কেউ কথা রাখেনি!

প্রথম পাতা » পটুয়াখালী » কেউ কথা রাখেনি!
বুধবার ● ২৪ জুন ২০২০


---

জাহিদ রিপন ॥
দফায় দফায় ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শনে আসেন জেলা, উপজেলা প্রশাসনসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মানে আশ্বস্ত করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভাঙ্গন পরিদর্শন করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। দ্রুততম সময়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের নির্দেশনা প্রদান করেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। সবাই কথা দিয়েছেন স্থায়ী বাঁধ নির্মানের, কিন্তু স্থায়ী বাঁধ দূরের কথা, বিগত ৫ বছর ধরে হয়নি কোন জরুরী সংস্কার কাজ। স্থানীয় বানভাসি মানুষকে দেয়া কথা কেউ রাখেনি। আক্ষেপ করে এভাবেই কথা গুলো বলছিলেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত হোসেন তপন বিশ্বাস।
২০০৭ সালে সুপার সাইক্লোন সিডরে বিধ্বস্ত হয় লালুয়ার ৭কিলোমিটার বেড়িবাঁধ। এরপর বেশ কয়েকবার বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে জরুরীভাবে সংস্কার কাজ হলেও মানহীন, দুর্বল কাজের জন্য তা টেকসই হয়নি। ফলে ফি-বছর ভেঙ্গে বর্ষা মৌসুমের অস্বাভিক জোয়ারে পানিবন্ধী হয়ে পড়ছে ১৭টি গ্রামের প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ। প্লাবিত হচ্ছে ফসলি জমি, পুকুর ঘের। বছর জুড়ে অনাবাদি থাকছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি। এতে পেশা হারিয়ে কর্মহীন ও নি:স্ব হয়ে পড়েছে অনেক স্বচ্ছল পরিবার। দেনাগ্রস্ত অনেকই অভাবের তাড়নায় ছেড়ে গেছেন এলাকা।
সরেজমিনে লালুয়ার চারিপাড়া, পশরবুনিয়া, বানাতিপাাড়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সাগর ও রাবনাবাদ নদের মিলন মোহনায় লালুয়া ইউনিয়নের চারিপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধের আদৌ কোন অস্তিত্বই নেই। এর বিভিন্ন ভাঙ্গা অংশ দিয়ে হু-হু করে নামছে ভাটার পানি। ভাটার সময়ও ফসলি মাঠে থৈ-থৈ করছে পানি। বেশিরভাগ বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে আছে। বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ বসতঘর। পুরো ইউনিয়নে চলাচলের জন্য অবশিষ্ট নেই এক ইঞ্চি অভ্যন্তরীণ রাস্তা। বানের জলে ভেসে গেছে সেতু, সাঁকো। বিধ্বস্ত হয়ে গেছে অনেক কালভার্ট। খাবার পানিসহ গো-খাদ্যের দেখা দিয়েছে তীব্র সঙ্কট। চারিপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে অশ্রিত হয়ে আছে গৃহহারা বেশ কয়েকটি পরিবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী সুবিধাভোগী ঠিকাদার এবং পাউবো’র অসাধু প্রকৌশলীদের কারনে শুরু থেকেই বারবার সংস্কার কাজ হলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ হয়নি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবী, ভূমি অধিগ্রহণসহ পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় লালুয়া বাঁধের স্থায়ী নির্মাণ কাজ শুরুতেই আটকে যায়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানায়, ষাটের দশকে জলোচ্ছ্বাস থেকে পটুয়াখালী উপকূলবাসীকে রক্ষায় নির্মাণ করা হয় ১৩৫০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। নির্মানের পর থেকে কোন সংস্কার কিংবা পুন:নির্মাণ কাজ না হওয়ায় এসব বাঁধের অধিকাংশই বর্তমানে হয়ে পড়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ। সর্বশেষ উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে লতাচাপলী, কুয়াকাটা, ডাবলুগঞ্জ, ধুলাসার ইউনিয়নের ৩৮কিলোমিটার বেড়িবাঁধের পুনরাকৃতির কাজ চললেও বাঁধ ভাংগা এলাকায় হচ্ছে কোন কাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওলিউজ্জামান সাগরকন্যা বলেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর লালুয়া ইউনিয়নের ওই এলাকার জমি অধিগ্রহণ করায় তাদের অনাপত্তিপত্র না পাওয়ায় বিগত ৫বছর ধরে সংস্কার কাজ করা যাচ্ছে না।

জেআর/এনবি

বাংলাদেশ সময়: ২২:০৮:২৭ ● ৩৪৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ