আগৈলঝাড়া (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি ॥
শুধুমাত্র অর্থের লোভে সিজারিয়ান অপারেশন করতে গিয়ে অপারেশনের টেবিলেই মারা যান গৃহবধূ পলি অধিকারী (২১)। এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে বরিশালের আগৈলঝাড়ার দু:স্থ মানবতার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাটক শুরু করে। ঘটনার দিন ৩০ জানুয়ারী রাতে লাশে অক্সিজেন দিয়ে পলিকে নিয়ে যাওয়া হয় শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জরুরী বিভাগে চিকিৎসক পলিকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতে দু:স্থ হাসপাতালের ম্যানেজার সুমন ফকির, কর্মকর্তা রুস্তুম আলী ও গোলাম মোস্তফা তাদের নিজস্ব এ্যা¤ু^লেন্সে পলির লাশ নিয়ে যান পলির মামা বাড়ি ডাসার থানার দোনারকান্দি গ্রামে। পরদিন ৩১ জানুয়ারী মামা দধিরামের বাড়িতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে লাশের সৎকার করা হয়। যাতে বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপক্ষ না জানতে পারে এবং কেউ যাতে মামলা দায়ের করতে না পারে সে জন্যই এ নাটক করা হয় বলে জানান পল্লী চিকিৎসক ও সাবেক মেম্বর কালীপদ ওঝা।
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়ার ধারাবাশাইল গ্রামের পরিমল অধিকারীর স্ত্রী নীলা অধিকারী স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ের কারণে ছেলে লিটনকে নিয়ে আগৈলঝাড়ার বাহাদুরপুর গ্রামের সুভাষ গাইনের বাড়িতে ১৮ বছর আগে আশ্রয় নেয়। এই দীর্ঘ সময়ে সুভাষ গাইনের পরিবারের বোন হিসেবে আস্থাভাজন হয় নীলা। নীলার ছেলে লিটনও মায়ের মত ওই পরিবার ও এলাকায় সবার প্রিয় হয়ে ওঠে। সুভাষ গাইন ও তার ভাইয়েরা চিরকুমার থাকায় মায়ের মত লিটনও ওই পরিবারের সকল কাজকর্ম করে তাদের সংসার চালাতো। দু’বছর পূর্বে পলির সাথে লিটনের বিয়ে হয়। স্ত্রী পলিকে নিয়ে লিটন সুভাষ গাইনের বাড়িতে পরিবারের অন্যান্যের সাথে বসবাস করে আসছিল। পলি অন্ত:সত্বা হলে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ও সাবেক ইউপি সদস্য কালীপদ ওঝা ওরফে কালা ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলছিল।
কালীপদ ডাক্তার আরও জানান, ৩০ জানুয়ারি স্বাভাবিক প্রসবের জন্য পলিকে আগৈলঝাড়া দু:স্থ মানবতার হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ভর্তি করিয়ে তার পরিচিত ডাক্তার প্রশান্ত রায়ের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু হাসপাতালের আনাড়ি চিকিৎসক আশ্রাফুল আলম ও হাসপাতালের মাঠ কর্মী দালাল অপর্ণা পান্ডে রোগীকে সিজারিয়ান অপারেশন করাতে হবে বলে জানান। সিজারিয়ান অপারেশন না করিয়ে স্বাভাবিক প্রসবের কথা জানালে অপর্ণা ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কালা ডাক্তারের বাকবিতন্ডা হয়। ওই রাতেই পলির সিজারিয়ান অপারেশন করেন গৌরনদী হাসপাতালের জুনিয়র কনস্যালটেন্ট (গাইনী) ডা. বিপুল বিশ্বাস। এ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার ছিলেন ওই হাসপাতালের চিকিৎসক বর্তমানে ডেপুটেশনে আগৈলঝাড়ায় কর্মরত ডা. আবদুল্লাহ আল-মামুন। সন্ধ্যা ৭:১০ মিনিটে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় কন্যা সন্তান জন্ম দিয়ে মারা যায় পলি।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইতিপূর্বে দু:স্থ মানবতার হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুসহ বেশ কয়েকজন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়া নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এর জের কাটতে না কাটতে এবার সিজারিয়ান অপারেশনে মৃত্যু হলো গৃহবধূর। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষ প্রাণপণ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। তাছাড়া ওই হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের কোন প্রশিক্ষণ নেই বলেও জানা গেছে।
এ ব্যাপারে দু:স্থ মানবতা হাসপাতালের ম্যানেজার সুমন ফকির বলেন, পলির হার্টের সমস্যা ছিল। অপারেশনের পরে হার্টের সমস্যায় মারা যায়। হার্টের পরীক্ষা ও চিকিৎসা না করিয়ে অপারেশন করানো ঠিক হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করে এলাকার প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে অনুরোধ করেন।
হাসপাতালের পরিচালক ও স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদারের কাছে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে লাইন কেটে দেন। পরবর্তীতে আর মোবাইল রিসিভ করেননি।
এএলএস/কেএস