সিন্ডিকেটের দখলে সাগরের গাতা-কুয়াকাটায় জিম্মি খুটা জেলেরা, হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা

প্রথম পাতা » কুয়াকাটা » সিন্ডিকেটের দখলে সাগরের গাতা-কুয়াকাটায় জিম্মি খুটা জেলেরা, হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা
বুধবার ● ২৬ আগস্ট ২০২০


কুয়াকাটায় খুটা জেলেদের জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা

কুয়াকাটা সাগরকন্যা অফিস॥

কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে গাতা (মাছ ধরার জন্য জাল ফেলার নির্দিষ্ট এলাকা) বিক্রি। বিগত এক দশক ধরে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সমুদ্রে জেলেদের  মাছ ধরার সীমানা নির্ধারণের নামে চলছে টাকা আদায়। অথচ এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন কিছুই জানেনা। ফলে বছরের পর বছর ধরে এ সিন্ডিকেটের কাছ জিম্মি হয়ে রয়েছে জেলার উপকূলীয় এলাকা কুয়াকাটা ও লতাচাপলীর অন্তত: পাঁচ শতাধিক খুটা জেলে (ইঞ্জন চালিত ছোট নৌকা)।
কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন জেলার উপক’লীয় এলাকার প্রায় অর্ধলক্ষাধিক জেলে। ট্রলারের লাইসেন্স আর মৎস্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত হওয়া ছাড়া অন্য কোন কাগজপত্র প্রয়োজন না হলেও বিগত দশ বছর ধরে সমুদ্রে মাছ ধরার সীমানা র্নিধারণ নিয়ে চলছে রমরমা বাণিজ্য। কুয়াকাটা ও লতাচাপলীর একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গাতা প্রতি এক মৌসুমের জন্য জেলে প্রতি দিতে হচ্ছে পাঁচ থেকে বিশ হাজার টাকা। এতে প্রতি মৌসুমে জেলেদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কয়েক লক্ষ টাকা। জেলেদের অভিযোগ, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা এই সিন্ডিকেটের কাছ থেকে গাতা না কিনে জাল পাতলে লুট করে নেয়া হচ্ছে মাছ, কেটে দেয়া হচ্ছে জাল। নিয়ে যাওয়া হয় ট্রলারের ইঞ্জিন। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেকে হয়েছেন শাররীক নির্যতনের শিকার।
সম্প্রতি (২৪ আগস্ট) ১৯টি খুটা জেলে নৌকার প্রায় অর্ধশতাধিক জেলে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সামনে এনিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় ভ’ক্তোভোগীরা জেলে সংগঠনের নামে চাঁদাবাজি, সমুদ্রে মাছ ধরার জন্য অতিরিক্ত টাকা আদায়, সীমানা নির্ধারন নিয়ে স্বজনপ্রীতি, সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে সমুদ্রে মাছ ধরতে না দেয়াসহ হয়রানির নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। পাশাপাশি আশার আলো জেলে ও মৎস্যজীবী সমিতির পৃস্টপোষকতায় কুয়াকাটার লেম্বুরচর থেকে কাউয়ারচর পর্যন্ত গড়ে ওঠা ছয়টি ইউনিট কমিটি বাতিলসহ সাগরে নির্বিঘেœ জাল ফেলে মাছ শিকারের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ভূক্তভোগী জেলে শহীদ মাঝি, আমির হোসেন মাঝি, মিলন মাঝি, নুর সাইদ মাঝি বলেন, ৫ নং জেলে ইউনিটের সভাপতি আ. রব হাওলাদার, সম্পাদক জাহাঙ্গীর, স্বপন, মতি, হালিম মাঝি ও কালামের চাঁদাবাজিসহ স্বেচ্চাচারিতায় ভরা মৌসুমেও তারা সাগরে গিয়ে মাছ শিকার করতে পারছেন না।
এলাকাবাসী সাদ্দাম মাল বলেন, প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপে সাগরের জলদস্যুতা থেকে জেলেরা মুক্তি পেলেও গাতা সিন্ডিকেটের নতুন কৌশলে নির্যাতন ও হয়রানি হতে হচ্ছে জেলেদের।
কুয়াকাটা-আলীপুর ট্রলার মালিক ও মৎস্য আড়ৎদার সমিতি সভাপতি আনসার উদ্দিন মোল্লা জেলেদের অভিযোগের বরাত দিয়ে সাগরকন্যাকে বলেন, সাগরের গাতা বিক্রির একটি অংশ কুয়াকাটার আশার আলো মৎস্যজীবি সমিতির নামে জমা হয়। এছাড়াও আশার আলো মৎস্যজীবি সমিতি প্রশাসনকে ম্যানেজের কথা বলে জেলেদের কাছ থেকে প্রতি বছর টাকা তুলেছে।
আশার আলো মৎস্যজীবি সমিতি সভাপতি নিজাম শেখ সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সাগরে জাল পাতা নিয়ে প্রায়শই দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনা ঘটত। তাই ৬টি ইউনিট কমিটির মাধ্যমে ১৪০ হাত পরপর খুটা বসিয়ে জাল পাতার জন্য দ্বায়িত্ব দেয়া হয় ইউনিট কমিটিকে। সীমানা র্নিধারনের সময় ট্রলার প্রতি প্রকারভেদে তেল খরচ বাবদ ৩’শ থেকে ৭’শ টাকা নেয়া হয়।
কুয়াকাটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাহমুদ হোসেন মোল্লা জানান, এ বিষয়ে কখনো কোন জেলে তাদের কাছে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পটুয়াখালী সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাগরকন্যাকে বলেন, জেলেদের মৌখিক বা লিখিত অভিযোগ পেলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সাথে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

জেআর/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:৩৯:৪৫ ● ৪৫৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ