ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
অনুষ্ঠেয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলের ৮৭ প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই নামগুলো ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, এটি তালিকা প্রকাশের প্রথম ধাপ। ১৯ সদস্যের মনোনয়ন বোর্ড এই তালিকা চূড়ান্ত করেছে। পাঁচ ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন শুরু হচ্ছে আগামি ১০ মার্চ ৮৭ উপজেলায় ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে।
দেশের ৪৯২টি উপজেলার মধ্যে অন্তত ৪৮০টিতে এবার ভোট হচ্ছে। প্রথম ধাপে রংপুর, ময়মনসিংহ, সিলেট ও রজশাহী বিভাগের ৮৭ উপজেলায় ভোট হবে। প্রথম ধাপে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১১ ফেব্রুয়ারি, মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১২ ফেব্রুয়ারি, প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৬ ফেব্রুয়ারি। মার্চ মাসেই পরবর্তী চারটি ধাপের ভোটগ্রহণ হবে। দ্বিতীয় ধাপে ১৮ মার্চ, তৃতীয় ধাপে ২৪ মার্চ, চতুর্থ ধাপে ৩১ মার্চ হবে ভোট। পঞ্চম ও শেষ ধাপের ভোট হবে ১৮ জুন। উপজেলাগুলোতে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বাছাইয়ে তৃণমূল থেকে সুপারিশ নিয়ে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিচ্ছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। তৃণমূল থেকে নামের সুপারিশ নিয়ে ইতোমধ্যে ৭০০ অভিযোগ এসেছে কেন্দ্রে।
এ বিষয়ে কাদের সাংবাদিকদের বলেন, সেটা দলের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সব বিবেচনা করেই মনোনয়ন বোর্ড নমিনেশন দিয়েছে। সার্বিক শৃঙ্খলা, সাংগঠনিক অবস্থা বিচার বিশ্লেষণ করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীদের টাকা ফেরত: উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আবার সিদ্ধান্ত বদল করল আওয়ামী লীগ। এখন এই পদে দল থেকে প্রার্থী দেওয়া হবে না, যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন তাদের ফেরত দেওয়া হবে অর্থ। আগামি মার্চে শুরু হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে আওয়ামী লীগ জানিয়েছিল, দুটি ভাইস চেয়ারম্যান পদে দল থেকে প্রার্থী মনোয়ন দেওয়ার হবে না, এগুলো উন্মুক্ত থাকবে। কিন্তু এরপর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সাধারণ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদের জন্যও প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছিল। সেজন্য চেয়ারম্যানের মতো ভাইস চেয়ারম্যানের মনোনয়ন ফরমও বিক্রি করা হয়।
শনিবার চেয়ারম্যান পদে প্রথম পর্বের ৮৭টি উপজেলায় দলীয় প্রার্থী ঘোষণার সময় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ভাইস চেয়ারম্যান পদটি উন্মুক্তই থাকছে। অর্থাৎ এই পদ দুটিতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হবে না, দলের যে কেউ প্রার্থী হতে পারবেন। বিএনপি স্থানীয় সরকারের এই ভোটে না আসায় নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যেই সিদ্ধান্তের এই পরিবর্তন বলে আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন। তার আগে গত সোমবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন ফরম বিক্রি করা হয়েছিল। চার দিনে বিক্রি হয় ৩ হাজার ৪৮৫টি ফরম। এখন সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের পর পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেন, যেহেতু সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে, সুতরাং টাকা ফেরত দিয়ে দেব। প্রত্যেক প্রার্থীর টাকা নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তৃণমূলের সুপারিশে প্রার্থী বাছাই করছে। প্রতিটি পদের জন্য তৃণমূল থেকে তিনটি করে নাম পাঠানো হচ্ছে। তার মধ্য থেকে একজন প্রার্থী চূড়ান্ত করছে দলের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড। তবে তৃণমূল থেকে আসা সুপারিশে অনেক জায়গায় সংসদ সদস্যরা প্রভাব খাটিয়ে একক নাম পাঠাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠলে সেই ব্যবস্থা বদল করা হয়।
সংসদের নারী আসনে ৪১ জনের নাম ঘোষণা: জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে সমাজকর্মী আরমা দত্ত ও অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফাসহ ৪১ জনকে মনোনয়ন দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত শুক্রবার গণভবনে শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভার পর তাদের নাম ঘোষণা করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। অন্যরা হলেন- কুমিল্লার আন্জুম সুলতানা, বরগুনার সুলতানা নাদিরা, জামালপুরের হোসনে আরা, গাজীপুরের রুমানা জলি, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, নেত্রকোণার হাবিবা রহমান খান (শেফালী), পিরোজপুরের শেখ এ্যানি রহমান, টাঙ্গাইলের অপরাজিতা হক, সুনামগঞ্জের মোসাম্মৎ শামীমা আক্তার খানম, গাজীপুরের শামসুন্নাহার ভুঁইয়া, মুন্সীগঞ্জের ফজিলাতুন নেসা, নীলফামারীর রাবেয়া আলিম, নরসিংদীর তামান্না নুসরাত বুবলি, গোপালগঞ্জের নার্গিস রহমান। ময়মনসিংহের মনিরা সুলতানা, ঢাকার নাহিদ ইজহার খান, ঝিনাইদহের মোছাম্মত খালেদা খানম, বরিশালের সৈয়দা রুবিনা মীরা, চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়েশা খান, পটুয়াখালীর কাজী কানিজ সুলতানা, খুলনার অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। দিনাজপুরের জাকিয়া তাবাসসুম, নোয়াখালীর ফরিদা খানম (সাকী), খাগড়াছড়ির বাসন্তী চাকমা, কক্সবাজারের কানিজ ফাতেমা আহমেদ, ফরিদপুরের রুশেমা বেগম, কুষ্টিয়ার সৈয়দা রাশিদা বেগম, মৌলভীবাজারের সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, রাজশাহীর আদিবা অঞ্জুম মিতা, খুলনার শিরিনা নাহার, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফেরদৌসী ইসলাম জেসি, শরীয়তপুরের পারভীন হক সিকদার। রাজবাড়ীর খাদেজা নুসরাত, ঢাকার শবনম জাহান শিলা, চট্টগ্রামের খাদিজাতুল আনোয়ার, নেত্রকোণার জাকিয়া পারভীন খানম, মাদারীপুরের তাহমিনা বেগম, ঢাকার শিরিন আহমেদ ও জিন্নাতুল বাকিয়া। বাংলাদেশের ৩৫০ আসনের সংসদে ৫০টি আসন নারীদের জন্য সংরক্ষিত। ৩০০ আসনে সরাসরি ভোট হলেও সংরক্ষিত আসন বণ্টন হয় ভোটে জয়ী দলগুলোর আসন সংখ্যার অনুপাতে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে এবার আওয়ামী লীগ ৪৩টি আসন পেতে পারে। দশম সংসদে ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংসদ ছিলেন ৩৯ জন। তাদের মধ্যে শুধু ফজিলাতুন নেসা ও ওয়াসিকা আয়েশা খান এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা নবম সংসদেও দলীয় মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য ছিলেন। আর সংরক্ষিত নারী আসনে দ্বিতীয় দফায় মনোনয়ন পাওয়া ওয়াসিকা আয়েশা খান চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া অন্যান্যের মধ্যে শেখ এ্যানি রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাত ভাই শেখ হাফিজুর রহমান টোকনের স্ত্রী। জোহরা আলাউদ্দিন মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করা জোহরা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার একুশে অগাস্ট গ্রেনেড হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছিলেন। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ঝর্না বর্তমানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সদস্য। অভিনেত্রী সুরর্ণা মুস্তাফাও ঢাকা থেকে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ হবেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রচারে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সরব উপস্থিতি ছিল। ভোটের প্রচারে রূপালি জগতের ওই তারকাদের মধ্যে সুবর্ণা মুস্তাফাও ছিলেন। দুই দিন আগে ঘোষিত একুশে পদকেও ভূষিত হয়েছেন তিনি। সমাজকর্মী আরমা দত্ত তার পৈত্রিক এলাকা কুমিল্লা থেকে সংরক্ষিত আসনের সাংসদ হবেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য আরমা ১৯৮০ সাল থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নারী জাগরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজ করেন। নারী জাগরণ ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে বেগম রোকেয়া পদক পান তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আরমা দত্ত শহীদ পরিবারের সন্তান। পাকিস্তানের গণপরিষদে প্রথম যিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি তুলেছিলেন সেই ধীরেন্দ্র নাথ দত্ত তার দাদা।একাত্তরে তার দাদা ও কাকা দিলীপ দত্তকে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আরমার বাবা ছিলেন প্রখ্যাত সাংবাদিক সঞ্জীব দত্ত, যিনি পাকিস্তান ও বাংলাদেশ অবজারভারের দ্বিতীয় শীর্ষ পদে কাজ করেছেন। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি সংরক্ষিত নারী আসনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। এ নির্বাচনের ভোটের জন্য একটি দিন রাখা হলেও ফল জানা যায় তার আগেই। ৫০টি সংরক্ষিত নারী আসনের বিপরীতে দল ও জোটগতভাবে সমান সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হবে বলে প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার দিনই তাদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হতে পারে।
এফএন/এমআর