কলাপাড়া সাগরকন্যা অফিস॥
পটুয়াখালীর মহিপুর মৎস্যবন্দরের শিববাড়িয়া নদী তীরের সরকারী জমিতে উচ্চ আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে উত্তোলন করা হচ্ছে একের পর এক অবৈধ স্থাপনা। স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ও ভূমি অফিসের অসৎ কর্মকর্তা কর্মচারী সরকারী জমি দখল উৎসবের সাথে জড়িত থাকায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এনিয়ে গণমাধ্যমে সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সাধারনের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও জসিম আকন ও ফজলু’র মত প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। এমনকি ভূমি অফিসের যোগসাজশে মহিপুর ফেরীঘাট সংলগ্ন শিববাড়িয়া নদী তীরে ফের জয়নাল’র অবৈধ স্থাপনা উত্তোলনের অভিযোগ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) বললেন, বিষয়টি তিঁনি জানেন না। মৎস্যবন্দরের সরকারী জমিতে কোন অবৈধ স্থাপনা থাকার সুযোগ নাই। জয়নাল, জসিম আকন ও ফজলু’র অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হবে।
জানা যায়, মহিপুর আলীপুর মৎস্যবন্দরের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত শিববাড়িয়া নদীটি ঝড় জ্বলোচ্ছাসে জেলেদের একমাত্র আশ্রয় স্থল। এটিকে জেলেদের জন্য পোতাশ্রয় নির্মানে সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এনিয়ে কয়েকদফা সমীক্ষা কার্যক্রম চালিয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নদী তীর সংলগ্ন সরকারী জমিতে প্রভাবশালীদের একের পর এক অবৈধ স্থাপনা উত্তোলনে শিববাড়িয়া নদীটি অস্তিত্ব সংকটে পড়ায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপÍরের সচিব, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের সচিব, পানি সম্পদ সচিব, নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান, পাউবো’র মহাপরিচালক সহ ৮জনকে বিবাদী করে উচ্চ আদালতে ২০১৪ সালে একটি রিট পিটিশন দাখিল করে। যার প্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের আদেশে শিববাড়িয়া নদীর দু’তীরে উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। উচ্চ আদালতে ওই রিট পিটিশন নিস্পত্তি না হওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকায় কোন স্থাপনা নির্মানের কার্যত কোন সুযোগ না থাকার পরও থামছেনা অবৈধ স্থাপনা নির্মান। এছাড়া খোদ মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনের কাঁচা বাজার মাঠ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ায় সেখানে দু’সারিতে অন্তত: ২০টি অবৈধ স্থাপনা উত্তোলন করার সুযোগ দিয়ে ভূমি অফিসের যোগ সাজশে একটি সংঘবদ্ধ চক্র হাতিয়ে নেয় মোটা অংকের টাকা। যেকারনে মহিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সামনে দৃশ্যমান এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অদ্যবধি কোন কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি।
এরআগে ৪জুন মৎস্য বন্দরের শিববাড়িয়া নদী তীরবর্তী এলাকার সরকারী জমিতে উত্তোলনকৃত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ভ্রাম্যমান আদালত। তবে ঘটনাস্থল থেকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের প্রস্থানের পর ডালবুগঞ্জ ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারন সম্পাদক জসিম আকন ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ফজলু’র অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কিংবা অপসারন করা হয়নি। সরকারী জমিতে এ দু’টি অবৈধ স্থাপনা এখনও দৃশ্যমান হওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান নিয়ে মৎস্যবন্দরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির বরিশালস্থ সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, ’মহিপুরের শিববাড়িয়া নদী তীরের দখল নিয়ে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে ইতোপূর্বে আদালতের নির্দেশে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন শিববাড়িয়া নদী তীরে ক’দফা উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। ওই রিট আবেদন এখনও নিস্পত্তি হয়নি। এমত অবস্থায় শিববাড়িয়া নদী তীরে ফের অবৈধ স্থাপনা উত্তোলনের বিষয়টি উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করার সামিল।’
কলাপাড়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জগৎবন্ধু মন্ডল বলেন, ’মহিপুর মৎস্যবন্দরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এরপরও অবৈধ স্থাপনা থাকলে সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে।’
এদিকে মঙ্গলবার (৯ জুন) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট জগৎবন্ধু মন্ডল’র নেতৃত্বে কুয়াকাটা আমখোলা এলাকায় ক’টি অবৈধ স্থাপনা উউচ্ছেদ ও ত্তোলনের দায়ে ক’জনকে দন্ড প্রদান করা হলেও মহিপুর মৎস্যবন্দরের শিববাড়িয়া নদী তীরের বহুল আলোচিত প্রভাবশালীদের তিনটি অবৈধ স্থাপনা এখনও উচ্ছেদ করা হয়নি।
জিপি/এমআর