ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বিএনপিকে সক্রিয় করতে তারেক রহমানকে পরামর্শ দিয়েছেন দলটি সমর্থিত পেশাজীবী নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ‘তাড়াহুড়ো’ না করে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নিয়ে সভা করতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে বলেছেন তিনি। তারেককে ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ অভিহিত করে জাফরুল্লাহ বলেন, আমি আগেও বলেছি, আপনি ভবিষ্যতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীকে ধৈর্য ধরতে হয়, তাকে তাড়াহুড়া করলে হয় না। আপনার উপরে অনেকেই চেয়ে আছেন। অনুগ্রহ করে তাড়াহুড়া কইরেন না।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে সপরিবারে লন্ডনে পালিয়ে আছেন তারেক। মা খালেদা জিয়া এক বছর আগে কারাগারে যাওয়ার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়ে দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি। জাফরুল্লাহ বলেন, তারেক জিয়ার উদ্দেশে আমি একটা কথা বলতে চাই, আপনি অবশ্যই কথা বলবেন আপনার দলের নেতা-কর্মীদের সাথে। তবে সেখানে আপনার সিনিয়র নেতাদের উপস্থিত থাকতে বলেন, তাদের মাধ্যমেই এসব মিটিং করেন। এই রকম রিজভীর (রুহুল কবির রিজভী) মাধ্যমে মিটিং ডাইকেন না। সরাসরি মিটিং ডাকেন। মোশাররফ- মওদুদ এদের সামনে রেখে, হাফিজকে। তাহলেই দেখবেন আন্দোলনটা গড়ে উঠবে। এখন আন্দোলন ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনো সম্ভাবনা দেখছেন না জাফরুল্লাহ। এক বছর আগে খালেদা দুর্নীতির মামলায় দণ্ড নিয়ে কারাগারে যাওয়ার পর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিএনপি, যাকে ব্যর্থতা মনে করছেন দলটির নেতারাই। খালেদাকে ছাড়া সংসদ নির্বাচনে গিয়ে ভরাডুবি ঘটেছে বিএনপির; যদিও দলটির নেতারা বলছেন, ‘ভোট ডাকাতি’ করে তাদের হারানো হয়েছে।
বিএনপির নেতা-কর্মীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আগামি ১৭ দিন রাস্তায় থাকেন, প্রত্যেকদিন মিছিল করেন, প্রত্যেকদিন ট্রাক মিছিল করেন। ঢাকা শহরে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে যেন আপনাদের চেহারা দেখা যায়। ওই ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট ও প্রেস ক্লাবের ভেতরে গরম গরম হাতি-ঘোড়া আর মাইরেন না। খালেদাকে সরকারই বন্দি করে রেখেছে বলে দাবি করেন জাফরুল্লাহ। তাকে মুক্ত করতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে নামার আহ্বান জানান তিনি। আপনাদেরকে রাস্তায় থাকতে হবে। আমি খুশি হতাম আজকে যদি বিএনপির এক হাজার মহিলা এখান দুই ঘণ্টা রাস্তায় বসে থাকতেন, এক হাজার মহিলা ৫০টা ট্রাক নিয়ে ঢাকা শহরে প্রদক্ষিণ করে একটা স্লোগান দিতেন- গণতন্ত্র চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে জাফরুল্লাহ বলেন, আপনি পরিস্কার করে বলুন, খালেদা জিয়ার জামিনে আপনি কোনো রকম বাধার সৃষ্টি করবেন না, এদিকে নাগ গলানো বন্ধ করবেন। তাহলেই দেখবেন বিচারকরা নড়তে পারবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ভারতে সফরে গিয়ে ‘অসম চুক্তিতে’ সই করেছেন বলে দাবি করেছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, পহেলা চুক্তি কী? মাথা ধোলাই করা। আমাদের ১৮শ’ ঊর্ধবতন কর্মকর্তাকে ভারতে ট্রেইনিং দেওয়া হবে। যেখানে গরু রাখার জন্য মানুষ হত্যা করে, মানুষের অধিকার নাই, সেদেশে কী শেখার আছে? তিস্তা চুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি না হওয়ার সমালোচনাও করেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আকাশে অশনি সংকেত আছে। একটি আমি আগেই বলেছি ভারতীয় চক্রান্তের, দ্বিতীয়টা হলো রোহিঙ্গা। আমাদের দেশের সরকার যে জঙ্গির ভয় করছেন, এই যে রোহিঙ্গা তরুন-তরুণীর জীবনের কোনো আশা নেই, তারাই উর্বর ক্ষেত্র। তাদেরকে ভাষানচরে পাঠিয়ে জঙ্গি ঠেকানো যাবে না।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার পরিষদের উদ্যোগে ‘খালেদা জিয়ার এখনই মুক্তি চাই’ শীর্ষক ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন জাফরুল্লাহ। সংগঠনের মহাসচিব আ ফ ম মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ও জাহাঙ্গীর আলমের পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল ইসলামের শিশির, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, শাহজাহান সম্রাট, মিয়া মো. আনোয়ার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মাওলানা সোয়েব আহমেদ বক্তব্য রাখেন।
এফএন/এমআর