ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সারা দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেওয়ার সংকল্পের কথা আবারও জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিদ্যুৎ দরকার, এমন মানুষ খুঁজে খুঁজে সংযোগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি আর বিদ্যুতের উৎপাদনের মাধ্যমে প্রতিটি ঘরে আলো জ্বালবো। এটি আমাদের লক্ষ্য। বর্তমানে দেশের ৯৩ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা জানেন এখন আর বিদ্যুতের জন্য ছুটোছুটি করতে হয় না। এখন আলোর পসরা নিয়ে আপনাদের ঘরে ঘরে যাচ্ছে। কোথায় বিদ্যুৎ দরকার- এভাবে খুঁজে খুঁজে আমরা মানুষের চাহিদা পূরণ করার উদ্যোগ নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং নয়টি গ্রিড উপকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং গ্রিড উপকেন্দ্র চালুর ফলে এক হাজার ৬২ মেগাওয়াটেরও বেশি বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এছাড়াও অনুষ্ঠানে তিনি চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় দেশে প্রথম সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ১২টি উপজেলায় শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন করা ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে- সিরাজগঞ্জ ২৮২ মেগাওয়াট সিম্পেল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ভোলা ২২৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্র, চাঁদপুর ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র, আশুগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র, খুলনার রুপসায় ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং চট্টগ্রামের জুলদা ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র (তৃতীয় ইউনিট)।
নয়টি গ্রিড উপকেন্দ্র হচ্ছে- রামগঞ্জ, বরিশাল (উত্তর), বারইয়ারহাট, শিকলবাহা, জলঢাকা, সুনামগঞ্জ, বিয়ানিবাজার, রাঙামাটি ও মাতারবাড়ি। শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আসা উপজেলাগুলো হচ্ছে- হরিণাকু-, ঠাকুরগাঁও সদর, বালিয়াডাঙ্গা, গোয়ালন্দ, কালুখালী, বামনা, লাখাই, শায়েস্তাগঞ্জ, আজমেরীগঞ্জ, বাহুবল, মেলান্দহ এবং ইসলামপুর। ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী সিরাজগঞ্জ, ভোলা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও জনগণের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে ওইসব এলাকার উন্নয়নে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা বলেন, চাহিদার সাথে তাল রেখে আমরা কিন্তু বিদ্যুতের উৎপাদনও বাড়াচ্ছি। আমাদের লক্ষ্য সারা বাংলাদেশে আমরা বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেব। সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ছিয়ানব্বই থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত যখন ক্ষমতায় ছিলাম বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছিলাম, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছিলাম, রাস্তাঘাট করে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে মানুষের ভেতর একটা আশার আলো জেগে ছিলাম। কিন্তু সেই আলো নিভে যায় ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর। দুর্নীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, গ্রেনেড হামলা, বোমা হামল- এটাই ছিল তাদের একমাত্র কাজ এবং আওয়ামী লীগের লক্ষ লক্ষ নেতা কর্মীর ওপর অকথ্য অত্যাচার, তাদের কারাগারে নিক্ষেপ করে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, তাদের অপকর্মের ফল এদেশে ইমারজেন্সি হয়। এরপর আরও দুই বছর আমরা পিছিয়ে যাই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করে। এরপর ২০০৮ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত একটানা আমরা সরকারে থেকে দেশকে উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাই।
মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর জ¦ালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ জ¦ালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নাসিরুল হামিদ। বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমেদ কায়কাউস।
এফএন/এমআর