গৌরনদীতে ঋণের চাপে দোকানী অজ্ঞান

প্রথম পাতা » বরিশাল » গৌরনদীতে ঋণের চাপে দোকানী অজ্ঞান
বৃহস্পতিবার ● ৪ জুন ২০২০


গৌরনদীতে ঋণের চাপে দোকানী অজ্ঞান

গৌরনদী (বরিশাল) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

বরিশালের গৌরনদীতে এনজিও’র লোনের টাকার চাপ সহ্য করতে না পেরে আইয়ুব আলী সরদার (৬০) নামের এক দোকানদার জ্ঞান হারিয়েছেন। এদিকে টাকার অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারছে না পরিবারের সদস্যরা। সে উপজেলার পিঙ্গলাকাঠী গ্রামের মৃত আঞ্জুবালী সরদারের ছেলে।
দোকানদার আইয়ুব আলীর স্ত্রী সাহেদা বেগম অভিযোগ করে বলেন, আমি ও আমার স্বামী মিলে ব্র্যাক, আশা, কারসা, পদক্ষেপ, ব্যুরো বাংলাদেশ ও জাগরনী চক্র নামের কয়েকটি বেসরকারি এনজিওর কাছ থেকে ৯ লক্ষাধিক টাকা লোন নিয়ে একটি দোকান পরিচালনা করছিলেন। মহামারী করোনার কারণে দোকান বন্ধ থাকায় আমরা ঋণের কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে পারি নাই। এদিকে এনজিওর তরফ থেকে লোনের কিস্তির টাকা পরিশোধের জন্য চাপ অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও জানান, গত রবিবার সকালে জাগরনী সংগঠনের এরিয়া ম্যানেজার সোহাগ সহ অন্যান্য এনজিওর কর্মীরা তাদের বাড়িতে এসে কিস্তির টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন।  এনজিও’র কর্মীদের চাপ সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। ওইদিনই তাকে (আইয়ুব) বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ৩ দিন তার (আইয়ুব) চিকিৎসার পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে হাসপাতাল থেকে তার (আইয়ুব) নাম কেটে দেয়া হলে তার স্বামীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার স্বামী অসুস্থ জেনেও এনজিওর কর্মীরা বাড়িতে এসে কিস্তির জন্য চাপ দিচ্ছেন বলে সাহেদা বেগম অভিযোগ করেন।
কয়েকজন ঋণ গৃহীতা জানান, করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউনের কারণে সরকার ঘোষিত সবধরনের ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। বর্তমানে সীমিত পরিসরে অফিস-আদালত খুলে দেয়ার পর বিভিন্ন এনজিও’র মাঠকর্মীরা এলাকায় কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য মাঠে নেমেছে। ফলে এখনও কাজে যোগদান করতে না পারায় ঋণ গৃহীতা দিনমজুর পরিবারের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
সূত্রমতে, সরকারের নির্দেশে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এনজিও ঋণ শ্রেণিকরণ কার্যকর হবেনা বলে নির্দেশনা জারি করে মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ)। একইসঙ্গে নির্ধারিত সময় শেষে কোন প্রকার জরিমানা ছাড়াই বকেয়া কিস্তি গ্রহণ করা হবে। কিন্তু গৌরনদীতে অধিকাংশ নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত এনজিওগুলো এ নির্দেশনা না মেনে মাঠকর্মীদের দিয়ে সরকার থেকে লকডাউন উঠিয়ে নেয়া হয়েছে বলে প্রচার করে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে কিস্তির টাকার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।
তবে করোনার চলমান ক্লান্তি লগ্নে অধিকাংশ এনজিও’র পক্ষ থেকে ঋণ গৃহীতাদের কোন ধরনের সহযোগিতার খবর পাওয়া যায়নি। এলাকার অনেক ঋণ গৃহীতা অভিযোগ করে বলেন, করোনা থেকে বাঁচতে চরম আতঙ্কের মধ্যে একদিকে আমরা যেমন কর্মহীন হয়ে পড়েছি, তেমনি করোনা থেকে নিজেদের বাঁচাতে সরকারের নির্দেশে ঘরে থেকে মানবেতর জীবন যাপন করছি। এরইমধ্যে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এনজিও’র মাঠকর্মীরা কিস্তির টাকার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করে আসছে।
উপজেলার গেরাকুল গ্রামের ঋণ গৃহীতা রিকশা চালক হেলাল বেপারী, কালাম শিকদার বলেন, করোনার ঝুঁকির মধ্যেও প্রতিদিন পরিবারের সদস্যদের আহারের জন্য বের হয়ে আগের মতো আয় রোজগার হচ্ছেনা। বর্তমানে তেমন কোন লোক রাস্তায় বের হচ্ছেন না। আগে রিকশা চালিয়ে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচশ’ টাকা আয় হলেও এখন সারাদিনে একশ’ টাকা আয় হচ্ছেনা। এ অবস্থায় এনজিও’র মাঠকর্মীরা কিস্তির টাকার জন্য চাঁপ দিয়ে যাচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। তাই কিস্তির টাকা এখন কিভাবে দিবো বিষয়টি মাঠকর্মীদের বার বার বলা সত্বেও তারা তা মানছেন না।
এ ব্যাপারে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এনজিওগুলো কিস্তির টাকা আদায় করবে না বলে এমআরএ থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়েছিলো। নির্ধারিত তারিখের আগেই মাঠপর্যায়ে কিস্তি আদায় কিংবা চাঁপ প্রয়োগের বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টির খোঁজখবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিকেএস/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:২৩:৪৮ ● ৩৫৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ