ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে আইনি বিষয়, এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কারাগারে এক বছর অতিবাহিতের দিনে শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারি) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনীতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়ার এক বছরের কারাবাসের ব্যাপারে বিএনপিকে জিজ্ঞেস করুন। এক বছরের আইনি লড়াইয়ে কেন তারা সফল হয়নি, এক বছরে কেন আন্দোলন করে মুক্ত করতে পারেনি। এটা তাদের বিষয়, এটা আমাদের কোনো বিষয় নয়। আমরা খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিইনি। তাঁকে কারাগারে নিয়েছেন আদালত। তাঁকে মুক্তিও দিতে পারেন আদালত। এটা কোনো রাজনীতিক ইস্যু নয়, যোগ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
বিগত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদ- প্রদানের মাধ্যমে আদালত থেকে কারাগারে পাঠানো হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। রাজধানীর পুরানো ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়েছে। এরপর এই মামলার আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট তাঁর সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন। এই মামলা ছাড়াও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় নিম্ন আদালত খালেদা জিয়াকে সাত বছর কারাদ- দেন। পরবর্তী সময়ে এসব মামলায় হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পেলেও কুমিল্লার একটি নাশকতার মাধ্যমে হত্যা মামলায় তাঁর এখনো জামিন হয়নি। বিএনপির এখন মাথা ঠিক নেই মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, না থাকাই স্বাভাবিক। কারণ, তাদের এত বড় বাঘা বাঘা নেতা শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছে। কাজেই তাদের এখন করার কী আছে। একবার মনে করেছিল, বিদেশ থেকে সাড়া পাবে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য দেশে দেশে কত চিঠি তারা লিখেছে। কোনো কাজ হয়নি। এখন দুনিয়ার সব গণতান্ত্রিক দেশ, আজকে বিশ্ব শেখ হাসিনার সরকারের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে এবং এই সরকারকে প্রশংসা করেছে, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপির এই মুহূর্তে আর কিছু করণীয় নেই, যোগ করেন ওবায়দুল কাদের।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগ যেন জয়ী হতে পারে সে বিষয়টি তার দল গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বলে জানান তিনি। জাতীয় নির্বাচনের মতো ডাকসুর প্যানেল দেওয়ার ক্ষেত্রেও ছাত্রলীগ জোটের পথে হাঁটতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের এই ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের সাবেক সভাপতি কাদের। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চারজন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছি, তারা ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি অবজার্ভ করছে। আমরা এই নির্বাচনকে সিরিয়াসলি নিয়েছি, গণতান্ত্রিকভাবে জয়লাভ করব বলে আশা করছি। প্রায় তিন দশক পর আগামি ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলো। তবে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে ভোটকেন্দ্র করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে আপত্তি রয়েছে ছাত্রদল ও বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর। ক্যাম্পাসে সব সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করতে নির্বাচন পেছানোরও দাবি জানিয়েছে বিএনপির সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যাঁরা ১৯৯০ সালে ডাকসুর সর্বশেষ নির্বাচনে জয়ী হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশে ছাত্রলীগ থেকে একবারই ডাকসুতে ভিপি নির্বাচিত হয়েছিল। ১৯৮৯ সালে ওই নির্বাচনে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্যানেল থেকে ভিপি পদে জয়ী হয়েছিলেন ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ। ওই প্যানেলে জাসদ ছাত্রলীগ থেকে মুশতাক আহমেদ জিএস এবং ছাত্র ইউনিয়ন থেকে নাসির-উদ-দৌজা এজিএস নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভোটের তারিখ হওয়ার পর এবারও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে প্যানেল দেওয়ার কথা বলছেন ছাত্রলীগের নেতারা; যদিও এখনকার ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে আগের সব সংগঠন নেই।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় রাজনীতিতে যেভাবে পোলারাইজেশন হয়, তার প্রভাবটা ছাত্র রাজনীতিতেও পড়ে। যাদের সামর্থ্য নেই, তারা হয়তো এত বেশি সুবিধা নিতে পারে না। যাদের সামর্থ্য আছে নির্বাচন করার মত, পোলারাইজেশনটা তারা করবে, তারা চেষ্টা করবে এখান থেকে একটা ফায়দা তোলা যায় কি না। ডাকসু নির্বাচনে প্যানেল নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষরা যদি একটা জোট করতে চায়, এখানে আমাদের একটা জোটের কথা ভাবতে হবে। সমীকরণটা যেভাবে হবে, সেই মেরুকরণ অনুযায়ী আমরা চিন্তা ভাবনা করব। অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান মিয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া ও কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এফএন/এমআর