পটুয়াখালী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
পটুয়াখালীর বাউফলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে যুবলীগ নেতা তাপস কুমার দাসের (৩৪) নিহতের প্রতিবাদে সোমবার (২৫ মে) বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে এক পক্ষের উপজেলা আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
পরিস্থিতি শান্ত রাখতে উপজেলা সদরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এতে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সাংসদ আ স ম ফিরোজের সঙ্গে বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হকের বিরোধ চলে আসছে।
সোমবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় জনতা ভবন থেকে একটি প্রতিবাদ বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বাউফল পৌরসভার প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ইলিশ চত্বরে সমাবেশ করে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব হাওলাদার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সূর্যমনি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বাচ্চু, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও কালাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফয়সাল আহম্মেদ ওরফে মনির হোসেন মোল্লা প্রমুখ।
বক্তারা যুবলীগ নেতা তাপসের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। তাঁরা এ ঘটনার জন্য মেয়রকে দায়ী করেন।
যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেয়র জিয়াউল। তিনি বলেন, ঘটনার সময় তিনি থানার মধ্যে অবস্থান করছিলেন। আর কে বা কারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তা প্রতক্ষদর্শী পুলিশ সদস্যরাই ভালো বলতে পারবে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
এর আগে গেল রোববার সন্ধ্যার দিকে ওই সংঘর্ষের ঘটনার জেরে কালাইয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহিদ (২৩) ও তাঁর মা মোসা. ফজিনুর বেগমকে (৪৭) পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। ওই সময় ফজিনুরের ডান পা ভেঙে যায়। পুলিশ মা ও ছেলেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। জাহিদ মেয়র সমর্থিত।
উল্লেখ্য, রোববার ডাকবাংলোর সামনের সড়কে করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে করণীয় বিষয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা লেখা সংবলিত একটি তোরণ নির্মাণ করছিলেন বাউফল পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউল হকের পক্ষের লোকজন। দুপুর একটার দিকে ওই তোরণ নির্মাণে বাধা দেন নাজিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুক। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান মেয়র জিয়াউল। তখন দুই পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পুলিশ লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপরে চলে দফায় দফায় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।
পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন, জেলার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার (বাউফল সার্কেল) মো. ফারুক হোসেন ও বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান পরিস্থিতি শান্ত রাখতে মেয়র জিয়াউল ও ইউপি চেয়ারম্যান ফারুককে নিয়ে থানার মধ্যে বৈঠকে বসেন।
বৈঠক চলাকালে কালাইয়া থেকে সাংসদ পক্ষের ২০-২৫ জন এসে নির্মাণাধীন তোরণের বাঁশ উপড়ে ফেলে। মেয়র পক্ষের যুবলীগ কর্মী ইব্রাহিম (৩৫) বাধা দিলে তাঁকে পেটায়। তখন ফের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পুলিশ ফের লাঠিপেটা করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য তাপস কুমার দাস (৩৪)ও ছাত্রলীগ কর্মী ইমামকে (২৩) প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।রাত পৌনে আটটার দিকে তাপসের মৃত্যু হয়।তাপস সাংসদ সমর্থিত যুবলীগের সক্রিয় কর্মী।
বিকেল তিনটা পর্যন্ত তাপসের লাশ এসে বাউফল এসে পৌঁছায়নি। তবে আজকে (সোমবার) কালাইয়া গ্রামে তাঁর লাশের অন্তেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত (বিকেল তিনটা) মামলা হয়নি, তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন।’
এমআর/এমআর