গোপালগঞ্জ সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে গ্রামের দলাদলিতে পক্ষ না নেওয়ায় এক মুক্তিযোদ্ধার বাড়িসহ দু’টি বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন। আহতরা মুকসুদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মুকসুদপুর উপজেলার কাউনিয়া গ্রামে এঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় এলাকায় থম থমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোন সময় বড় ধরনের সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশংকা করছেন স্থানীয়রা। এঘটনায় মুকসুদপুর থানায় দুই পক্ষ থেকে দু’টি অভিভোযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা ও সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার রেজাউল করিম শেখ বলেন, স্থানীয় অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বহুগ্রাম ইউনিয়নের ইউপি মেম্বার মনোয়ার মিয়া ও স্থানীয় জাফর মিয়ার মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তিনি তার পরিবারসহ ঢাকার মীরপুরে বসবাস করেন।
করোনা পরিস্থিতির কারনে ঈদের আগে পরিবারসহ তিনি গ্রামের বাড়িতে আসেন। এরপর থেকে কাউনিয়া গ্রামের জাফর মিয়ার দলের লোকজন তাকে (রেজাউল করিম) তাদের দলে যোগ দিতে চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন। কিন্তু তিনি গ্রামে দলাদলির মধ্যে জড়িত হতে অপরগতা প্রকাশ করায় তারা ক্ষিপ্ত হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জাফর মিয়ার লোকজন তার বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করে। এছাড়া গভীর রাত পর্যন্ত পরিবারসহ তাকে বাড়ীর মধ্যে জিম্মিকরে রাখে।
কাউনিয়া গ্রামের কৃষক এবাদ আলী শেখের স্ত্রী লাজু বেগম সাগরকন্যাকে অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামী কাউনিয়া গ্রামের জাফর মিয়ার দলে যোগ না দেয়ায় তার দলের লোকজন ওইদিন সন্ধ্যায় তার বাড়িতে হামলা ও কুপিয়ে তচনছ করে। এসময় তারা ঘরের মধ্য থেকে ধান লুট করে নিয়ে যায়।
তিনি আরও বলেন, এলাকায় নিরীহ প্রকৃতির লোক হিসেবে সবাই তাদের চেনে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে জীবন যাপন করতে চান। তাই তারা গ্রামের কোন পক্ষের সাথে দলাদলিতে যুক্ত হতে চান না। কিন্তু জাফর মিয়ার লোকজন তার দলে যোগ না দেয়ায় আমাদের বাড়ি ঘরে হামলা করে তচনছ করে দিয়েছে। আমরা এখন সর্বশান্ত হয়ে গেছি।
মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিমের মেয়ে ইস্টার্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসসি’র ছাত্রী সুমাইয়া সুলতানা মীম বলেন, জাফর মিয়ার লোকজন কেবল আমাদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুর করেনি। সারা রাত আমাদেরকে জিম্মি করে রাখে। আমরা যাতে পাশ্ববর্তী দোকানপাট থেকে কোন কেনাকাটা করতে না পারি সেজন্য হুমকিও দেয়। আমরা এখন চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে কাটাচ্ছি।
কাউনিয়া গ্রামের জাফর শেখের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমার সাথে স্থানীয় মেম্বার মনোয়ার মিয়ার দ্বন্দ্ব রয়েছে। কিছুদিন আগে আমার বাড়িতে ওই মেম্বারের লোকজন হামলা করে। আমার লোকজন রেজাউল শেখ ও এবাদ শেখের বাড়িতে হামলা করেছে -এটি সত্য নয়। বরং রেজাউল শেখের বাড়ির ছাদের উপর থেকে আমাদের উপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে মনোয়ার মেম্বারের লোকজন আমার দলের আনিচ শেখ (৩২) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয়।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম সিকদারসহ স্থানীয় আওয়ামীলগ নেতৃবৃন্দ মীমাংসার উদ্যোগ নিয়েছেন।
মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মীর্জা আবুল কালাম আজাদ বলেন, এ ঘটনায় দুই পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়েছি। ওই এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত রয়েছে।