আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
প্রভাবশালী ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী দরপত্র প্রক্রিয়া ও প্রাক্কলনে অনিয়ম করে দরপত্র আহবান করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দরপত্র বাতিলের দাবীতে মঙ্গলবার (২৫ আগস্ট) আমতলী উপজেলা পরিষদ সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। ওই মানববন্ধনে উপজেলার শতাধিক ঠিকাদার অংশগ্রহন করেছেন। ওই দরপত্র বাতিল করে সরেজমিনে সার্ভে করে পুনরায় প্রাক্কলন তৈরির দাবী জানিয়েছেন ঠিকাদাররা।
জানাগেছে, বরগুনা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর আইবিআরপি প্রকল্পের আওতায় ২৮ জুলাই ৮প্যাকেজে ৩৩ টি ব্রীজের দরপত্র আহবান করেন। ওই দরপত্রে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বলে দাবী করেন ঠিকাদাররা। বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী (এলজিইডি) ফোরকান আহম্মেদ খান মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী কিছু ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য প্রচলিত পদ্ধতিতে দরপত্র আহবান করেনি। নির্বাহী প্রকৌশলী ওই দরপত্রে এমন শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যাতে সাধারণ ঠিকাদাররা কাজ না পায়। এছাড়া প্রচলিত পদ্ধতিতে একটি কাজের জন্য একটি প্যাকেজ তৈরির নিয়ম থাকলেও নির্বাহী প্রকৌশলী ওই প্রকল্পের ৩৩টি কাজকে ৮টি প্যাকেজ করে দরপত্র আহবান করেছেন যা নিয়ম বর্হিভুত। ওই দরপত্রে নির্বাহী প্রকৌশলী প্রভাবশালী ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য শর্ত যুক্ত করেছেন। ওই শর্তানুসারে সাধারণ ঠিকাদারের কাজ পাওয়ার সুযোগ নেই বলে দাবী করেন ঠিকাদারারা। অভিযোগ রয়েছে বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী ওই ৩৩ টি ব্রীজ এলাকা পরিদর্শন না করেই প্রভাবশালী ঠিকাদারদের ইচ্ছা মাফিক প্রাক্কলন তৈরি করে দরপত্র আহবান করেছেন। ওই ৩৩ টি ব্রীজের প্রাক্কলন তৈরিতে রয়েছে বিভিন্ন অনিয়ম। প্রাক্কলনে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের চেয়ে দ্বিগুন অর্থ বরাদ্দ দেয়া, জনস্বাথের্ ব্রীজ নির্মাণ না করা ও ব্রীজের এ্যাপ্রোচে প্রয়োজনের তুলনায় চারগুন অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রাক্কলন তৈরিতে রয়েছে প্রচুর অনিয়ম। ৩৩টি ব্রীজের মধ্যে ৮ টি ব্রীজ তালতলী উপজেলায় এবং ২৫ টি ব্রীজ আমতলী উপজেলায়। ওই দরপত্রের নোটিশে উল্লেখ আছে হলদিয়া ইউনিয়নের বাঁশবুনিয়া খালের দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় সামনে ব্রীজ। অপর দিকে একই স্কুলের সামনে একই ব্রীজ নাশবুনিয়া খালে দেখানো হয়েছে। দৃশ্যত নাশবুনিয়া নামে কোন খাল নেই। একই ইউনিয়নের তুজিরবাজার ও রামজির বাজারে নামক স্থান দুইটি ব্রীজ দেখানো হয়েছে। দরপত্রে ওই ব্রীজ সংস্কারের কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু তুজির বাজার ও রামজির বাজারে কোন ব্রীজ নেই। ওই দুই বাজারে রয়েছে বাঁশের সাকো। এছাড়া গুলিশাখালী ইউনিয়নের একই সড়কে ৬টি ব্রীজ দেখানো হয়েছে। যার কোন ভিত্তি নেই। অভিযোগ রয়েছে বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী অধিদপ্তরের কোন সার্ভেয়ার সরেজমিনে পরির্দশন না করেই ৩৩ টি ব্রীজের প্রাক্কলন তৈরি করেছেন। ওই প্রাক্কলনে প্রত্যেকটি ব্রীজকে দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীরতায় বেশী দেখানো হয়েছে। যাকে প্রভাবশালী ঠিকাদারদের অর্থ আত্মসাতে সুবিধা হয়। এ সকল অনিয়মের প্রতিবাদ ও দরপত্র বাতিল করে সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক প্রাক্কলন তৈরির আহবান জানিয়ে মঙ্গলবার আমতলী উপজেলা পরিষদ সড়কে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করা হয়।
উপজেলার প্রায় শতাধিক ঠিকাদার মানববন্ধনে অংশগ্রহন করেন। সকাল ১১ টায় উপজেলা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি জিএম ওসমানী হাসানের সভাপতিত্বে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক শাহজাহান করিব, উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোঃ মোয়াজ্জেম খান, ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার নয়ন মৃধা, ঠিকাদার জেলা যুবলীগ নেতা মোঃ সোহেল গাজী, ঠিকাদার পান্নু মৃধা, ফারুক গাজী, মনিরুল ইসলাম খান, কামরুল ইসলাম, মোঃ আসাদুজ্জামান মিন্টু মল্লিক ও মোঃ হুমায়ূন কবির প্রমুখ। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বরগুনা স্থানীয় সরকার নির্বাহী প্রকৌশলী ফোরকান আহম্মেদ খান মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রভাবশালী ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন, যাতে অন্য কোন ঠিকাদার দরপত্রে অংশগ্রহন করতে না পারে। তারা আরো বলেন, ৩৩টি ব্রীজ নির্মাণেই নির্বাহী প্রকৌশলী তার পছন্দের ঠিকাদারের ইচ্ছামত সরেজমিনে সার্ভে না করে প্রাক্কলন তৈরি করেছেন। তারা ওই ৩৩ টি ব্রীজের কাজের দরপত্র বাতিল পূর্বক পুনরায় সরেজিমনে সার্ভে করে প্রাক্কলন তৈরি আহবান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে বরগুনা নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফোরকান আহম্মেদ খানের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এমএইচকে/এমআর