আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনা ও পটুয়াখালী আন্তজেলা পরিষদ আমতলী-গলাচিপা উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়গাবুয়া খেয়াঘাটে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচগুন ভাড়া আদায় করছে। আন্তজেলা প্রশাসনের নজরদারী না থাকায় ইচ্ছামাফিক ভাড়া আদায় করছেন ইজারাদারের লোকজন। ভাড়া বেশী নেয়ার প্রতিবাদ করলেই তার উপর নেমে আসে ইজারাদার মোঃ হুমায়ূন ঢালীর লোকজনের অত্যাচার। দ্রুত এ খেয়াঘাটের ভাড়া কমানোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
জানাগেছে, বরগুনা ও পটুয়াখালী আন্তজেলা পরিষদ আমতলী-গলাচিপা উপজেলার সীমান্তবর্তী বড়গাবুয়া খেয়াঘাট গত ৭ জুন দরপত্র আহবান করে বিভাগীয় কমিশনার। ১২ লক্ষ ২৪ হাজার টাকায় ওই খেয়াঘাটের ইজারা পায় মোঃ হুমায়ূন ঢালী। দেড়’শ মিটার নদীর ওই খেয়াঘাট দিয়ে প্রতিদিন দুই উপজেলার এক থেকে দের হাজার মানুষ পাড়াপাড় হয়। গত ১ জুলাই থেকে খেয়াঘাটের ভাড়া আদায় শুরু করেন ইজারাদার হুুমায়ুন ঢালী ও তার লোকজন। শুরুতেই সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে পাঁচগুন ভাড়া আদায় করছেন তারা। সরকার কর্তৃক নির্ধানিত খেয়া পাড়াপাড়ে জনপ্রতি মানুষ ভাড়া ২ টাকা, মোটর সাইকেল ১০ টাকা, গবাদিপশু ৫ টাকা ও কৃষিপন্য মণপ্রতি ২ টাকা। কিন্তু ইজারাদার মানুষ জনপ্রতি ১০ টাকা, মোটর সাইকেল ৫০ টাকা, গবাদিপশুর মধ্যে গরু ৫০ টাকা, ছাগল ২০ টাকা ও কৃষিপন্য মণপ্রতি ১০ টাকা আদায় করছে। প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের অজুহাত দেখিয়ে ইজারাদার ও তার লোকজন পাঁচগুন ভাড়া আদায় করছে।এতে পাড়াপাড়রত মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ভাড়া বেশী আদায়ের প্রতিবাদ করলেই তার উপর নেমে আসে ইজারাদারের লোকজনের অত্যাচার। খেয়াঘাটে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়া আদায় মুল্য তালিকার সাইনবোর্ড টানানো নেই। ইজারাদারের লোকজন তাদের ইচ্ছা মাফিক ভাড়া আদায় করছে। দ্রুত তদন্তপূর্বক ইজারাদার ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করে ভাড়া কমানোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এছাড়াও প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসে ট্রলারে যাত্রী বোঝাই করে খেয়া পাড় করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।
শনিবার (১১ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, ইজারাদার হুমায়ূন ঢালীর পক্ষে ভাড়া আদায়কারী জসিম আকন ও আনোয়ার পথ আটকে মানুষ প্রতি ১০ টাকা, মোটর সাইকেল প্রতি ৫০ টাকা ও কৃষিপন্য প্রতি ১০ টাকা আদায় করছে। ওইঘাটে সরকার কর্তৃক ভাড়া আদায় মূল্য তালিকার সাইনবোর্ড টানানো নেই।
খেয়া পাড়াপাড়রত আমতলী উপজেলার তালুকদার বাজারের হেলাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতোটুকু নদীতে ১০ টাকা ভাড়া আদায় এটা যথারীতি অত্যাচার। তিনি আরো বলেন, আমি বেশী ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করেছিলাম ইজারাদারের লোকজন আমার সাথে খারাপ আচরণ করেছে।
গলাচিয়া উপজেলার আমেনা বেগম ও গোলখালী গ্রামের মোসাঃ বেগম বলেন, এতোটুকু নদীতে কোন মতেই ১০ টাকা ভাড়া হয়না। কিন্তু খেয়াঘাটের লোকজন পথ আটকে ভাড়া আদায় করছে। ভাড়া না দিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। দ্রুত খেয়াঘাটের ভাড়া কমানোর দাবী জানাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মোটর সাইকেল চালক বলেন, এতোটুকু খেয়া পাড়াপাড়ে ৫০ টাকা দিতে হয়। এ যেন আজব রাজ্যে বসবাস করছি। কিন্তু এ বিষয়ে প্রশাসনকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছি না।
গলাচিপা উপজেলার বাউরিয়া গ্রামের মোতালেব সিকদার অভিযোগ করে বলেন, গত পরশু খেয়াঘাটে বেশী টাকা আদায়ের প্রতিবাদ করলে ইজারাদারের লোকজন আমাকে লাঞ্চিত করেছে। আমি এ বিষয়টি গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি।
ইজারাদার হুমায়ূন ঢালীর পক্ষে ভাড়া আদায়কারী জসিম আকন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে বেশী ভাড়া আদায় করছি।
ইজারাদার মোঃ হুমায়ূন ঢালী বেশী ভাড়া আদায় করার কথা অস্বীকার করে বলেন, আমার লোকজন অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে থাকলে তা সুদরে নেয়া হবে।
গলাচিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ মোঃ রফিকুল ইসলাম বড়গাবুয়া খেয়াঘাটের অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, ইজারাদার ও তার লোকজন খেয়া পাড়াপাড়ের মানুষের সাথে ব্যাপক অত্যাচারের অভিযোগ পেয়েছি। ইজারাদারের অনিয়ম ও অত্যাচার প্রতিহত করতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।
বরিশাল অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার আবদুর রাজ্জাক মুঠোফোনে বলেন, এটা আন্তজেলা খেয়াঘাট। বরগুনা ও পটুয়াখালী জেলা প্রশাসকদের সাথে আলোচনা করে ওই খেয়াঘাটে ভাড়া আদায় মূল্যে তালিকার সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, দুই জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন।
এমএইচকে/এমআর