প্রতিবেশী দেশ থেকে সাশ্রয়ী দামে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে জোর দিচ্ছে সরকার

প্রথম পাতা » জাতীয় » প্রতিবেশী দেশ থেকে সাশ্রয়ী দামে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে জোর দিচ্ছে সরকার
শুক্রবার ● ৮ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


প্রতিবেশী দেশ থেকে সাশ্রয়ী দামে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে জোর দিচ্ছে সরকার

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

প্রতিবেশী দেশ থেকে সাশ্রয়ী দামে জলবিদ্যুৎ আমদানিতে জোর দিচ্ছে সরকার। ওই লক্ষ্যে সরকারের নীতি নির্ধারণী মহল থেকে প্রতিবেশী দেশের নবায়নযোগ্যা জ্বালানির উৎসে বাংলাদেশের বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর বিনিয়োগের মাধ্যমেই ওই বিদ্যুৎ দেশে আনার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হচ্ছে। কারণ জলবিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদন হওয়ায় সেক্ষেত্রে ঋণপ্রাপ্তি সহজ। সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ অনেক দিন থেকেই প্রতিবেশী দেশে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে নিজেদের আগ্রহের বিষয়টি প্রতিবেশীদের বোঝানোর চেষ্টা করছে। পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যানে ২০৪১ সালের মধ্যে ৯ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিদ্যুৎ উৎপাদনের উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশে বিশেষ করে নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে এদেশে আরো বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ আমদানি করা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নেপালে ৩০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও ওই দেশটি বর্তমানে সামান্য পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। সেখানে ভারতের বিভিন্ন কোম্পানি কয়েকটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। তার বাইরে ভুটানেও বিপুল পরিমাণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ভুটানে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প করার জন্য একটি এমওইউ সই হবে। বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তাছাড়া গত সেপ্টেম্বরের কাঠমান্ডুতে নেপাল-বাংলাদেশ প্রথম স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক হয়। নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে প্রথম বৈঠক হয়। গত ১০ আগস্ট নেপাল এবং বাংলাদেশের মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সহায়তা সম্প্রসারণে এমওইউটি সই হয়। সাধারণত দুই দেশের সহায়তা সম্প্রসারণে এর আগে যে সকল স্টিয়ারিং কমিটি এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করা হয়েছে তারা বছরে দুইবার এ ধরনের বৈঠকে মিলিত হয়। ওই হিসেবে ফেব্রুয়ারিতে আরো একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আর সেটি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকাতে। পাশাপাশি ভারত প্রতিবেশী দেশ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে নিজেদের জমি ব্যবহারের সুযোগ নিয়ে গত ডিসেম্বরে নীতি পরিবর্তন করেছে। ফলে সেখান থেকে দেশটির গ্রিড লাইন ব্যবহার করে অথবা নিজেরা গ্রিড লাইন করে বিদ্যুৎ আনা যাবে।
সূত্র জানায়, সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এদেশে জমির সঙ্কট রয়েছে। সরকার বিভিন্ন চরে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের চেষ্টা করছে। তার বাইরে সম্প্রতি বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের দ্বার উন্মোচন হতে যাচ্ছে। দেশের বেশ কয়েকটি এলাকায় বছরব্যাপী উইন্ড ম্যাপিং বা বায়ু মানচিত্র করে দেখা গেছে সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৫ মিটার প্রতি সেকেন্ড বায়ুর গতি রয়েছে। যা বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশে আর জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কোন উৎস নেই। সমতল ভূমি হওয়ার পাশাপাশি দেশের মধ্যে নদীর উৎস না থাকার কারণে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব নয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎসতেই বড় আশার আলো দেখছে বিদ্যুত বিভাগ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিবেশী দেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে নেপাল এবং ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকার এক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। ওই লক্ষ্যে ইতিমধ্যে নেপাল এবং বাংলাদেশের দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি কমিটি নেপালের কোথায় কিভাবে কেন্দ্র করা যায় তা খতিয়ে দেখছে, অন্য কমিটি গ্রিড লাইন নির্মাণের বিষয়টি দেখছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বৈঠকে ওই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তারপর প্রকল্প তৈরি করে বিনিয়োগ করা হবে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জানান, এখন প্রতিবেশী দেশ থেকে সাশ্রয়ী দামে জলবিদ্যুৎ আমদানির উপর জোর দেয়া হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে এদেশের উৎস খুবই সীমিত। সোলার এবং বায়ু বিদ্যুৎ ছাড়া অন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ করে ওই বিদ্যুৎ আনতে পারলে দেশ লাভবান হবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১০:২১:৪৪ ● ৫৪৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ