চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
চরফ্যাশন উপজেলার ৩টি শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কল্যাণ ট্রাস্টের অন্তর্ভূক্ত করণের নামে প্রায় কোটি টাকা ঘুষ বানিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকগণ ট্রাস্টে অর্ন্তভূক্ত না হওয়া ৩টি বিদ্যালয়ের ১৮টি পরিবার মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সূত্রে জানা যায, চরফ্যাশন উপজেলার মান্দারতলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিনের যোগসাজসে মাইনুল নামক জণৈক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চরফ্যাশন থানা পুলিশ ঢাকা সাভারের আশুলিয়া পল্লী বিদ্যুত এলাকার ৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকে আটক করেছে। তিনি ২ দিনের রিমান্ডে রয়েছে। ভূক্তভোগি পরিবার গুলোর দাবী ৭০ লাখ টাকার উৎকোচ দেয়ার পরেও বিদ্যালয়গুলো কল্যাণ ট্রাস্টের অন্তর্ভূক্ত হয়নি ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চরফ্যাশনের শিক্ষক দালাল চক্রের প্রধান হিসাবে পরিচিত প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন আমিনাবাদ হালিমাবাদের ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জয়নাল আবেদিনের ছেলে। আব্বাস উদ্দিনের সাথে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকের স্ত্রী রোকসানা ইসলাম বে-সরকারি সংস্থা কোষ্টট্রাস্টের চুক্তিভুক্ত রক্সের প্রকল্পে আনন্দ স্কুলের পরিচালায় ২০১০সালে দু‘জনেই চাকুরী করতেন। রোকসানা কর্মকর্তা ও আব্বাস উদ্দিন ছিলেন কর্মচারী। সে থেকে তাদের পরিচায় ঘটে। আব্বাস উদ্দিন চরফ্যাশনের ছেলে হিসাবে শুরু করে দালালী। স্কুলকে সরকারি করণ করার জন্যে পন্থিপিকি আটে। উপজেলা লেভেলে ৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কল্যাণ ট্রাষ্টের অর্ন্তভূুক্তির জন্যে দালাল আব্বাস উদ্দিন স্মরাপন্ন হয় ঢাকার মাইনুল শেখ মানিকের। উপজেলার ৩টি স্কুলের ১৮ জন শিক্ষক শিক্ষিকাকে কল্যান ট্রাস্টের অন্তর্ভূক্তের নামে আব্বাস উদ্দিন মোটা অংকের অর্থ গ্রহণ করলেও মাইনুল শেখ ১৯লাখ কথা স্বীকার করেছেন। বাকী ৫১লাখ টাকা আব্বাস উদ্দিন আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে চরফ্যাশন থানায় জুন মাসে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকসহ ৩জনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগে শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকসহ দালাল শিক্ষকের ও মদদদাতাদের চুক্তি ভঙ্গে এসব শিক্ষক এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীদের মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কান্না চোখে প্রশ্ন করেন অসহায় এক শিক্ষিকার পরিবার অর্থভিত্ত সবই হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পরিবার পরিজন পরিচালনা করতে এখন পথে নামতে হবে বলে জানা যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষিকা এ প্রতিবেদককে জানান, আব্বাস উদ্দিনসহ তার সহযোগীদের উপর বিশ্বাস করে আমরা এসব টাকা দিয়েছিলাম। ঋণ কর্জ ও সয়সম্বল বিক্রি করে এ টাকা দেয়া হয়েছে আব্বাস উদ্দিন। মামলায় আব্বাস উদ্দিন কেন আসামী হয়নি এমন প্রশ্ন করেছেন অনেক শিক্ষক পরিবার।
একাধিক সূত্রে জানায়, এ টাকা আত্মসাতে মাইনুল ইসলাম শেখ (মানিক) ও আব্বাস উদ্দিন এবং তার সহযোগীদের সাথে ভাগ বাটোয়ারায় মিলেনি। আব্বাস উদ্দিন নিজে বাঁচার জন্যে শিক্ষক শিক্ষিকাদের ও তাদের পরিবার পরিজনের চাপের মুখে সহকারী শিক্ষক মনির হোসেন বাদী করে ৭০ লাখ টাকা উদ্ধারে জন্যে চরফ্যাশন থানায় প্রতারণা মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ মাইনুল শেখ মানিক শুক্রবারে আটক করে শনিবার আদালতে ৫দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ৫ জুন রবিবার আসামীর রিমান্ড শেষ।
এ বিষয়ে মামলার বাদি পৌর ৫নং ওয়ার্ডের মাওঃ নুরুল ইসলামের ছেলে মো. মনিরুল ইসলাম জানান, আব্বাস উদ্দিনসহ আমাদের ৩টি শিশু কল্যান প্রাথমিক বিদ্যালয়কে কল্যান ট্রাস্টের অন্তর্ভূক্ত করার মৌখিক চুক্তিতে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিককে আমরা নগদ ও ব্যাংক, বিকাশে মোট ৭০ লাখ টাকা দিয়েছি। তবে সে যথাস্থানে টাকা না দেওয়ায় এবং চুক্তি ভঙ্গ করায় তার বিরুদ্ধে আইনী সহায়ত নিয়েছি।
এ বিষয়ে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিক তার ব্যাংক একাউন্টে ১৯ লাখ টাকা আছে বলে স্বীকার করে বলেন, স্ত্রীর মাধ্যমে আব্বাস উদ্দিনের সাথে আমার পূর্ব পরিচয় ও ১৯ লাখ টাকা আমাকে দিয়েছে।
মাইনুল শেখ স্ত্রী রোকসানা ইসলাম বলেন, আমরা আব্বাস উদ্দিনকে একাধিকবার বসতে বলেছি। তিনি বসেনি উল্টো আমার আশুলিয়ার বাসায় গিয়ে ৫/৬জন নিয়ে সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়। এতে আমার স্বামী মাইনুল বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় ১২মার্চ/২০ তারিখে একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন যার ডায়রি নং ১১৬৭।
চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুল আরেফিন বলেন, প্রতারণার অভিযোগে মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকসহ ৩জনকে আসামি করে থানায় ুপ্রতারণা মামলা হয়েছে। মামলা নং ১১। প্রধান আসামি মাইনুল ইসলাম শেখ মানিককে গ্রেপ্তার করেছে। সে বর্তমানে ২দিনের রিমান্ডে চরফ্যাশন থানা হাজতে আছেন।
এ ব্যপারে চরফ্যাশন উপজেলা মাদারতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্বাস উদ্দিন বলেন, আমি ৩টি স্কুল কল্যাণ ট্রষ্টের অর্ন্তভূক্তির জন্যে শিক্ষক শিক্ষিকার সাথে কথা বলছি এবং মাইনুল ইসলাম শেখ মানিকের সাথে লেন-দেন হয়েছে। ঘুষ বাণিজ্যের সাথে আমি জড়িত নেই।
এএইচ/এমআর