কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সমুদ্র উপকুলীয় এলাকার সংরক্ষিত বনে আদিবাসী রাখাইন যুবকদের বন্য প্রাণী শিকারের মহোৎসব চলছে। এয়ার গান, শর্ট গান, ল্যাজা, চল, কোষ ও ফাঁদ পেতে বিলুপ্তপ্রায় পশু পাখি বছরের পর বছর শিকার করে চলছে। বন্যপ্রানী শিকারে এরা অস্ত্রের পাশাপাশি শিকারী কুকুরও ব্যবহার করছে। লাইসেন্স বিহীন অবৈধ শর্ট গান, এয়ার গান দিয়ে বন্যপ্রানী শিকার করে আসলেও বনবিভাগ রহস্যজনক কারনে নিরব রয়েছে। আদিবাসী রাখাইনদের বন্যপ্রানী শিকারের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এনিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়।
কুয়াকাটা সমুদ্র উপকূলভাগে অবস্থিত কুয়াকাটা সংরক্ষিত বন, গঙ্গামতির বন, কাউয়ার চরের বন, লেম্বুর বন, চর মৌডুবী ও সুন্দরবনের পুর্বাংশ ফাতরার বন সহ সমুদ্র উপকূলের সংরক্ষিত বন এবং ম্যানগ্রোভ বনে শুকর, সজারু, গুইসাপ, কুইচ্ছা, ঘুঘু, বক, ডাহুক, শালিক, টিয়া সহ বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী দিনে ও রাতে দল বেঁধে শিকার করছে আদিবাসী যুবকরা। আদিবাসী রাখাইনরা আদিকাল থেকে বন্যপ্রাণী শিকার করে আসছে। বন্যপ্রাণী শিকার করেই মাংসের চাহিদা পূরণ করছে তারা। এদের মধ্যে অনেকেই জীবিকা হিসেবে বন্যপ্রানী শিকারকে বেছে নিয়েছে।
শিকারী রাখাইন যুবকদের দাবী, স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই তারা শিকার করছে। তবে বন্যপ্রানী শিকার নিষিদ্ধ জেনেও এরা আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রতিনিয়ত শিকার করে চলছে। আদিবাসী হওয়ায় বনবিভাগ ও প্রশাসন এদের প্রতি একটু নমনীয়তার কারনে দিনের পর দিন এরা শিকার করে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিগত ২২মে কুয়াকাটা কেরানী পাড়ার যুবক ওয়েন মং উচু, মংচাউ, মোমো, বুজা, অংচানসহ এই শিকারীরা সৈকতের গঙ্গামতি সংরক্ষিত বন থেকে বিলুপ্ত প্রজাতির ১টি সজারু ও ১৫টি গুঁই সাপ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। এরা দীর্ঘবছর ধরেই এই বনে শিকার করে চলছে। শুধু কেরানী পাড়ার রাখাইন যুবকরাই নয়, পটুয়াখালী ও বরগুনা সমুদ্র উপকুলভাগে বসবাসকারী বিভিন্ন পাড়ার আদিবাসী রাখাইন যুবকরা জঙ্গলে বন্যপ্রানী শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহসহ মাংসের চাহিদা পূরণ করে থাকে।
সমুদ্র উপকুলের এসব বনে শুকর, সজারু, চিতাবাঘ, দাসবাঘ, শিয়াল, বানর, বেজি, কাঠবিড়ালী, গুঁইসাপ, অজগর, বন মোরগ, ঘুঘু, সাদা বক, চিল, শালিক, টিয়া, ডাহুক, গড়িয়াল, গাংচিল, চামচিকা সহ অসংখ্য বন্যপ্রানী ও পাখির অভয়াশ্রম ছিল। ঘুর্ণিঝড় ও জলোসচ্ছাসের তান্ডবে বন ধ্বংস হয়ে যাবার সাথে সাথে বেশির ভাগ বন্য পশু পাখিও ধ্বংস হয়ে গেছে। ঝড় বন্যার সাথে লড়াই করে এখনও বানর, শুকর, সজারু, শিয়াল, বেজি, চামচিকা, গুইসাপ, কাঠবিড়ালী, অজগর সাপ, চিল, শালিক, ঘুঘু, সাদাবক, ডাহুক সহ বিলুপ্ত প্রজাতির পশু পাখি টিকে রয়েছে। এরা সংখ্যায় খুবই কম। কিছু সংখ্যক পশু পাখি ঝড় বন্যার সাথে যুদ্ধ করে বেঁেচ থাকলেও রাখাইন শিকারীদের শিকারের ফাঁদে ধরা পড়ে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব বন্যপ্রানী প্রতিনিয়ত শিকারের কারণে এখন জঙ্গল শূন্য হয়ে পড়েছে। স্্বেচ্ছছাসেবী সংগঠন জন্মভূমি কুয়াকাটার সমন্বয়ক ও প্রকৃতিপ্রেমী কেএম বাচ্চু বলেন, ঝড় বন্যার কবলে বন জঙ্গল ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি বন্যপ্রানী ও পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিলুপ্ত প্রায় কিছু সংখ্যক বন্যপ্রানী দেখা গেলেও রাখাইনদের শিকারের ফাঁদে বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে এসব এখন। বাচ্চু আরো বলেন, বনবিভাগের চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত শিকার করে চলছে। বনবিভাগ কিংবা প্রশাসন এসব শিকার করার বিষয়টি জানলেও তারা কিছু বলছে না। এখনই বন্যপ্রানী শিকার বন্ধের দাবী জানিয়েছে এই তরুন সেচ্ছাসেবক।
উপকূলীয় বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ কমিটির আহবায়ক মোল্লা লতিফুর রহমান লতিফ বলেন, আদীবাসী রাখাইনরা এক সময় বন্যপ্রানী শিকার করেই তাদের মাংসের চাহিদা মিটাতে। বর্তমানে এসব অঞ্চলে বন জঙ্গলের সল্পতার কারণে বন্যপ্রাণী বিলুপ্তির পথে। যেসব বন্যপ্রানী এখনও নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে বেঁেচ আছে তাদের সংরক্ষণের তাগিদ দিয়েছেন ওই পরিবেশবাদী সংগঠক।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম সাগরকন্যাকে বলেন, বনবিভাগের বন থেকে বন্যপ্রানী শিকারের বিষয় তিনি কিছুই জানেন না। বন্যপ্রানী শিকার আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। যেখানে শিকার করার আইনগত কোন বৈধতা নেই। সেখানে বন কর্মকর্তাদের অনুমতির কোন প্রশ্নই আসতে পারে না। তিনি বলেন, এসব শিকারীদের হাতে নাতে ধরতে পারলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমবি/এমআর