আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বরগুনার আমতলী উপজেলায় ফরমালিনযুক্ত (ফরমালডিহাইড) ফলে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। এ ফরমালিনযুক্ত ফল খেয়ে মানুষের লিভার, কিডনি সমস্যা ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। দ্রুত ফরমালিনযুক্ত ফল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
জানাগেছে, রসালো সুমিষ্ট ও পুষ্টিকর ফল কাঁঠাল এবং স্বাদ ও ভিটামিন সমৃদ্ধ ফল আম। সকল শ্রেণি পেশার মানুষ এ ফল দুটি পছন্দনীয়। আমতলীর বাজারে বিভিন্ন প্রজাতির আম রয়েছে। প্রজাতি ভেদে এ আম ২৫ মে থেকে ২৫ জুলাই’র মধ্যে পেকে থাকে। অপর দিকে বাজারে গালা ও খাজা প্রজাতির কাঁঠাল ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল কাঁঠাল বারি কাঁঠাল-১ এবং বারি কাঁঠাল-২ রয়েছে। কাঁঠাল মে মাস থেকে শুরু করে আগষ্ট মাসে পেকে থাকে। তবে অধিকাংশ কাঁঠাল পাকার উপযুক্ত সময় মধ্য জুলাই থেকে পুরো আগষ্ট মাস পর্যন্ত। কিন্তু ইতিমধ্যে বাজারে আম ও কাঁঠালে সয়লাব হয়ে গেছে। এতো আগে বাজারে প্রচুর পরিমানে কাঁঠাল আসার কথা নয়। অসাধু বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের অধিক লাভে বিক্রি করায় প্রবনতার কারনে এতো আগে বাজার কাঁঠাল এসেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। দেশের রাজশাহী, নওগা, যশোর ও চাপাইনবাবগঞ্জ প্রচার পরিমানে আম ও কাঠাল উৎপাদন হয়। আমতলী ফল ব্যবসায়ীরা রাজশাহী, নওগা, যশোর ও চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম ও কাঁঠাল এনে থাকেন। বাগান মালিকরা বেশী লাভের আশায় উপযুক্ত সময়ের আগেই গাছে কাঁঠাল কাঁচা থাকাবস্থায়ই ঔষধ প্রয়োগ করে থাকেন। আমতলীর ব্যবসায়ীরা ওই এলাকা থেকে কাঁঠাল এনে দ্রুত পাকানোর জন্য পানিতে ফরমালিন মিশিয়ে ওই পানি কাঁঠালে দিয়ে পলিথিন মুড়িয়ে রাখেন। ওই কাঁঠাল ২-৩ দিন পরে পেকে যায়। দুই দফায় কাঁঠালে রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে বলে জানান ফল বিক্রেতার সাথে জড়িতরা। ওই ফরমালিনযুক্ত কাঁঠাল আমতলী উপজেলার বাজারগুলো সয়লাব হয়ে গেছে। ওই ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে মানুষের লিভার, কিডনিতে সমস্যা ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্রুত বাজারে ফরমালিনযুক্ত ফল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
মঙ্গলবার আমতলী উপজেলা শহরের বাঁধঘাট চৌরাস্তা, একে স্কুল ও গাজীপুর বাজার ঘুরে দেখাগেছে, পসরা সাজিয়ে আম ও কাঁঠাল নিয়ে বলে আছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। ওই ফলের উপরে কোন মাছি বসছে না। মানুষ না বুঝে ওই ফল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বাজারে আমের দাম একটু কম থাকলেও কাঁঠালের দাম অনেক বেশী।
আমতলী পল্লী এলাকার ক্রেতা মোঃ হেলাল উদ্দিন বলেন, আগে কাঁঠালের দোকানে গেলে মাছির যন্ত্রনায় টিকতে পারতাম না। এখন আর আম ও কাঁঠালে মাছি বসতে দেখি না। তিনি আরো বলেন, উপায় না পেয়ে ফরমালিনযুক্ত ফলই কিনে আনতে হয়েছে।
উপজেলার আঠারোগাাছিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের মোঃ সোহেল রানা বলেন, বাজার ফরমালিনযুক্ত ফলে সয়লাব হয়ে গেছে। বিভিন্ন রোগ থেকে মানুষকে রক্ষায় ফরমালিনযুক্ত ফল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই। তিনি আরো বলেন, দুই’শ টাকা দিয়ে বাজার থেকে একটি কাঁঠাল কিনে বাড়ীতে এনেছিলাম। ওই কাঁঠালের গলা মুখে দেওয়া মাত্র মুখ বিষে ভরে যাচ্ছে। পরে ওই কাঠাল ফেলে দিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফল বিক্রেতার সাথে সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, আমতলীর কাঁঠাল ব্যবসায়ীরা পানিতে ফরমালিন মিশিয়ে ওই পানি কাঁঠালে দিয়ে পলিথিনে মুড়িয়ে রাখে। ২-৩ দিনে ওই কাঁঠাল পেকে যায়। ওই কাঁঠাল মানুষের কাছে তারা বিক্রি করছেন।
কাঁঠাল ব্যবসায়ী কালাম বয়াতি বলেন, আমরা ফলে ফরমালিন দেইনা। বাগান মালিকরা দ্রুত কাঁঠাল পাকানোর জন্য ঔষধ দিয়ে থাকেন। আমরা ওই বাগান থেকে কাঁঠাল কিনে এলাকায় এনে বিক্রি করি।
আমতলী বকুলনেছা মহিলা কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মোসাঃ মাকসুদা আক্তার ছ্িব বলেন, ফরমালিন (ফরমালডিহাইড বা মিথান্যাল) একটি বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। এই বিষাক্ত পদার্থ ফরমালিন বিভিন্ন ফলে মিশিয়ে পচন রোধ করে। ওই বিষাক্ত ফরমালিনযুক্ত ফল মানব দেহের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকর।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, ফরমালিনযুক্ত ফল খেলে মানবদেহে লিভার, কিডনিতে সমস্যা ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, দ্রুত বাজারে অভিযান পরিচালনা করে ফরমালিনযুক্ত ফল বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এইচএকে/এনবি