আমতলীতে গ্যাংওয়ে তলিয়ে ফেরি পারাপার বন্ধ

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীতে গ্যাংওয়ে তলিয়ে ফেরি পারাপার বন্ধ
শুক্রবার ● ২১ আগস্ট ২০২০


আমতলীতে গ্যাংওয়ে তলিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ

আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

অমবস্যার জোঁর প্রভাবে আমতলী ও তালতলীর উপকুলীয় ৩০ গ্রাম জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে তিন ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। চরাঞ্চলের শতাধিক মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান  ঘের মালিকরা।
জানাগেছে, অমবস্যার জোঁর প্রভাবে পায়রা নদীতে বিপদ সীমার উপর ৬০ সেন্টি মিটার জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকুলীয় আমতলী, তালতলী উপজেলা শহর, গাজীপুর বন্দর, চুনাখালী বাজার, আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার, ফকিরহাটসহ চর ও নি¤œাঞ্চলের ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরের বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ী তলিয়ে গেছে। চরাঞ্চলের অন্তত শতাধিক মাছের ঘের তলিয়ে যাওয়ায় অন্তত দুই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ঘের মালিকরা। ঘরবাড়ী তলিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষ কষ্টে জীবনযাপন করছে। এদিকে আমতলী পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত তিন ঘন্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। গ্যাংওয়ে তলিয়ে থাকার মানুষ  বক্ষ পরিমান পানি পেরিয়ে সড়কে উঠতে হয়েছে। তালতলী তেতুঁলবাড়িয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। ওই বাঁধ রক্ষায় বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বালুর বস্তা দিচ্ছেন বলে জানান স্থানীয়রা। আমতলী ও তালতলী দুই উপজেলার অন্তত ৫০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, আমতলী উপজেলার ঘোপখালী, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, ফেরীঘাট, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমুয়ার চর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, আঙ্গুরকাটা, গুলিশাখালী, হরিদ্রবাড়িয়া, গাজীপুর বন্দর, চুনাখালী বাজার, আড়পাঙ্গাশিয়া বাজার ও তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ফকিরহাট, সোনাকাটা, নিদ্রাসকিনা, তেতুঁলবাড়িয়া, আশারচর, নলবুনিয়া, তালুকদারপাড়া, চরপাড়া, গাবতলী, মৌপাড়া, ছোটবগী, জয়ালভাঙ্গা, মরানিদ্রা ও পচাঁকোড়ালিয়াসহ চর ও নি¤œাঞ্চলের ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ সকল এলাকার মানুষের ঘর বাড়ী তলিয়ে যাওয়ায় কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাহিরের গাবতলী, চরপাড়া, ছোটবগী, পশ্চিম ঘটখালী, দক্ষিণ-পশ্চিম আমতলী ও উত্তর টিয়াখালী আবাসনসহ ১০ টি আবাসন পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই আবাসনের লোকজন গত চার দিন ধরে আনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১ টার সরেজমিনে পায়রা ফেরিঘাট ঘুরে দেখাগেছে, পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে গেছে। মানুষ বক্ষ পরিমান পানি পেরিয়ে সড়কে উঠছে। গ্যাংওয়ের পানিতে গাড়ী আটকে গেছে। বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত তিন দিন ধরেই এমন এমন অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানান পায়রা নদীর ফেরি কর্তৃপক্ষ।
আমতলীর গাজীপুর বন্দরের সোহেল রানা  বলেন, অমাবস্যার জোঁতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে গাজীপুর বন্দর তলিয়ে গেছে। শহর রক্ষা বাঁধ না থাকায় বর্ষা মৌসুমে বন্দরের এমন অবস্থা হয়। গাজীপুর বন্দর রক্ষায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের দাবী জানাই।
তালতলীর তেতুঁলবাড়ীয়া গামের মোঃ জসিম হাওলাদার বলেন, জোয়ারের পানিতে তেতুঁলবাড়িয়া বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে যাচ্ছে। ওই বাঁধ রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন বালুর বস্তা দিয়েছে।
আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, জোয়ারের পানিতে বাজার তলিয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ করে দিয়েছে।
তালতলীর খোট্টার চরের ঘের মালিক মোঃ রাসেল হাওলাদার বলেন, জোয়ারের পানিতে চরের অন্তত শতাধিক ঘের তলিয়ে গেছে। তিনি আরো বলেন, ঘের তলিয়ে মাছে ভেসে গেছে। এতে আমার প্রায় ছয় লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
পায়রা ফেরিঘাটের পরিচালক মোঃ ছালাম খাঁন বলেন, জোয়ারের পানিতে ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। গ্যাংওয়ে পানিতে তলিয়ে থাকায় গাড়ী ও মানুষের সড়কে উঠতে পারছে না। তাই ফেরি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, গত তিন দিন জোয়ারের সময় অন্তত তিন ঘন্টা ফেরি বন্ধ থাকে।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম বলেন, জোয়ারের পানিতে চর ও নি¤œাঞ্চলের ঘর বাড়ী তলিয়ে গেছে কিন্তু কোন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে ভিতরে পানি প্রবেশ করেনি। তিনি আরো বলেন ঝুকিপূর্ণ বাধে বালুর বস্তা ফেলে রক্ষার চেষ্টা চলছে।

এমএইচকে/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:৫৩:২৮ ● ২৬০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ