কলেজ সরকারি হলেও বেসরকারি রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » কলেজ সরকারি হলেও বেসরকারি রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি
শনিবার ● ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


কলেজ সরকারি হলেও বেসরকারি রয়েছে শিক্ষক-কর্মচারীর চাকরি

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

শিক্ষা মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে বিগত বছরের আগস্টে একযোগে সারাদেশের ২৯৯টি বেসরকারি কলেজ সরকারি করা হয়। কিন্তু ওসব সরকারি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের চাকরি বেসরকারিই রয়ে গেছে। পদ সৃষ্টি না হওয়ায় তাদের সরকারি চাকরিতে আত্তীকরণ করা যায়নি। ২৯৯টি কলেজে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। তাদের অনেকেই বিগত ৫ মাসে অবসরে চলে গেছেন। আবার অনেকের অবসরের সময় আসন্ন। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুসাওে ওসব কলেজে ডিগ্রি থাকলে প্রতিটি বিষয়ে ৩ জন, অনার্স থাকলে কমপক্ষে ৭ জন এবং মাস্টার্স থাকলে কমপক্ষে ১২ জন শিক্ষক থাকার কথা। তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক কর্মচারীও থাকবে। কিন্তু অবসরজনিত কারণে পদ শূন্য হওয়ায় অনার্স স্তরে অনেক বিভাগে (বিষয়ে) পড়াচ্ছেন একজন মাত্র শিক্ষক। এতে কলেজগুলোর একাডেমিক কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারি কলেজেবিহীন প্রতি উপজেলায় একটি করে বেসরকারি কলেজ সরকারীকরণের আওতায় সরকারের বিগত মেয়াদে মোট ৩২৪টি কলেজ সরকারি করা হয়। তার মধ্যে বিগত বছরের ১২ আগস্ট একই দিনে এক আদেশে ২৯৯টি কলেজ সরকারি হয়। ওই কলেজগুলোতে সরকারিভাবে শিক্ষক-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি না হওয়ায় কর্মরতরা কেউ আত্তীকরণ হতে পারেননি। ওসব কলেজের শিক্ষকের মর্যাদা এবং বদলি ও পদোন্নতি কীভাবে হবে তা নির্ধারণ করতেই দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। পরে ‘আত্তীকরণ বিধিমালা-২০১৮’ নামে নতুন বিধি প্রণয়ন করে ওই ২৯৯টি কলেজ সরকারি করা হয়। তবে ৩২৪টি কলেজের বাকি কলেজগুলোর শিক্ষক-কর্মচারীরা ‘আত্তীকরণ বিধিমালা-২০০০’ অনুসারে সরকারি হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে পদ সৃষ্টির জটিলতা তৈরি হয়নি। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী ওসব কলেজের শিক্ষকরা সরকারি হওয়ার পর পিএসসির অধীনে পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডারভুক্ত হতে পারবেন। আবার নন-ক্যাডার হিসেবেও থাকতে পারবেন। চাকরি সরকারি না হওয়ায় ওসব কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তি ও আগের বেতন-ভাতাই চালু রাখা হয়েছে। সিদ্ধান্ত হয়েছে ওই কলেজ শিক্ষকদের মধ্যে যাদের বিসিএস পরীক্ষা দেয়ার যোগ্যতা আছে, তারা সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। যারা ক্যাডারভুক্ত হবেন, তারা বদলি হতে পারবেন। আর যারা পরীক্ষা দেবেন না, তারা নন-ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে নিজ নিজ কলেজেই চাকরি করতে থাকবেন। বদলিও হতে পারবেন না।
সূত্র জানায়, সরকারি পদ সৃষ্টি করা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। ওই কাজে শিক্ষা, অর্থ, জনপ্রশাসন ও সচিব কমিটির অনুমোদন লাগে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ইতিমধ্যে সরকারি হওয়া কলেজে পদ সৃজনের জন্য ৪টি কলেজের চারটি পৃথক মডেল ধরে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।  এখন যে মডেলটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাবে, তা অনুসরণ করে বাকি সব কলেজে পদ সৃষ্টি করা হবে। তাছাড়া প্রতিটি কলেজের প্রত্যেক শিক্ষক ও কর্মচারীর তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের জন্য অনেক সময় প্রয়োজন। কারণ সরকারীকরণের সময় কতিপয় দুস্কৃতকারী লোক নানা কায়দায় সরকারি চাকরিতে অন্যায়ভাবে প্রবেশের সুযোগ খোঁজে।
সূত্র আরো জানায়, বেসরকারি কলেজের শিক্ষক অবসরে গেলে অবসর ও কল্যাণ ট্রাস্টের সামান্য কিছু টাকা ছাড়া শিক্ষকরা বলতে গেলে কিছুই পাবেন না। অথচ সরকারি শিক্ষক হিসেবে অবসরে গেলে পেনশন পাওয়া যেত। তাছাড়া কলেজ সরকারি হওয়ায় সেখানে বেসরকারিভাবে আর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া যাচ্ছে না। অথচ কলেজ সরকারি হওয়ার আদেশের পর অনেকেই অবসরে চলে যাওয়ায় অনেক পদ শূন্য হয়ে গেছে। ফলে শিক্ষক সংকটে অনেক কলেজেই রুটিনমাফিক ক্লাস চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে।
এদিকে শিক্ষকরা বলছেন, প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি করে তাদের আত্তীকরণে দেরি করা হচ্ছে। বছর পেরিয়ে গেলে অনেক শিক্ষকের চাকরিকালও কমে যাবে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে আত্তীকরণ বাস্তবায়নের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। চলতি মাসেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পদ সৃষ্টির ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক জানান, সরকারি হওয়া কলেজগুলোর জনবলের চারটি পৃথক প্যাটার্ন তৈরি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে দেয়া হয়েছে। তারা যেটি অনুমোদন করবে, সেটিই অনুসরণ করা হবে। পাশাপাশি একাডেমিক সমস্যার বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ) ড. মোল্লা জালাল উদ্দিন জানান, জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সব শিক্ষক-কর্মচারীকে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে। তারপর তারা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তবে ক্যাডারভুক্তির জন্য বিধিমালায় যে পরীক্ষার সুযোগ রাখা হয়েছে, সেখানে সবাই পরীক্ষা দিতে পারবেন না। যেমন কারও বয়স যদি ৫৯ বছর হয়, তিনি তো আর পরীক্ষা দিতে যাবেন না। এ রকম কিছু বিষয় সম্পর্কে পৃথক আরেকটি বিধি করবে পিএসসি। তাতে নির্ধারণ করা হবে কারা কোন যোগ্যতা থাকলে ক্যাডারভুক্তির জন্য পরীক্ষা দিতে পারবেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ০:৪৪:৩৮ ● ৪১১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ