কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥
কুয়াকাটা-কলাপাড়া বিকল্প সড়কের তুলাতলী নামক স্থানে নির্মাণাধীন স্লুইজগেটের উপর কাঠের তক্তা বিছিয়ে ৩মাস যাবত যানবাহন থেকে টাকা আদায় করে চলছে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি চক্র। ৪৮নং পোল্ডারের বেড়িবাঁধ সড়কে চলাচলরত প্রতিটি যানবাহন থেকে প্রকার ভেদে ১০থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। প্রতিদিন কুয়াকাটার বিকল্প সড়ক দিয়ে দুই শতাধিকের বেশি যানবাহন চলাচল করে থাকে। যানবাহন থেকে ওই চক্রটির বিরুদ্ধে বিগত তিন মাসে প্রায় চার লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা প্রশাসন কিংবা পাউবো কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই জনসাধারণের সেবা করার নামে ফ্রি স্টাইলে এমন চাঁদাবাজি করলেও দেখার কেউ নেই।
জানা গেছে, কুয়াকাটা-কলাপাড়ার বিকল্প সড়কের উপর পানি নিস্কাশনের জন্য উপকূলীয় বেড়িবাধঁ উন্নয়ন প্রকল্প’র (সিইআইপি-১) আওতাধীন মৎস্যবন্দর আলীপুর থেকে চাপলী বাজার পর্যন্ত তিনটি স্লুইজ গেট নির্মাণ করছে চায়না সিকো কোম্পানী। এর নির্মাণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। বর্ষা মৌসুমে নির্মাণাধীন তিনটি স্লুইজগেটের উপর ইট কিংবা খোয়া না দেওয়ায় বৃষ্টির পানি জমে কর্দমাক্ত হয়ে যায়। আর এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ওই সড়কে চলাচলরত মটরসাইকেল, অটো রিক্সা, টমটমসহ ছোট বড় যানবাহন চালকরা। যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা না করেই স্লুইজগেট নির্মাণ করায় এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়সহ ওই সড়কে চলাচলরতদের। এমন অবস্থায় মানুষের দূর্ভোগকে পুঁজি করে তিনটি স্লুইজগেটের মধ্যে তুলাতলী স্লুইজগেটের উপর তক্তা বিছিয়ে দিয়ে স্থানীয় কবির পঞ্চায়েত, মোঃ ছগির ও তার ছেলে আল অমিন, হালিমসহ পাঁচজন মিলে চলাচলরত যানবাহন থেকে প্রকার ভেদে ১০টাকা থেকে ৩০টাকা পর্যন্ত আদায় করে আসছে। ওই স্লুইজগেট দিয়ে চলাচল করে মটরসাইকেল চালক মোঃ রুবেল খান জানান, কুয়াকাটা থেকে কাউয়ার চর, পায়রা বন্দরে পর্যটকসহ স্থানীয়দের নিয়ে প্রায় সময়ই তার আসা যাওয়া করতে হয়। যতবার তিনি যাতায়াত করেছেন তত বারই ১০টাকা করে দিতে হয়েছে। রুবেল আরও জানান, বিগত দুই মাসে দুই হাজারের অধিক টাকা চাঁদা দিতে হয়েছে তাকে। টাকা না দিলে যানবাহন নিয়ে যাতায়াত করতে দিচ্ছে না। শাহিন, রুবেল মোল্লা, আলমাছ ও রাশেল সহ এমন অভিযোগ করেছেন এধাধিক ভূক্তভোগিরা।
এবিষয়ে অভিযুক্ত আল আমিন বলেন, ৪০হাজার টাকা খরচ করে তারা তক্তা বিছিয়েছে। স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগ এর সমন্বয়ে তারা চার-পাঁচজন মিলে এ টাকা উত্তোলন করছে। লতাচাপলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আনছার উদ্দিন মোল্লা, মহিপুর থানা পুলিশ ও পাউবো কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি ক্রমেই তারা এ টাকা উত্তোলন করছে বলে আল আমিন জানান।
ঘটনাস্থলে সরেজমিনে গেলে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মোঃ ছিদ্দিকুর রহমান বিশ্বাস’র ভাই সাবেক ইউপি সদস্য ও দাদন ব্যবসায়ী মোঃ শাহ আলম বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, থানা পুলিশ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা টাকা উত্তোলনের বিষয়ে জানে। তারা কেউ কখনো এবিষয়ে প্রশ্ন করেনি। সেখানে সাংবাদকর্মীদের এটা দেখার বিষয় নয়। এসময় শাহ আলম বিশ্বাস এ টাকা উত্তোলনের বিষয়ে লেখালেখি করলে সাংবাদিকদের দেখে নেয়ার হুমকী দেন এবং টাকা উঠানো বন্ধ করার ক্ষমতা করো নেই বলেও তিনি জানান। ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইব্রাহিম ব্যাপারী বলেন, তার কাছে ওরা বলেছে চেয়ারম্যান টাকা উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে। চেয়ারম্যান অনুমতি দিলে সেখানে তার কি বলার আছে।
এ ব্যাপারে লতাচাপলী ইউপি চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা বলেন, কর্দমাক্ত সড়কে তক্তা বিছিয়ে চাঁদাবাজির অনুমতি তিনি কাউকে দেননি। আর এ বিষয়ে তার কিছুই জানা নেই। একই কথা বলেছেন উপকূলীয় বেড়ীবাধঁ উন্নয়ন প্রকল্প’র (সিইআইপি-১) প্রকৌশলী মোঃ মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, কে বা কারা তক্তা বিছিয়ে টাকা উত্তোলন করছে এটা তাদের দেখার বিষয় নয়।
এবিষয়ে মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘তক্তা বিছিয়ে সড়কে চাঁদাবাজি করছে এটা তার জানা নেই। মহিপুর থানা এলাকায় কোন চাঁদাবাজদের স্থান নেই। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কেএস/এমআর