জোড়াখুন মামলার আসামী- পিরোজপুরে এ্যাম্বুলেন্স চালক পলাতক থাকায় ভোগান্তিতে রোগীরা

প্রথম পাতা » পিরোজপুর » জোড়াখুন মামলার আসামী- পিরোজপুরে এ্যাম্বুলেন্স চালক পলাতক থাকায় ভোগান্তিতে রোগীরা
শনিবার ● ৪ জুলাই ২০২০


---

পিরোজপুর সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

পিরোজপুরে ২টি হত্যা মামলায় পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের দুই সরকারী এ্যাম্বুলেন্স চালক সহ মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এ্যাম্বুলেন্স চালক পলাতর রয়েছেন। বর্তমানে পিরোজপুরে সরকারী স্বাস্থ্য সেবা খাত এ্যাম্বুলেন্স চালকশূন্য হয়ে পড়েছে। ফলে করোনাভাইরাসের এই দুর্যোগকালীন সময়ে জরুরী ভাবে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র রোগী পরিবহনসহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এ্যাম্বুলেন্স সেবা।

জানা গেছে, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে পিরোজপুর সদর উপজেলার খানাকুনিয়ারি গ্রামের এনায়েত মোল্লা (৬০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করার অভিযোগে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স চালক মোতালেব শেখকে প্রধান আসামী করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। ২৮ জুন বিকেলে তাকে কুপিয়ে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মকভাবে জখম করে এ্যাম্বুলেন্স চালক মোতালেব শেখসহ কয়েকজনের একটি দল। এসময় গুরুতর জখম এনায়েতকে পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান শেষে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ৩০ জুন খুলনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় এনায়েত মোল্লা। পরে মামলাটি হত্যা মামলায় রূপ নেয়। এ ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে আসামী এম্বুলেন্স চালক মোতালেব শেখ। এদিকে, ঘটনার পর কর্মস্থল থেকে ৭ দিনের ছুটি নিয়ে গা-ঢাকা দেন মোতালেব শেখের ছেলে পিরোজপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এ্যাম্বুলেন্স চালক সুমন শেখ। তবে ওই মামলায় সুমন এজাহারভুক্ত কোন আসামী নয়।
এছাড়া ২৫ জুন পিরোজপুর সদর থানায় দায়ের হওয়া আরেকটি হত্যা মামলায় পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের আরেক এ্যাম্বুলেন্স চালক কবির হোসেনকে প্রধান আসামী করা হয়েছে। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে ২৪ জুন সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা ভেঙ্গে যায় পিরোজপুর টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র তুষার শেখের (১৪)। স্বজনরা তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে দ্রুত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার জন্য রেফার করেন। এরপর সদর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্সে করে খুলনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়ার পর রাত ৮টার দিকে পিরোজপুর শহরের অবকাশ মোড় এলাকায় পিরোজপুর এ্যাম্বুলেন্সটি থামিয়ে দেয় চালক কবির হোসেন। সাথে সাথে সেখানে হাজির হয় পিরোজপুর সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত ফার্মাসিস্ট সচিন রায়, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী মাজেদুল ইসলাম ও মনির হোসেন সহ আরও কয়েকজন।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় খুলনায় চিকিৎসা পাওয়া যাবে না এই ভয়ভীতি দেখিয়ে তারা তুষারকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়ার জন্য পীড়াপীড়ি করতে শুরু করে। তাদের কথায় আশ^স্ত হয়ে তুষারের স্বজনরা ৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে তাকে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা করাতে রাজী হয়। এরপর সেখান থেকে তুষারকে পিরোজপুর পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মৃত আব্দুস সালাম মধু’র বাড়ির বৈঠকখানায় (কাঁচারী ঘর) নিয়ে সেখানেই তুষারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করে ফার্মাসিস্ট সচিনের নেতৃত্বে ৬/৭ জনের তথাকথিত মেডিকেল টিম। এরপর তুষারকে অনেকগুলো ইনজেকশন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে রাত ১২টার দিকে তাদের জানানো হয় যে, জরুরি ভিত্তিতে তুষারকে অক্সিজেন দেওয়া দরকার। তাই তারা তুষারকে একটি অটোরিক্সায় করে তড়িগড়ি করে পুনরায় পিরোজপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় তুষারের বাবা সোহাগ শেখ বাদী হয়ে পরের দিন ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২/৩ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এ মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে এ্যাম্বুলেন্স চালক কবিরকে।
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. নিজাম উদ্দিন জানান, দুইজন এ্যাম্বুলেন্স চালক হত্যা মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার কারণে তাদেরকে শোকজ করা হয়েছে।
পিরোজপুরে সরকারী এ্যাম্বুলেন্স সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে ডা. নিজাম উদ্দিন জানান, পিরোজপুর হাসপাতালের এ্যাম্বুলেন্স সেবা চালু রাখার জন্য বরিশাল থেকে একজন এ্যাম্বুলেন্স চালক প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে পিরোজপুরে একজন এ্যাম্বুলেন্স চালক কাজ করছেন।
এদিকে, পিরোজপুর মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এ্যাম্বুলেন্স চালক সুমন শেখও কর্মস্থল থেকে ছুটি নিয়ে পলাতক রয়েছেন। ফলে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের এ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

আরএইচএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৪:৫১:১১ ● ৩৬০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ