চট্টগ্রাম সাগরকন্যা অফিস॥
দীর্ঘদিন চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা শতাধিক কনটেইনার আমদানি পণ্য ধ্বসের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওসব কনটেইনাওে মেয়াদোত্তীর্ণ, পচে-গলে নষ্ট হওয়া এবং আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের মধ্যে আছে আপেল, কমলা ও নুডলস, পোল্ট্রি শিল্পের খাবার এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য। ধ্বংস করার জন্য প্রাথমিকভাবে অন্তত ১০৮টি কনটেইনার চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলো আমদানি হয়ে ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে ছিল। কিন্তু বিভিন্ন জটিলতার কারণে সেগুলো বন্দর থেকে ছাড় পায়নি। আমদানিকারক পণ্য এনে বছরের পর বছর বন্দরেই ফেলে রেখেছে। ফলে কনটেইনার আটকে রাখার মাসুল তো পাওয়া যায়নি, বরং ব্যবসায়ীদের উল্টো পণ্য ধ্বংসকাজের ব্যয় বহন করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামম বন্দর থেকে কনটেইনার ভর্তি ওসব পণ্য হালিশহরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আবর্জনাগারে নিয়ে ধ্বংস করার কাজ শুরু করা হবে। আর ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তা চলবে। ইতিমধ্যে ধ্বংসকাজের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সরকারি সংস্থার অনুমোদন সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম কাস্টমস সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিগত ২০১৭ সালে বড় আকারে পণ্য ধ্বংস করার কাজ করেছিল। তখন পণ্যের বেশির ভাগ ছিল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কনটেইনারে আনা আমদানি পণ্য। দুই বছর পর আবারো বড় ধরনের পণ্য ধ্বংস করার কাজ শুরু করছে কাস্টমস। তবে এবার বিভিন্ন ফলজাতীয় পণ্য ছাড়াও শুকনো ও রাসায়নিক পণ্য আছে। ধ্বংস করতে যাওয়া কনটেইনারগুলোর মধ্যে মেডিটারিনান শিপিং কম্পানির ৪২টি পণ্যভর্তি কনটেইনার রয়েছে। যেগুলো ২০১০ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বন্দরে এসেছিল, কিন্তু ছাড় হয়নি। ওসব পণ্যের মধ্যে আছে পোল্ট্রি ফিড, নুডলস, আপেল, কমলা, জিংক সালফেট অন্যতম।
সূত্র জানায়, নিয়মানুযায়ী আমদানীকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। ওই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ওই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার ওই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। তাতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে ওসব পণ্যের স্তূপ পড়ে থাকে। নিলামে তোলার পর সর্বোচ্চ দরদাতাকে আমদানি ফল দেয়া হয়, তবে শর্ত থাকে ফরমালিন পরীক্ষা, কোয়ারেনটাইন বা উদ্ভিদ সংঘনিরোধ এবং আনবিক শক্তি কমিশনের পক্ষ থেকে খাওয়ার উপযোগী সনদ থাকতে হবে। তাছাড়া কনটেইনারের ভেতর অন্য কোনো পণ্য থাকলে তা কায়িক পরীক্ষার পরই শুধু ছাড় দেয়া হবে। নিলামে তোলার পর যেসব কনটেইনারের পণ্য খাওয়ার অনুপযোগী সনদ পায় সেগুলো শুধু ধ্বংস করে চট্টগ্রাম কাস্টমস।
সূত্র আরো জানায়, কনটেইনার যত বেশি মুভমেন্ট হবে ততো বেশি আয় হয়। কিন্তু পণ্য খালাস না হওয়ায় একটি কনটেইনার বছরের পর বছর বন্দরে কিংবা অফডকে পড়ে থাকল। তাতে প্রতিদিন ১৫ ডলার হিসাব করলে অনেক টাকা। কিন্তু ওই টাকা পাওয়া যায়নি। এমনকি এখন কনটেইনার থেকে পণ্য ধ্বংস করে দেখা যাবে কনটেইনারটি আর ব্যবহার করা যাচ্ছে না। অথবা গেলেও সেগুলো বিদেশে পাঠিয়ে টাকা ব্যয় করে আবার ব্যবহার উপযোগী করতে হবে। ধ্বংসযোগ্য ১০৮টি কনটেইনারের তালিকায় অনেক কনটেইনার আছে বিশ্বের শীর্ষ শিপিং লাইন মায়ের্কসের। তাদের কনটেইনারগুলো বছরের পর বছর বন্দর ও বেসরকারি অফডকে পড়ে আছে। নিলামে উপযোগী অন্তত ৮০০ পণ্যভর্তি কনটেইনারের একটি তালিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কয়টি ধ্বংস তালিকায় আছে তা এখনো জানে না ওই প্রতিষ্ঠান। পড়ে থাকা ওসব কনটেইনারের কারণে প্রতিষ্ঠানটি খুবই বিপাকে আছে। কারণ আমদানিকারককে নোটিশ করার পরও সেগুলো বন্দর থেকে ছাড় হয় না। তাই নিলামকাজ নিয়মিত ও দ্রুত করার কোনো বিকল্প নেই।
এদিকে এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম কাস্টমস উপ-কমিশনার তপন চন্দ্র দে জানান, প্রাথমিকভাবে ১০৮টি কনটেইনারে থাকা পণ্য ধ্বংস করার জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে সেগুলো ধ্বংস করার কথা ছিল, কিন্তু নির্বাচনের কারণে সম্ভব হয়নি। তারপর ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে হালিশহরে নিয়ে গিয়ে ধ্বংস করার কাজ শুরু করা হবে।
এফএন/এমআর