মেজবাহউদ্দিন মাননু, কুয়াকাটা থেকে ফিরে॥
যেন অবৈধ দখলদারদের বৈধতা দেয়া হচ্ছে! খালের পানির লেভেল থেকে তীর পর্যন্ত দখল করে আরসিসি কলাম করে রাখা দখলদারিত্বের অংশ বাদ দিয়ে নামকাওয়াস্তে খননের কাজ শেষ করা হচ্ছে। বহু স্থাপনা খালের পাড়ে কিংবা খালের তীরে রয়ে গেছে। ওইসব স্থাপনা উচ্ছেদ কিংবা এসএ নক্সা অনুসারে খালের সীমানা চিহ্নিত নাা করেই সরকারের কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করে পুনঃখননের কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। ভূমি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার কারনে খালের সীমানা চিহ্নিত না করে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটায় অতিপ্রয়োজনীয় একমাত্র খালটি খননের এমনসব দৃশ্য দেখে দুইপাড়ের সাধারণ মানুষ হতবাক বনে গেছেন। দরিদ্র মানুষের গাছপালা উপড়ে ফেলা হয়েছে। কোন ক্ষতিপুরন দেয়া হয়নি। আর প্রভাবশালীদের পাকা পিলার, কলাম, দেয়াল, দোকানপাট সব অক্ষত রয়ে গেছে। খালের তীরের এসব স্থাপনায় নখের আচড়ও লাগেনি। এসব স্থাপনা উচ্ছেদে সরকারি নির্দেশনা পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। এরই মধ্যে খাল খননের কাজ সম্পন্ন করা শেষের পথে। সাড়ে সাত কিলোমিটার খাল খননে পানি পর্যন্ত সম্পুর্ণভাবে সেচ না দিয়ে স্কেভেটর (ভেকু) দিয়ে দুইপাড় ছেচে ফের জোয়ারের পানিতে ডুবিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। কুয়াকাটা পৌর এলাকা এবং লতাচাপলী ইউনিয়নের কৃষকসহ সাধারণ মানুষের কৃষিকাজে জলবদ্ধতা নিরসনে এ খাল পুনঃখননের কাজ নিয়ে স্থানীয়দের এন্তার অভিযোগ। খালের দুই পাড়ের শত শত পরিবারের অভিযোগ, খালের সীমানা আগে চিহ্নিত করা হয়নি। খালটি কি ডিজাইনে কাটা হবে এর কোন সাইনবোর্ড টানানো নেই। মানুষজন জানান, দুইপাড়ের মাটি ছেঁটে দেয়া হয়েছে। বহু স্পটে খালটির প্রস্থ আরও কমে গেছে। তলদেশ আগে যা ছিল তাই থেকে যাচ্ছে। যেন খাল দখলের স্থায়ী সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, উপকূলীয় বাঁধ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন কুয়াকাটাসহ লতাচাপলীর চারদিক ঘেরা ৪৮ নম্বর পোল্ডারের অধীন স্লুইস সংযুক্ত ৩০ কিলোমিটার খাল পুনঃখননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কুয়াকাটার উন্নয়নে এ খালটি রক্ষা করে যথাযথভাবে খনন করলে সুফল পাবেন অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ। ইতোমধ্যে খালের পুনঃখননের কাজ শেষের পথে। লতাচাপলী ইউনিয়নের আলীপুর থেকে শুরু হওয়া খালটি কুয়াকাটা পৌরএলাকায় গিয়ে শেষ হচ্ছে। স্থানীয়রা কুয়াকাটা খাল বলছেন, কেউ কচ্ছপখালীর লেক, কেউ কেউ ঘাটলার খালও বলছেন। করোনার মধ্যে রাতে-দিনে চলেছে পুনঃখনন কাজ।
জানা গেছে, বিশ^ব্যাংকের অর্থায়নে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়বরাদ্দে সাত দশমিক ৪৬৫ কিমি দীর্ঘ এখালটির পুনঃখননের কথা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কঙ্গম ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন (সিকো) খননের কাজটি করছে। খালটির তলদেশ মাথা (আগা) থেকে দুই দশমিক পাঁচ মিটার থেকে গোড়ার দিকে নয় দশমিক পাঁচ মিটার খনন করা হবে। টপ থাকবে নয় থেকে ১৫মিটার পর্যন্ত। গভীরতা এক থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত। জুন মাসে খালটির এই সাড়ে সাত কিমি অংশ পুনঃখননের কাজ শেষ হওয়ার টার্গেট রয়েছে। এরই মধ্যে অধিকাংশ কাজ সম্পন্নের পথে। প্রকল্পের পরামর্শক মো. মজিবুর রহমান জানান, এ পোল্ডারে মোট ৩০ কিমি খাল পর্যায়ক্রমে পুনঃখনন করা হবে। কুয়াকটার খালটির খনন কাজ যথাসময় শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করলেন। এ পরামর্শক জানান, খালটি পুনঃখনন হলে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সুষ্ঠু সমাধান হবে। তাছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে মৃতপ্রায় এখালগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করা হবে। পানির প্রবাহ চলমান থাকায় পর্যটন এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন হবে। দুই পাড়ের একাধিক বাসীন্দা জানান, আসলে মূল খালটি আগে চিহ্নিত করে তারপর পুনঃখনন করার দরকার ছিল। নইলে বাড়তি খাস জমি এখন দখল হয়ে যাবে। আর খননে নামকাওয়াস্তে মাটি বেকু মেশিনে তোলা হয়েছে। দুই পাড় ছাচা হয়েছে। রাতের বেলা কাদা তুলে সকালে পানি তুলে দেয়া হয়েছে। বোঝার কোন উপায় নেই। এমনকি পৌরসভার ঘাটলার কালভার্ট এলাকায় খাল দখল করা স্থাপনাগুলো দাঁড়িয়ে আছে। তা বাদ দিয়ে খাল খনন করা দেখানো হচ্ছে। মূল খালটির প্রস্থ ঠিক রেখে, তলদেশ গভীর করে যথাযথ খননের দাবি মানুষের। তবে প্রকল্পের পরামর্শক মজিবুর রহমান এও জানান, বহুদফা সমীক্ষা চালানোর পরে যথাযথভাবে কাজটি করা হচ্ছে। তবে কেন ভূমি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এসএ নক্সায় মূল খাল চিহ্নিত করা হয়নি; এর জবাব মেলেনি। লতাচাপলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনছারউদ্দিন মোল্লা জানান, খালটি আরও গভীর এবং প্রস্থ করে খনন করার দরকার ছিল। নইলে খাস অংশ দখল হয়ে যাবে। খালটির স্লুইসের অংশের সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকা তার ইউনিয়নের মধ্যে পড়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান, খালটি খননে জলাবদ্ধতার সমস্যা কেটে যাবে। তবে দুই পাড়ের মাটি সংরক্ষণ করতে পারলে দুই পাড়ে দুইটি সড়ক করে দিলে মানুষের উপকার হতো। পর্যটন এলাকার সৌন্দর্য বাড়ত। মহিপুর ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (তহশিলদার) আব্দুল আজিজ জানান, এখাল পুনঃখননে তাঁদের সঙ্গে কোন ধরনের সমন্বয় করা হয়নি। তিনি জানান এখালটি এসএ নক্সায় অন্তত ৫০ হাত প্রস্থ থাকার কথা। এখন কোথাও কোথাও অর্ধেক হয়ে গেছে।