ঢাকা সাগরকন্যা অফিস ॥
আজ শনিবার শেষ হচ্ছে ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। এর আগে গত ৯ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আয়োজিত বাণিজ্যমেলার উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এরপর তিনি মাসব্যাপী আয়োজিত এ মেলার বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অন্যুায়ী, মাসব্যাপী এ মেলার পর্দা নামছে আজ শনিবার।
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় শেষ মুহূর্তে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায় বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণে। এদিন সকাল থেকে মেলার প্রতিটি কাউন্টারে দেখা যায় দর্শনার্থীদের দীর্ঘ লাইন। সারিবদ্ধভাবে তারা মেলার ভেতরে প্রবেশ করেন। প্রতিটি স্টলেও ছিল উপচেপড়া ভিড়। ক্রেতার আগমন বেশি হওতায় হিমশিম খেতে হয় বিক্রেতাদের। শুক্রবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে চলৎ ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। মেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, শেষ সময়ে কেনাকাটা করতে রাজধানীবাসী ভিড় জমান মেলায়। এদিন সকাল থেকেই মেলাপ্রাঙ্গণে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলাতে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই।
অন্যদিকে খাবারের মান আর মূল্য নিয়ে বিতর্ক থাকায় শেষ সময়েও বিক্রি ছিল না হোটেলগুলোতে। নান্না, হাজীর বিরিয়ানির স্টলগুলো ফাঁকাই পড়ে থাকতে দেখা গেছে। নান্না বিরিয়ানি অ্যান্ড কাবাব হাউজের পরিচালক শান্ত ইসলাম বলেন, প্রথমদিকে অনেক স্টল মূল্য নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেছে। এর প্রভাব তাই শেষদিকেও আছে। এবারের ব্যবসা পুরোটা লোকসানে চলেছে। মেলার গেট ও বিভিন্ন স্টল প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রবেশের জন্য টিকিটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ টাকা এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২০ টাকা। এবারই প্রথম মেলার টিকিট অনলাইনে পাওয়া যায়।
মেলায় প্যাভিলিয়ন, মিনি-প্যাভিলিয়ন, রেস্তোরাঁ ও স্টলের মোট সংখ্যা ৬০৫টি। এর মধ্যে রয়েছে প্যাভিলিয়ন ১১০টি, মিনি-প্যাভিলিয়ন ৮৩টি ও রেস্তোরাঁসহ অন্যান্য স্টল ৪১২টি। এবার বাংলাদেশ ছাড়াও ২৫টি দেশের ৫২টি প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিচ্ছে। দেশগুলো হলো থাইল্যান্ড, ইরান, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, পাকিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর, মরিশাস, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। ২৪তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ক্রেতাদের অভিযোগ আর অজুহাত ছিলো বেশ খানিকটা কম। মেলায় রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কর্মকর্তাদের সামনেই প্রতিনিয়ত বসছেন হকার, ভিক্ষুক। গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করেও মেলা প্রাঙ্গণ হকারমুক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অন্যদিকে ভোক্তা পর্যায়ে অভিযোগ ছিলো হাতেগোনা।
এদিকে, মেলার ৩০ দিনে ভোক্তা অধিকার অধিদফতরে অভিযোগ ছিলো মাত্র ৩৭টি। এর মধ্যে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। বাকিগুলো সমঝোতা আর প্রমাণ না থাকায় শুধু নথিবদ্ধ করা হয়েছে। আর অধিদফতরের নিজ উদ্যোগে মোট ৩০ দিনে ৪১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার ভিআইপি গেট দিয়ে প্রবেশ করে একটু এগোতেই হাতের বামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অস্থায়ী কার্যালয়। মেলায় বিভিন্ন প্রতারণায় শিকার ভোক্তারা এখানে এসে অভিযোগ করতে পারেন। তবে এবারের মেলার ৩০তম দিন পর্যন্ত ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে মাত্র ৩৭টি অভিযোগ জমা পড়েছে।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের মেলায় অভিযোগের সংখ্যা তুলনামূলক কম। হয়তো ভোক্তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন না বলেই তাদের অভিযোগের সংখ্যা কম। অথবা তারা এখনও সচেতন না হওয়ায় কোনো অভিযোগ করছেন না। শুক্রবার পর্যন্ত মোট অভিযোগের সংখ্যা ৩৭টি। এর মধ্যে জরিমানা করা হয়েছে ৭টি প্রতিষ্ঠানকে। ৫টি অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বাকি অভিযোগ উভয়পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেওয়া হয়েছে। জরিমানা হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মধ্যে মূল্য বেশি রাখায় রংপুর মেটালকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ইটালিয়ানো পণ্য না পাওয়ায় ইটালিয়ানো প্যাভিলিয়নকে ৩০ হাজার টাকা, ক্যাশ ব্যাক না দেওয়ায় কাসিক্যাল হোমটেক্সকে ১০ হাজার টাকা, মূল্য বেশি রাখায় শাহজাদা স্টোরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২৫ জানুয়ারি খাবারের মূল্য বেশি রাখায় হাজীর বিরিয়ানিকে ১০ হাজার টাকা, মূল্য তালিকা না থাকায় নান্না বিরিয়ানি ও কাবাবকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ছাড়া একইদিন ১টি পণ্য কিনে অন্যটি ফ্রি না দেওয়ায় কানিজ এন্টারপ্রাইজকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আর ভোক্তা অধিকার অধিদফতরের নিজ উদ্যোগে মোট ৩০ দিনে ৪১টি অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এ সময় মোট ২ লাখ ৯৯ টাকা টাকা জরিমানা করেছে। জোসনা আক্তার নামের এক দর্শনার্থী বলেন, এবার পণ্যের দাম কিছুটা বেশি হলেও তালিকা টাঙানো আছে স্টলে। তবে খাবারের দাম নিয়ে আপত্তি আছে। যদিও তারা মূল্য তালিকা রাখছে। তার মতে, অনেকেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তবে সচেতন না হওয়ায় অনেক ভোক্তা অভিযোগ করছেন না। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (গবেষণা) প্রণব কুমার প্রামাণিক বলেন, আমরা শুধু ভোক্তার অভিযোগের অপেক্ষায় থাকছি না। নিজেরাও নিয়মিত মেলায় ঘুরে দেখছি। সন্দেহ হলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমরা ভোক্তার অধিকার আদায়ে মেলার শেষ দিন পর্যন্ত আছি।
এফএন/কেএস