আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় বরগুনার জেলার প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের অভয়ারন্য আমতলী পৌরসভা। ক্রমান্নয়ে জটিল হচ্ছে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি। আমতলীতে বেড়েই চলছে করোনাভাইরাসের সংক্রামণ। বরগুনা জেলায় ৭৭ জন শনাক্তের মধ্যে ১৭ জন আমতলীর। ১৭ জন আক্রান্তের মধ্যে ১৪ জনই আমতলী পৌরসভা নাগরিক। বরগুনা জেলার মধ্যে আমতলী পৌরসভা প্রথম এবং উপজেলা দ্বিতীয়। উপজেলা প্রশাসনের স্বাস্থ্যবিধির কড়ারোপ থাকলেও তা মানছে না সাধারণ মানুষ। ফলে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। বিগত বুধবার রাতে তিনজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এই প্রথম একদিনে আমতলী পৌরসভার বেশী নাগরিক আক্রান্ত হয়েছেন। এতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সুত্রে জানাগেছে, বিগত ৯ এপ্রিল থেকে ৪ জুন (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত ৫৬ দিনে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্তৃপক্ষ ৩’শ ১৭ জন মানুষের প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনের নমুনা পজেটিভ এসেছে। ওই ১৭ জনের মধ্যে গত ৯ এপ্রিল আওয়ামীলীগের এক প্রবীন নেতা মারা যায়। ১৩ জন সুস্থ্য হয়েছেন। এখনও অসুস্থ্য হয়ে ৩ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন। আওয়ামীলীগ নেতার মৃত্যুর পরের দিন অথ্যাৎ ১০ এপ্রিল তার নমুনা প্রতিবেদন আমলতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। তার নমুনা প্রতিবেদন আসার পরপরই আমতলী উপজেলাকে লকডাউন ঘোষনা করেন বরগুনা জেলা প্রশাসক মোঃ মোস্তাইন বিল্লাহ। বন্ধ হয়ে যায় উপজেলার সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপজেলার সকল মানুষের মাঝে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করে। উপজেলা প্রশাসনে কঠোর হস্তক্ষেপে মানুষ স্বতঃপুতভাবে লকডাউল পালন করে। আওয়ামীলীগ নেতার করোনায় মৃত্যুর ৯ দিন পরে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী জাকির হোসেন রাজু দম্পতি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ১৮ এপ্রিল তাদের শরীরে করোনা ভাইরাস নমুনা পজেটিভ আসে। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। এক এক করে বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। তবে যেখানেই আক্রান্ত হয়েছেন সেখানেই পরিবারসহ। এ পর্যন্ত আক্রান্তের মধ্যে আওয়ামীলীগ নেতা ও এক ইটভাটার শ্রমিক মোঃ হাবিবুর রহমান ভুইয়া ব্যতিরেকে চার পরিবারের মধ্যেই সীমাবন্ধ ছিল। গত বুধবার রাতে পৌরসভায় আরো তিনজন আক্রান্ত হয়। আক্রান্তরা বাড়ীতে আইসোলেশনে রয়েছেন। গত ৫৬ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৭ জনে। ১৭ জনের মধ্যে ১৪ জন আমতলী পৌরসভার নাগরিক। এতোকিছুর পরেও স্বাস্থ্যবিধি মানছে না সাধারণ মানুষ। হাটে বাজারে রয়েছে উপচে পড়া মানুষের ভীর। চায়ের দোকানে দিচ্ছে আড্ডা। অন্তত ৫০% মানুষ এখনো মাস্ক ব্যবহার করছে না। এতে আমতলীতে করোনা ঝুঁকি দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত আমতলী পৌরসভার চারটি পরিবারের মধ্যে ব্যবসায়ী দম্পতি,ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধির পরিবারের তিনজন , চেয়ারম্যান দম্পতি ও মাজার সড়কের মা- ছেলে সুস্থ্য হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছেন। এদিকে ৩১ মে সাধারণ ছুটি শেষ হয়ে যায়। সাধারণ ছুটির পরে মানুষ উৎফুল্ল হয়ে ঘরের বাহিরে বের হয়ে আসে। যার ফলে গত বুধবার একই দিনে আমতলী পৌরসভার তিন নাগরিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
আমতলী পৌরসভার লিটন তালুকদার, নিজাম উদ্দিন ও আকাশ বলেন, আমতলী পৌরসভায় যে হারে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে কি হয় আল্লায়ই জানে। কিন্তু এতো কিছুর পরও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না এবং সচেতন হচ্ছে না। তারা অহরহ হাটে বাজারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চায়ের দোকানে আড্ডা দিচ্ছেন। মাস্ক ব্যবহার করছেন না। দ্রুত এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানাই।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট (ল্যাব) মোঃ রিয়াজ হোসেন বলেন, গত ৫৬ দিনে তিন’শ ১৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি। এরমধ্যে ১৭ জনের নমুনা পজেটিভ এসেছে।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, বরগুনা জেলার মধ্যে করোনায় আক্রান্তের দিক দিয়ে আমতলী পৌরসভা প্রথম এবং উপজেলা দ্বিতীয়। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় দিন দিন করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সকলের স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে।
আমতলী থানার ওসি মোঃ শাহ আলম হাওলাদার বলেন, আমতলী বাসীকে রক্ষায় স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখতে পুলিশ বিভাগের লোকজন প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রামণ থেকে রক্ষা পেতে হলে পৌরসভার সকল নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। নইলে করোনার সংক্রামণ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, সকলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকলেই দ্রুত এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বলেন, উপজেলা প্রশাসন সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরপরও যারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে না ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর