ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীকে ভবিষ্যতেও ‘গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে’ ভূমিকা রেখে যেতে হবে। বৃহস্পতিবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের ২০১৮-২০১৯ গ্র্যাজুয়েশন কোর্সের ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সততা ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে বহির্বিশ্বেও সুনাম অর্জন করেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সশস্ত্র বাহিনীর কৃতিত্ব সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। ভবিষ্যতেও দেশ ও জাতির কল্যাণে এবং গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে অবদান রাখতে হবে। বাংলাদেশে যে উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়েছে তা যেন এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে সশস্ত্র বাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ‘মূর্ত প্রতীক’ হিসেবে বর্ণনা করেন। দুর্যোগ মোকাবিলা, দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম, অবকাঠামো নির্মাণ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকার কথা তিনি স্মরণ করেন।
বিশ্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নানা পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা ও দায়িত্বেও এখন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কমান্ড ও স্টাফ কলেজের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমেও এ বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। কলেজের অবকাঠামোগত সুবিধা সম্প্রসারণে সরকার ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে বলেও জানান সরকারপ্রধান। এ বছর ডিএসসিএসসি ২০১৮-২০১৯ কোর্সে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১১৮ জন অফিসার, নৌবাহিনীর ২৯ জন এবং বিমানবাহিনীর ২৩ জন কর্মকর্তা গ্র্যাজুয়েশন করেছেন। এছাড়া চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, নাইজেরিয়া, সৌদি আরব, লেবানন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৯ দেশের ৪৫ জন কর্মকর্তা এ বছর কোর্স সম্পন্ন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী কোর্স সম্পন্নকারী অফিসারদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দেন।
তিনি বলেন, সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এ বিদ্যাপীঠ থেকে ‘পিএসসি’ ডিগ্রী অর্জন, যে কোনো সামরিক অফিসারের জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। স্টাফ কলেজে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনীর ৪৩টি, নৌবাহিনীর ৩৭টি এবং বিমানবাহিনীর ৩৯টি স্টাফ কোর্স সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে সশস্ত্রবাহিনীর ৩৯০২ জন, পুলিশের ৫ জন এবং ৪২টি বন্ধুপ্রতীম দেশের ১ হাজার ১১১ জন কর্মকর্তা এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেছেন। কলেজের সাবেক ও বর্তমান কমান্ড্যান্ট, অনুষদ সদস্যবৃন্দ ও সকল অফিসারদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের বলেন, “কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তোমরা সমর বিজ্ঞানের ওপর উচ্চতর জ্ঞান লাভ করেছ। এ প্রশিক্ষণ অর্পিত দায়িত্ব দক্ষতার সাথে পালনে এবং যে কোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তোমাদের আরও আত্মপ্রত্যয়ী হতে শেখাবে।
এ বছর ১১ জন নারী অফিসারের গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মহিলা অফিসারের কোর্সে অংশগ্রহণ অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। আশা করি, মহিলা অফিসারদের অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে। বন্ধুপ্রতিম দেশের গ্র্যাজুয়েট অফিসারদের উদ্দেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় দেশ। বৈশ্বিক শান্তির প্রতি আমাদের আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতেও প্রতিধ্বনিত হয়। আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র হল ‘সমমর্যাদার ভিত্তিতে সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়।’ এরই ধারাবাহিকতায় আপনাদের দেশের সঙ্গে আমরা বজায় রেখেছি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। শেখ হাসিনা তার নেতৃত্বাধীন সরকারের দশ বছরের উন্নয়নের চিত্রও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’। আমাদের সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ আবারও বিপুল ভোটে আমাদের নির্বাচিত করেছে। আমরা জনগণকে দেওয়া প্রতিটি ওয়াদার পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করব। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ। স্টাফ কলেজের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সে এ অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল এনায়েত উল্যাহ।
এফএন/এমআর