ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশের বিভিন্ন সড়কে চলাচলকারী ৩৩ শতাংশ যাত্রীবাহী বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই বলে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিল করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। একইসঙ্গে ৫৬ শতাংশ বাসের গতি নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেট নেই বলেও প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে দাখিল করা ১৫০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য উঠে আসে। আদালতে বিআরটিএ’র পক্ষে প্রতিবেদন দাখিল করেন আইনজীবী মো. রাফিউল ইসলাম। অন্যদিকে উপস্থিত ছিলেন রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. তানভির আহমেদ।
পরে তানভির আহমেদবলেন, এর আগে হাইকোর্ট ১৬ সদস্যের একটি কমিটি করে জাতীয়ভাবে সারাদেশের পরিবহনগুলোর ওপর একটি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদেশ পাওয়ার পর বিআরটিএ বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেছে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে ৩৩ শতাংশ যাত্রীবাহী বাসের ফিটনেস নেই এবং ৫৬ শতাংশ বাসের গতি নিয়ন্ত্রক সার্টিফিকেট নেই। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা রোধের কারণ ও রোধের বিষয়টি নিয়ে বিজ্ঞান সম্মত একটি পর্যবেক্ষণ করতেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়।
বিগত ৩১ জুলাই বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ফিটনেসহীন পরিবহনের ওপর জরিপ চালিয়ে তিন মাসের মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিবের নেতৃত্বে অভিজ্ঞদের দ্বারা কমপক্ষে ১৫ সদস্যের একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ অনুসন্ধান কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন আদালত।
পরে ওই কমিটির দ্বারা ফিটনেসহীন পরিবহনের ওপর জরিপ করে তিন মাসের মধ্যে তা প্রতিবেদন আকারে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালত রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী তানভির আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ।
রিটকারী আইনজীবী তানভির আহমেদ বলেন, ‘এ মামলার শুনানিকালে তারেক মাসুদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সংক্রান্ত মামলার সিআইডি রিপোর্ট আদালতকে দেখিয়েছি। ওই রিপোর্টে গাড়ির ফিটনেসের অভাবের বিষয়টি উঠে এসেছে। তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীবের মামলার ছবিও আদালতকে দেখিয়েছি। সে বাসটিও আনফিট ছিল। এ ছাড়া ২৯ জুলাই রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত ও আহত হওয়ার সঙ্গে জড়িত বাসের ছবিও আদালতকে দেখিয়েছি। দুর্ঘটনার শিকার এসব বাসের একটিরও ফিটনেস ছিল না। তাই এ বিষয়ে আদালতে রুল জারিসহ নির্দেশনা চাওয়া হয়।’ পরে রিটের শুনানি নিয়ে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে ফিটনেসবিহীন যান চলাচল বন্ধে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়।
চার সপ্তাহের মধ্যে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, বিআরটিএ চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সড়ক নিরাপত্তা বিভাগের (বিআরটিএ) পরিচালক, বিআরটিএ ইনফোর্সমেন্ট বিভাগের পরিচালক ও পুলিশের আইজিকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিআরটিএ থেকে ফিটনেসহীন পরিবহনের তালিকা করতে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। সড়ক পরবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন উপযুক্ত প্রতিনিধিকে আহ্বায়ক করে এবং বিআরটিএ’র সচিবকে সদস্য সচিব ঘোষণা করে ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদর দফতর, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, সড়ক ও জনপদ অধিদফতর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর, যন্ত্র প্রকৌশলী বিভাগ (বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়), অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, ঢাকা মহানগর সিএনজি অটোরিকশা মালিক সমিতির একজন করে প্রতিনিধি ও বিশিষ্ট গবেষক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়।
এফএন/এমআর