গোপালগঞ্জ সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
করোনা দূর্যোগে ভাল নেই গোপালগঞ্জের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা। খাদ্য, আবাসন ও চিকিৎসা সমস্যার পাশাপাশি করোনা সংক্রামণের ঝুঁকি নিয়ে চলছে তাদের জীবন জীবিকা। ছিটে ফোঁটা সামন্য কিছু সহয়তা ছাড়া সরকারি কোন ত্রাণ সুবিধা পাচ্ছেন না তারা। তৃতীয় লিঙ্গের এ মানুষদের প্রতি নেই কারো বিশেষ নজর। ফলে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে তাদের দিন কাটছে ।
জেলা শহরের মৌলভীপাড়া, বেদগ্রাম, ইসলামপাড়া ও মান্দারতলা এলাকায় অন্ততঃ অর্ধশতধিক তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বসবাস। এসব এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা দলগত ভাবে বসবাস করে আসছেন।
বুধবার সকালে করোনা দূর্যোগের মধ্যে তাদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমের স্মরণাপন্ন হন তৃতীয় লিঙ্গের এই মানুষরা।
গণমাধ্যমে তাদের দূরাবস্থার কথা তুলে ধরা হলে সরকার ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। এগিয়ে আসবেন সমাজের বিত্তবানরা। এতে হয়তো তাদের দূরাবস্থা কিছ’টা হলেও লাঘব হবে।
তৃতীয় লিঙ্গের রেশমী হিজড়ার সাথে কথা হলে তিনি তাদের অসহায়ত্বের চিত্র তুলে ধরে বলেন, এ পরিস্থিতির আগে কোন শিশু ভুমিষ্ট হয়ার খবর পেয়ে গ্রাম,শহর, পাড়া ও মহল্লায় ছুটে যেতাম। সেখানে ওই নবজাতককে কোলে নিয়ে নাচিয়ে, নেচে-গেয়ে বখশিস পেতাম। বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে নাচ গান করলে টাকা দিতো। বাজার থেকে তোলা ওঠাতাম। লক ডাউনের কারনে এখন আমরা ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে গেছি। এখন আর কোন বখশিস পাই না। খুব মানবেতর জীবন যাপন করছি। খেয়ে না খেয়ে দিন কেটে যাচ্ছে। কিভাবে যে বেঁচে থাকবো জানিনা।
বিলকিস হিজড়া বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের কারণে নিজ পরিবারেও আমাদের কোন জায়গা নেই। শহরের ইসলামপাড়ায় তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন মিলে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করি। বাড়িওয়ালা আমাদের এখন বাড়ি ভাড়া দিতে চাইছেন না। আর বাড়িতে থাকতে হলে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হবে বলে চাপ দেন।এরপর মাথার উপর রয়েছে বিদ্যুৎ ও পানির বিলের বোঝা। তিনি আরও বলেন, আমাদের একতো কোন আয় ইনকাম নেই- তার উপর বাড়িওয়ালাদের অতিরিক্ত চাপে চোঁখে অন্ধকার দেখছি।
পপি হিজড়া বলেন, শুনেছি করোনা দূর্যোগে উপহার ত্রাণ সামগ্রী ও নগদ অর্থসহ নানান ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু দুঃসময়ে সরকার, স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তি আমাদের পাশে এসে দাড়ায়নি। ঈদের আগে জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমাদেরকে কিছু চাল, তেল, চিনি, সেমাই ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীসহ ও দুই’শ নগদ টাকা দেওয়া হয়। তাও এখন শেষ হয়ে গেছে। বাকি দিনগুলো কিভাবে চলবে এনিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অক্ষেপের সুরে পপি হিজড়া বলেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের হিজড়া বানিয়ে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। আমাদের কি দোষ। আমরাও মানুষ। আমাদের কি বেঁচে থাকার অধিকার নেই।
নুসরত হিজড়া ও পপি হিজড়া বলেন, এ পরিস্থিতির মধ্যে সাধারন অসুখ বিসুখে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে আমাদের চিকিৎসা দিতে চায় না। বাঁকা চোঁখে দেখে। আমরা সরকারের স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে চলছি। তারপরও আমরা যেভাবে এক ঘরের মধ্যে গদাগাদি করে থাকি তাতে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের অসহায়ত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না। আমরা সবসময় অবহেলার শিকার ও উপেক্ষিত হয়ে আসছি। এভাবে আমরা বেঁচে থাকতে চাই না। আমাদের মধ্যেও অনেকে পড়া লেখা জানেন। বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হলে সমাজের মুল¯্রােতধারার সাথে আমরাও দেশের উন্নয়নে ভ’মিকা রাখতে পারবো।
করোনা দূর্যোগে সরকারী সুবিধার পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও সমাজের বিত্তবানরা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সহয়তার হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে প্রত্যাশ করেছেন কালাম হিজড়া।
এইচবি/এমআর