কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
কলাপাড়া উপজেলার ১৯টি আয়রণ ব্রিজ খুবই ঝুকিপূর্ণ। এর মধ্যে তিনটি বিধ্বস্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষ এ কারণে চরম দূর্ভোগে পড়েছেন। অধিকাংশ ব্রিজের আয়রণ স্ট্রাকচার থেকে শুরু কওে সকল ধরনের স্লাব ভেঙ্গে গেছে। গাছ, তক্তা, কলাগাছ দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে মানুষ চরম ঝুঁকি নিয়ে আয়রণ ব্রিজগুলো ব্যবহার করছে। এতে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
গ্রামীণ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই উপজেলায় ১৯৯০ সাল থেকে আয়রন ব্রিজ নির্মাণ শুরু হয়। এরপর থেকে ব্রিজগুলো স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর রক্ষণাবেক্ষনের কাজ করে আসছে। কিন্তু সড়কের ব্যাপক উন্নয়ন করায় ব্রিজগুলো দিয়ে বিভিন্ন ধরনের যাবাহন চলতে থাকে। প্রচন্ড ঝাকুনিতে ভেঙ্গে যেতে থাকে ব্রিজের স্লাবগুলো। এছাড়া নদী কিংবা খালের পানি লোনা থাকায় আয়রন স্ট্রাকচারগুলো মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যায়। ব্রিজগুলো নাজুক হয়ে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তারপরও কখনও উপজেলা পরিষদ, কখনও ইউনিয়ন পরিষদ স্লাবের বদলে কাঠের তক্তা কিংবা খেজুর গাছ আবার কোথাও কাঠের তক্তা দিয়ে ঝুকিপুর্ণ এই ব্রিজগুলোতে চলাচল কোনমতে সচল রেখেছেন। অবস্থা এমন হয় যে সবশেষ মধুখালী খালের আয়রণ ব্রিজটি বিধ্বস্ত হয়ে একজন নিহত হয়। আহত হয় আরও তিনজন। এরপরও ঝুকিপুর্ণ ব্রিজগুলো দিয়ে মানুষ চলাচল করছে।
এলজিইডি কলাপাড়া সূত্রে জানা গেছে, কলাপাড়ায় মোট ৩২ ব্রিজের মধ্যে ১৯ টি এখন খুব ঝুকিপুর্ণ রয়েছে। মিঠাগঞ্জ-ডালবুগঞ্জ বাজার ব্রিজ, ধানখালীর কালু মিয়ার হাট আয়রন ব্রিজ, ধুলাসার ইউনিয়ন পরিষদ ভায়া মুসল্লীয়াবাদ নতুনপাড়া ব্রিজ, পক্ষিয়াপাড়া হাট ভায়া মিঠাগঞ্জ বাজার, চাপলী বাজার ভায়া নতুনপাড়া, গোড়াআমখোলাপাড়া ভায়া মম্বীপাড়া, পাটুয়া ফজলু হাওলাদারের বাড়ির সামনের ব্রিজ, ছোট বালিয়াতলী ভায়া বাংলাবাজার ব্রিজ, কালাচানপাড়া ভায়া খাজুরা রোড ব্রিজ, মম্বিপাড়া রোড ব্রিজ, শনিবারিয়ার ব্রিজ, শরীফ বাড়ির ব্রিজ, কোডেক অফিস সংলগ্ন ব্রিজ, উত্তরপুর্ব চালিতাবুনিয়া ব্রিজ, সলিমপুর-কুমিরমারা ব্রিজ, বানাতিবাজার ভায়া রহিমউদ্দিন ব্রিজ, চান্দুপাড়া বিশ^াস বাড়ির ব্রিজ, তুলাতলী পক্ষিয়াপাড়া ব্রিজ, বাইনবুনিয়া ব্রিজের চরম বেহাল দশা। এই ১৯টি আয়রণ ব্রিজ এখন মানুষের যোগাযোগের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকির কারণ হয়ে গেছে। তবে এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে পুরনো আয়রন ব্রিজের স্থলে সিসি গার্ডার ব্রিজ করা হচ্ছে। যা টেকসই। ইতোমধ্যে লালুয়ার বানাতিবাজার, আমতলী খালের ওপর, অনন্তপাড়া, কাটাভাড়ানি খালের ওপর গার্ডার ব্রিজ নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া পাটুয়া হাটসহ বিভিন্ন স্পটে মোট নয়টি গার্ডার ব্রিজ নির্মানাধীন রয়েছে। যার কাজ শীঘ্রই শেষ হবে। আরও চারটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। গ্রামীণ যোগাযোগের সকল ভোগান্তি লাঘবে পর্যায়ক্রমে সকল আয়রন ব্রিজের স্থলে গার্ডার ব্রিজ করা হচ্ছে। এমনকি নতুন নতুন যেসব জায়গায় ব্রিজ দরকার রয়েছে তাও গার্ডার ব্রিজ করা হচ্ছে। তবে মধুখালী নির্মানাধীন গার্ডার ব্রিজের কাজের গতিহীনতায় সেখানকার মানুষ উদ্বিগ্ন। ট্রলার চালক শহিদুল ইসলাম জানান, ব্রিজটি নির্মান কাজ করতে গিয়ে খালের নৌ-ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। গ্রামীণ হাট-বাজারের দোকানির মালামাল ছাড়াও কৃষিপণ্য আনা নেয়ার কাজে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন মানুষ। সড়কপথে দ্বিগুন-তিনগুন বেশি ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
এমইউএম/এমআর