আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
অবশেষে বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরিশালের আগৈলঝাড়া থানার চৌকস ওসি (জাতিসংঘ, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পরিদর্শক পুরস্কার প্রাপ্ত) মো. আফজাল হোসেন সঙ্গীয় ফোর্সসহ নির্যাতিতা শতবর্ষী বৃদ্ধা জ্ঞানদা রানীকে দেখতে ছুটে যান এতদাঞ্চলের বৃক্ষবন্ধু খ্যাত প্রয়াত ধর্মপ্রাণ সূর্যকান্ত সরকারের বাড়িতে। বৃদ্ধার নির্বিঘ্নে থাকার ব্যবস্থা করে আজীবন চিকিৎসা ও খাবারের দায়িত্ব নেন তিনি।
স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের বারপাইকা গ্রামের মৃত সূর্যকান্ত সরকার মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী জ্ঞানদা রানী (৯৫)’র ছেলে জগদীশ সরকারের সাথে থাকেন। পরিবারটি দরিদ্র হওয়ায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জ্ঞানদা রানীকে একটি বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়া হয়। তিনি ৩ মাস পরপর ভাতার টাকা উত্তোলন করে পূত্রবধূ শিখার কাছে জমা রাখেন। সোমবার বিকেলে ক্ষুধার্থ জ্ঞানদা রানী পূত্রবধূর কাছে খাবার ও বয়স্ক ভাতার টাকা চাইলে শিখা শাশুড়িকে অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন করে গুরুতর আহত করে।
নির্যাতনের সময় বৃদ্ধার চিৎকারে বাড়ির লোক ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে জগদীশ ও তার স্ত্রী শিখা রানী তাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাড়ি থেকে চলে যেতে বাধ্য করে এবং বিষয়টি কাউকে জানালে তাদের মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করে।
এরপূর্বে ওই বৃদ্ধা মেয়ের বাড়ি থেকে কিছুদিন বেড়িয়ে আসার পরে তার শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু থাকার অজুহাত দেখিয়ে প্রায় দু’মাস যাবৎ বসতঘরে না রেখে বাইরের একটি পরিত্যক্ত মন্দিরের বারান্দায় তাকে রেখে দেয়।
ওসি মো. আফজাল হোসেন বৃদ্ধা জ্ঞানদা রানীর কাছ থেকে সার্বিক বিষয়ে মনোযোগ দিয়ে শোনেন। এ সময় তিনি তার স্বাস্থ্যের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন এবং তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। পরে তাকে তার ঘরে তুলে দেন এবং ওসি’র নিজের টাকায় কেনা ফলমূলসহ খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেন। এরপর অভিযুক্ত পুত্রবধূর কাছ থেকে তার বয়স্ক ভাতার বই উদ্ধার করে দেন। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে জগদীশ পালিয়ে গেলেও অভিযুক্ত শিখা রানীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় আনা হয়েছে।
এছাড়া বয়োবৃদ্ধা জ্ঞানদা রানী যাতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে খেয়ে পরে ওই ঘরে ঘুমাতে পারেন সে ব্যবস্থাও ওসি সাহেব নিশ্চিত করে আসেন। তিনি ঘোষণা দেন- আজ থেকে আজীবন এই মায়ের সকল দায়িত্ব আমার। আমার পরে যারা এই থানায় ওসি হিসেবে আসবেন তাদের কাছেও এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে যাবো। উপস্থিত সব শ্রেণী-পেশার লোকজন ওসি সাহেবের এই ঘোষণা ও উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
এ ব্যাপারে ওসি মো. আফজাল হোসেন সাগরকন্যাকে বলেন, আমি বিভিন্ন মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে বৃদ্ধার বাড়ি গিয়ে তার খাবার ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। এঘটনায় বৃদ্ধার জামাতা চিত্তরঞ্জন সরকারের ছেলে চন্দন সরকার বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং- ১০। মামলা দায়েরের পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিযুক্ত হন এসআই সুশান্ত কুমার। পরে শিখা রানীকে মঙ্গলবার রাতেই গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার বরিশাল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
এএলএস/এমআর