ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশের শিল্প-কারখানাগুলো জাতীয় গ্রিড থেকে কাক্সিক্ষত ভোল্টেজ ও ফ্রিকায়েন্সির বিদ্যুৎ না পাওয়ায় এখনো জেনারেটরভিত্তিক তথা ক্যাপটিভ পাওয়ারের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বলে জানান শিল্পমালিকরা। অথচ দেশে আমদানিসহ মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২১ হাজার মেগাওয়াট। তার বিপরীতে চাহিদা সাড়ে ৭ হাজার থেকে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট। ফলে অব্যবহৃত থাকছে প্রায় ১২ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা। সক্ষমতা অলস পড়ে থাকলেও পণ্য উৎপাদনের জন্য শিল্প-কারখানাগুলো নিজস্ব বিদ্যুতেই ভরসা করছে। ক্যাপটিভ পাওয়ারের জেনারেটরের জ¦ালানি হিসেবে গ্যাস ও তেল ব্যবহার হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সরবরাহকৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩ টাকা ১৬ পয়সা। আর গ্রিড থেকে শিল্প খাতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা ৬ পয়সা। শিল্পমালিক ও পিডিবি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। কিন্তু শিল্প-কারখানায় বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদনের জন্য যে ভোল্টেজ ও ফ্রিকোয়েন্সির বিদ্যুৎ দরকার, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো তা দিতে পারছে না। আর বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির বিদ্যুতে মেশিনারিজ চালিয়ে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে শিল্প মালিকরা বিদেশী ক্রেতাদের সন্তুষ্ট করতে পারছে না। নিম্নমানের চাপ ও কখনো কখনো বিভ্রাটের কারণে পণ্যে ত্রুটি দেখা যায়। যে কারণে ব্যয় বেশি হলেও পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির জন্য নিজস্ব বিদ্যুতের উৎস তথা ক্যাপটিভের ওপরই শিল্প-মালিকদের নির্ভর করতে হচ্ছে। ফলে কারখানার লাইট, ফ্যান ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) চালানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুৎ। বিগত ১ ডিসেম্বর সারা দেশে প্রকৃত বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। তবে বৈকালিক উৎপাদন ছিল ৭ হাজার ৯৯১ মেগাওয়াট। বিগত ২৮ ডিসেম্বর সারা দেশে ডে আওয়ারে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় মোট ৭ হাজার ১৪৪ মেগাওয়াট। আর সন্ধ্যায় ছিল ৮ হাজার ৮৯১ মেগাওয়াট। ওই হিসাবে ১০-১১ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা বসিয়ে রাখা হচ্ছে। আর তার অধিকাংশই রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও ব্যক্তি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্র।
সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ বিভাগের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী বর্তমানে মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। যদিও ক্যাপটিভ থেকে বর্তমানে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় তার পুরোপুরি তথ্য বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে ক্যাপটিভ থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। ক্যাপটিভ পাওয়ার উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৯ টাকা ৬২ পয়সা। যা বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত গ্যাসের চেয়ে দাম ৩ গুণ। তাহলেও ব্যবসায়ীরা বেশি দামেই ওই গ্যাস ব্যবহার করে নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদন করছেন। ফলে জ¦ালানি ব্যয় বেড়ে গেলেও তাতেতই আস্থা রাখছেন শিল্প-মালিকরা।
সূত্র আরো জানায়, খাতভেদে আবাসিকে বিপিডিবির সবচেয়ে বেশি বিদ্যুতের ব্যবহার হয়। মোট জাতীয় বিদ্যুতের ৫৩ শতাংশ বৈদ্যুতিক লাইট, পাখা, এসি ও রেফ্রিজারেটর চালাতে ব্যবহার হয়। শিল্প খাতে ব্যবহার হয় ৩৩ শতাংশ, যার অধিকাংশই আবাসিকের মতো লাইট, পাখা ও এসি চালু রাখে। কিন্তু ক্যাপটিভ বিদ্যুতে সুতা, কাপড়সহ অন্যান্য শিল্পপণ্য উৎপাদনে যেসব যন্ত্রাংশ ব্যবহার হয়, সেগুলো চালু রাখা হচ্ছে। এদিকে শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার কীভাবে বাড়ানো যায় সে উপায় খুঁজছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তার অংশ হিসেবে প্রণোদনা দিয়ে হলেও শিল্প খাতে ক্যাপটিভ পাওয়ারের ব্যবহার কমিয়ে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে শিল্পমালিকদের উৎসাহ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। সেজন্য প্রয়োজনে শিল্প এলাকায় আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করা, বিদ্যুতের মূল্যহার পুনর্নিধারণসহ নানা পদক্ষেপও নিতে পারে বিদ্যুৎ বিভাগ। অন্যদিকে বিদ্যুৎ ও জ¦ালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদর্শ ব্যবস্থায় বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস-বৃদ্ধিতে প্রধান ভূমিকা রাখে শিল্প খাত। কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছে তার উল্টো। এখানে বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস-বৃদ্ধি নির্ধারিত হয় আবাসিক খাতের ব্যবহারের ওপর, টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য যা গ্রহণযোগ্য নয়। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বণিক জানান, বিদ্যুতের ব্যবহার ছোট গ্রাহক অর্থাৎ আবাসিকে বেশি। কিন্তু এখন শিল্প গ্রাহকের দিকে বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। কারণ তাদের জন্যই তো বিদ্যুতের এত সক্ষমতা বাড়ানো। শিল্পমালিকরা রিলায়েবল ও আনইন্টারাপ্টেড বিদ্যুতের কথা বলে আসছেন। তাদের দাবি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনে ১৩২ কেভি তথা প্রধান জাতীয় সঞ্চালন লাইন থেকেও বিদ্যুৎ দিতে চাচ্ছি।
এফএন/এমআর