দেবাশ্রয় হালদার জনি সহ ৫/৬ জনের একটি দালাল চক্র চলতি বছরের এ ধান সরবরাহ করেন। এ দালাল চক্রটি কৃষকদের কাছ থেকে কার্ড হাতিয়ে নিয়ে তারাই ধান কিনে তা দিয়েছেন। উপজেলার শ্রীরামাকাঠী ইউনিয়নের ভীমকাঠী গ্রামের কৃষক মো. হাফিজুর রহমান জানান, তিনি চলতি মৌসুমে খাদ্যগুদামে ৬ টন ধান দিয়ে প্রতিটনের জন্য ওসিএলএসডিকে ১ হাজার টাকা করে ৬ হাজার টাকা দিয়েছেন।
খাদ্যগুদামে চাল দেয়ার জন্য অনুমোদিত একাধীক মিল মালিক জানান, প্রতিটন চালের জন্য ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা উৎকোচ দিতে হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলার এক মিল মালিক জানান, ওসিএলএসডি আমার ঘনিষ্ট লোক হওয়ারপরও সাড়ে ৫ টন চালের জন্য ১১হাজা টাকা দিতে হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, চলতি মৌসুমে ২হাজার ৩৮৪ মেট্রিক টন রোরো ধান ও ৯৬৬ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বিগত ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯৫২ মেট্রিক টন ধান ও ৩৫৪মেট্রিকটন ৭১০ কেজি চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিগত আমন ধানের মৌসুমে ৭৮০ মেট্রিকটন ধান ও ১০৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ হয়েছে। এ সব ধান ও চাল থেকে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫লাখ টাকা কমিশন নেয়া হয়েছে। তবে সম্প্রতি এ ধানের দাম এখন বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা দান দিচ্ছেন না। এমন কি দালাল চক্রও ধান দিতে পারছে না।
জানা গেছে, চলতি মৌসুমে সরকার বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের জন্য গত ৩০আগষ্ট শেষ তারিখ থাকলেও পরে তা আবার বর্ধিত করে ১৫সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করা হয়।
আরএইচএম/এমআর