আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
আমতলীতে আমনের বীজ ধানের তীব্র সংঙ্কট চলছে। কৃষকরা বাজারে বিআর-২৩ ও বিআর - ৫২ জাতের ধানের বীজ পাচ্ছে না। ডিলারদের আগাম টাকা দিয়েও চাহিদা অনুযায়ী এ জাতের বীজ ধান না পেয়ে দিশেহারা কৃষকরা। এদিকে বিএডিসির সরবরাহকৃত বিআর-২৩ জাতের ধানের বীজ বাজারে না থাকায় সুযোগ বুঝে বিভিন্ন কোম্পানীর ডিলাররা বীজ তিনগুন মুল্যে বিক্রি করছে। কোম্পানীর বীজের মুল্যে বাজারে কোন নিয়ন্ত্রন নেই। বীজ ধান না পেলে অনেক জমি অনাবাদি থেকে যাবে বলে জানান কৃষকরা। তারা সরকারের কাছে দ্রুত বীজ সংঙ্কট সমাধানের দাবী জানিয়েছেন।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, আমতলীতে এ বছর আমনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। এতে বীজ ধান প্রয়োজন ৫’শ ৮০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৯৫% কৃষক ফলন ভালো হওয়ায় বিআর-২৩ জাতের বীজ ধানের চাষাবাদ করেন। উপজেলার মোট জমির অর্ধেক বীজ কৃষকরা মজুদ রেখে থাকেন। অবশিষ্ট অর্ধেক জমির জন্য দুই’শ ৯০ মেট্রিক টন বীজের চাহিদা রয়েছে। আমতলী কৃষি অফিস দুই’শ ৯০ মেট্রিক টন আমন ধানের বীজ বরাদ্দ চেয়ে পটুয়াখালী বিএডিসি কর্তৃপক্ষকে চাহিদা পাঠিয়েছে। কিন্তু বিএডিসি কর্তৃপক্ষ কৃষি অফিসের চাহিদা অনুযায়ী বীজ সরবরাহ করছে না। ইতিমধ্যে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ আমতলীতে ৫৮ মেট্রিক টন বীজ ধান বরাদ্দ দিয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় নগন্য। ওই বীজ ধান গত সপ্তাহের তিন দিনে বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান ডিলাররা। কৃষকরা ডিলারদের কাছে আগাম টাকা ও পরিচয়পত্র জমা দিয়েও বীজ পাচ্ছে না। উপজেলার কোন ডিলার ও বীজের দোকানে বিআর-২৩ ধান পাওয়া যাচ্ছে না। কৃষকরা হন্য হয়ে বীজ খুজে বেড়াচ্ছেন। বীজ না পেয়ে দিশেহারা হয়ে পরেছে কৃষকরা। অনেক কৃষক বলেন, বীজ না পেলে অনেকে জমি অনাবাদি থেকে যাবে। কৃষকরা ক্ষেতে আমন ধান চাষাবাদে জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন। পুরো আষাঢ় মাস জুড়ে আমনের বীজতলার জন্য বীজের চাহিদা রয়েছে। বাজারে বিআর-২২, বিআর-২৩, বিআর- ৫২ (ভিত্তি), বিআর-৪৯, বিআর-১১, বিনা-৭,বিরি-৪০ ও বিরি-৪৪ মোট আট জাতের বীজ রয়েছে। এর মধ্যে বিআর-২৩ ও বিআর-৫২ (ভিত্তি) জাতের ধানের চাহিদা বেশী। এ দুই জাতের ধানের বীজে ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকদের এ বীজের প্রতি ঝুঁক বেশী।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, ডিলার ও বিএডিসি কর্তৃপক্ষ সিন্ডিকেট করে বাজারে বীজের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে অধিক মূল্যে বীজ বিক্রি করছে। অনেক ডিলার বীজ গুদামজাত করে রেখে দিয়েছেন। তাদের চাহিদামত দামে বীজ বিক্রি করছে। এদিকে বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বিভিন্ন জাতের বীজ ধান রয়েছে। সুযোগ বুঝে কোম্পানীর বীজ ডিলাররা ওই বীজ অধিক মুল্যে বিক্রি করছে।
রবিবার (২৮ জুন) আমতলী পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কের মেসার্স ইউনুস এন্ড সন্স, মামুন এন্টার প্রাইজ ও আরিফ স্টোর, আমতলী কলেজ রোডের গাজী বীজ ভান্ডার ও আমতলী বীজসহ বহু বীজের দোকানে ঘুড়ে দেখাগেছে কোন ডিলার ও বীজের দোকানে বিআর-২৩ ও বিআর-৫২ (ভিত্তি) জাতের বীজ ধান নেই। আমতলী কলেজ রোডের গাজী বীজ ভান্ডার ও আমতলী বীজ ভান্ডারে ব্রি ধান-৫২, বিআর-১১, বিনা-৭ বিআর-৪৯ জাতের বীজ ধান পাওয়া গেলেও ১০ কেজির এক বস্তা বীজ ধান ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় কৃষকের কাছে বিক্রি করছে।
কাউনিয়া গ্রামের কৃষক খলিলুর রহমান ও রুহুল আমিন বলেন, বিআর-২৩ জাতের বীজের জন্য ডিলারের কাছে বিগত এক সপ্তাহ পূর্বে টাকা ও পরিচয়পত্র জমা দিয়েছি কিন্তু এখনো বীজ পাইনি। বীজ পাব কিনা না নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তারা আরো বলেন, দ্রুত বীজ ধানের ব্যবস্থা না করলে অনেক জমি অনাবাদী থেকে যাবে।
আঠারোগাছিয়া গ্রামের জাকির মাস্টার বলেন, ছয় বস্তা বিআর-২৩ জাতের ধানের বীজের জন্য আমতলী পৌর শহরের সকল বীজের দোকান খুজেছি কিন্তু পাইনি। শুধু ডিলাররা আশ্বাস দিচ্ছে বিএডিসি কর্তৃপক্ষ বীজ ধান পাঠাবে।
পশ্চিম সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, বিআর-২৩ ধানের বীজ উপজেলার কোথাও খুঁজে পাওয়া পাচ্ছে না। যা আছে ডিলাররা গোপনে অধিক মুল্যে বিক্রি করছে। তিনি আরো বলেন, সরকারী বীজ না পেয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে বিভিন্ন কোম্পানীর বীজ অধিক মুল্যে ক্রয় করছে। তিনি আরো বলেন বাজারে বিভিন্ন কোম্পানীর বীজ ৮’শ থেকে ৯’শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আমতলী হাসপাতাল সড়কের মেসার্স ইউনুস এন্ড সন্সের মালিক বিএডিসি’র ডিলার ইউনুস মিয়া বলেন, বাজারে বিআর-২৩ ধানের কোন বীজ নেই। এ জাতের বীজের তীব্র সংঙ্কট চলছে। এছাড়াও বিআর-৫২ ও বিআর-৪৯ জাতের বীজের সঙ্কট চলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে কৃষকদের এ জাতের বীজ দিতে পারিনি। প্রতিদিন কৃষকরা এসে বীজ চাচ্ছে। কৃষকদের যন্ত্রনায় আমরা অতিষ্ট।
মেসার্স মামুন এন্টার প্রাইজের মালিক বিএডিসি’র ডিলার মোঃ মামুন হাওলাদার বলেন, বীজের প্রচুর চাহিদা আছে কিন্তু বিএডিসি বীজ সরবরাহ না করায় আমরা কৃষকদের দিতে পারছি না। কৃষকরা হন্য হয়ে বিআর-২৩ ধানের বীজ খুঁজছে। কৃষকের যন্ত্রনায় আমরা ও দিশেহারা। বিএডিসি দ্রুত বীজ সরবরাহ না করলে কৃষকদের সামাল দেয়া কষ্ট হবে।
পটুয়াখালী বিএডিসি কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে বীজ সংঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, আমতলীতে ৫৮ মেট্রিক টন বিভিন্ন জাতের আমনের বীজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দকৃত বীজ ইতিমধ্যে সরবরাহ করেছি। সরবরাহকৃত বীজের মধ্যে ২৫.৫ মেট্রিকটন বীজ বিআর-২৩ জাতের। তিনি আরো বলেন, আমতলীতে ৯৫% কৃষকের বিআর-২৩ জাতের বীজের চাহিদা রয়েছে। তাই এতো বীজ পাবো কোথায়? উত্তরাঞ্চলে বন্যা চলছে। ওই অঞ্চলের জন্য বিএডিসি বীজ সংরক্ষণ করে রেখেছে। বন্যার উন্নতি হলে আগামী সপ্তাহে ওই বীজ দক্ষিণাঞ্চলে সরবরাহ করা হবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিএম রেজাউল করিম বীজের তীব্র সংঙ্কটের কথা স্বীকার করে বলেন, বিএডিসি কর্তৃপক্ষে কাছে ২’শ ৯০ মেট্রিক টন বীজ ধানের চাহিদা দেওয়া হয়েছে কিন্তু তারা ৫৮ মেট্রিকটন বীজ বরাদ্দ দিয়েছে। যা বরাদ্দ দিয়েছে তা কৃষকের চাহিদার তুলনায় নগন্য। আমতলীতে বিআর-২৩ জাতের বীজের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, কৃষকরা নিজেদের বীজ নিজেরা সংরক্ষণ না করলে এ সংঙ্কট থেকেই যাবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সার-বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি মনিরা পারভীন বলেন, উপজেলা কৃষি অফিস ও পটুয়াখালী বিএডিসি’র সাথে যোগাযোগ করে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী বিআর-২৩ ধানের বীজ অথবা অনুরুপ জাতের বীজ ধান আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সংগ্রহ করে কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে অথবা স্বল্প মুল্যে বিতরন করা হবে। তিনি আরো বলেন, উপজেলার কোন কৃষকের বীজ সংঙ্কট থাকবে না।
এমএইচকে/এমআর