পটুয়াখালীতে ধানের বাজারে খরা, চালের বাজার চরা

প্রথম পাতা » লিড নিউজ » পটুয়াখালীতে ধানের বাজারে খরা, চালের বাজার চরা
বৃহস্পতিবার ● ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৯


---

জাহিদ রিপন, সাগরকন্যা প্রতিবেদক॥
চলতি আমন মৌসুমে পটুয়াখালীর ধানের বাজার হয়ে পড়েছে অস্থিতিশীল। মৌসুমের শুরুতে ধানের বাজার দর ছিল নি¤œমুখী। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি দর কিছুটা উর্ধ্বমুখী হলেও এক মাস না যেতেই শ্রেনী ভেদে ধানের বাজার দর হয়ে পড়েছে নি¤œমুখী। ফলে ধান বিক্রি করে কোন আয়-ব্যায়ের হিসাব মেলাতে পারছেন না জেলার কয়েক হাজার কৃষক। এদিকে দর কম থাকায় অনেক কৃষক ধান বিক্রি না করে বাড়ীতে ফেলে রাখায় তা নস্ট হয়ে যাচ্ছে।
চলতি বছর জেলায় ২ লাখ ১০ হাজার ৬’শ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। এসব জমিতে স্থানীয়জাত ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। কার্তিক থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত উপকূলীয় জেলা গুলোতে আমন ধান বাজারজাত করার নির্ধারিত সময়। জেলার চর বেষ্টিত গলাচিপা, বাউফল, দশমিনা, কালাইয়া, আমতলী ও কলাপাড়া উপজেলার কৃষক ও আড়ৎদাররা চলতি মৌসুমে ছোট-বড় শতাধিক চর থেকে প্রতি হাটে কমপক্ষে শত কোটি টাকার ধান কেনা বেচা করে।
সরেজমিনে মঙ্গলবার (০৫ ফেব্রুয়ারী) জেলার কলাপাড়ার ধান ও চালের বাজর ঘুরে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ধানের বাজার দর কমতি থাকলেও চালের বাজারে রয়েছে উচ্চ মূল্য। পৌষের শুরুতে মনপ্রতি ভোজন ধানের দর ছিল ৮৫০টাকা, মোটা ধান ৮’শ টাকা, মুড়ির বহরী ধান মনপ্রতি এক হাজার পঞ্চাশ টাকা। বর্তমানে মনপ্রতি ভোজন ধান ৬৫০টাকা, মোটা ধান ৬৫০টাকা, বহরী ধান  ৮০০টাকা দরে কেনা বেচা হচ্ছে। প্রকার ভেদে মন প্রতি ২’শ থেকে আড়াই’শ টাকার দর কমে গেছে।
আমতলীর ঝাড়াখালীর কৃষক ইসমাইল মোল্লা দেশ রূপান্তরকে জানান, বাড়িতে বসে ধান বিক্রি  করলে বাজারের চেয়ে প্রতিমন ১’শ টাকা কমে বিক্রি করতে হয়। বাজারে এসে বিক্রি করলে পরিবহন খরচসহ খাজানা দিয়ে খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কলাপাড়ার লালুয়ার কৃষক জাকির মাতুব্বর জানান, দর কম থাকায় বিক্রি না করায় তার প্রায় তিন’শ মন ধান বাড়ীতেই নস্ট হয়ে যাচ্ছে। রাঙ্গাবালীর কৃষক নুরুল আমিন জানান, স্থানীয় মাপের ৩ শতাংশ জমির চাষাবাদে খরচ পরেছে ৭/৮শত টাকা। প্রকার ভেদে ধান বিক্রি করে শুধু শ্রম মুল্য মিলছে। তবে লোকসানই বেশি গুনতে হচ্ছে।
এদিকে চালের বাজারে রয়েছে সম্পূর্ন ভিন্নরূপ। কলাপাড়ার তালুকদার ট্রেডার্সের মালিক আমজেদ হোসেন তালুকদার দেশ রূপান্তরকে জানান, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ভোজন চাল ১৩’শ টাকা, মোটা চাল ১৫’শ টাকা, সাড়ে ৪৬ কেজি প্রতি বস্তা মুড়ির বহরী চাল বর্তমানে ৯’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আমতলীর হলদিয়া ইউনিয়ন সোনাউডা থেকে কলাপাড়া বাজারে ধান ক্রয় করতে আসা বেপারী সাইদুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে জানান, অনেক কৃষকদের নেই নিজ মালিকানায় কৃষি জমি। অন্যের জমি একসনা চাষ করে মালিককে দিতে হয় মোট ধানের অর্ধেক। বেড়ে গেছে ধানের উৎপাদন ব্যয়। অভাবের তাড়না আর চাষাবাদের সময়কার ঋনের দায়ভার মেটাতে অসহায় প্রান্তিক কৃষক কম দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। এভাবে লোকসানের মুখে পরে অধিকাংশ কৃষক পরিবার হয়ে পড়েছে ঋণগ্রস্থ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম দেশ রূপান্তরকে বলেন, বোরোর ন্যায় আমন ধান সংগ্রহের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষেকে আনুরোধ জানিয়েছি। মাঠ পর্যায়ে আমন ধান সংগ্রহ করলে কৃষক সরাসরি উপকৃত হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২:৫৩:৪০ ● ৭৬১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ